
হোসেন এমিলি। ছবি: সংগৃহীত
সম্প্রতি টানা পাঁচটি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জিতে ঘরোয়া ফুটবলে রেকর্ড গড়েছে বসুন্ধরা কিংস। অথচ বাংলাদেশেই ১৯৮৩-৮৮ পর্যন্ত টানা ছয়টি লিগ শিরোপা জয়ের ব্যক্তিগত রেকর্ড রয়েছে সম্রাট হোসেন এমিলির।
নারায়ণগঞ্জের সন্তান এমিলি ছিলেন তুখোড় ফরোয়ার্ড। খেলেছেন আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবেও। শুরুটা ছিল ঢাকা পাইওনিয়ার ফুটবল দিয়ে। ঢাকা প্রথম বিভাগ লিগে তার প্রথম ক্লাব ওয়ারী। ১৯৮২ সালে ওয়ারী হারিয়ে দেয় আবাহনীকে। সেই ম্যাচে গোল করেছিলেন এমিলি। এই হারে আবাহনী বঞ্চিত হয় লিগ শিরোপা থেকে। চালু হয় ঢাকার ফুটবলে আবাহনীকে কটাক্ষ করে বহুল আলোচিত ‘ওয়ারী আইলো’ কথাটি।
আবাহনীর বিপক্ষে গোল করে রাতারাতি তারকা বনে যাওয়া এমিলিকে দলে ভেড়াতে মোহামেডান আর আবাহনীর মতো দল উঠেপড়ে লাগে। তবে এমিলি যোগ দেন আবাহনীতে। শুরু হয় লিগ শিরোপা জয়ের রূপকথা। আবাহনী আর মোহামেডানের হয়ে টানা তিনটি করে লিগ জেতেন এমিলি। তিনি ১৯৮৫ সালে আবাহনী আর ১৯৮৭ সালে মোহামেডানের হয়ে ফেডারেশন কাপ জিতেছেন। দুটি ফাইনালেই ব্রাদার্স ইউনিয়ন আর ওয়ান্ডারার্সের বিপক্ষে একমাত্র জয়সূচক গোল তার। এ ছাড়া মোহামেডানের হয়ে ১৯৯০ সালে ‘মা ও মণি’ কাপ এবং ১৯৯১ সালে জিতেছেন স্বাধীনতা কাপ শিরোপা। দারুণ শিরোপা-ভাগ্যের জন্য এমিলি ভক্তদের কাছে পরিচিতি পেয়ে যান ‘চ্যাম্পিয়ন’ হিসেবে।
এমিলি বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়েও ছিলেন উজ্জ্বল। ১৯৮২ সালে প্রেসিডেন্ট গোল্ড কাপে লাল দলের জার্সিতে প্রথম দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৮৫ সালে এএফসি যুব চ্যাম্পিয়নশিপে হংকং অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে গোল করেন তিনি। ম্যাচটি বাংলাদেশ জিতে নেয় ২-০ গোলে। এ ছাড়া মালদ্বীপ আর থাইল্যান্ডের বিপক্ষে গোল রয়েছে তার। বাংলাদেশের ফুটবলে অন্যতম বেদনাদায়ক অধ্যায় ১৯৮৪ সালের সাফ ফুটবল ফাইনাল। ফাইনালে ফেভারিট হয়েও বাংলাদেশ হারাতে পারেনি স্বাগতিক নেপালকে। সেই ম্যাচ নেপালের হয়ে খেলেছিলেন গণেশ থাপা। যিনি আশির দশকের গোড়াতে ঢাকা মোহামেডানের হয়ে খেলে বাংলাদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। পরবর্তীকালে নেপাল ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতির পদ অলংকৃত করেন।
ফাইনাল নিয়ে গণেশ থাপা বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ তখন দুর্দান্ত দল। চুন্নু, ওয়াসিমের মতো অসাধারণ খেলোয়াড় বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছেন। ফাইনালে বৃষ্টির জন্য বাংলাদেশ ভালো খেলতে পারেনি। এমিলি ছিলেন দুর্দান্ত স্ট্রাইকার। ইনজুরির জন্য সে ফাইনালে ছিল না। এটা আমাদের জন্য একটা প্লাস পয়েন্ট ছিল।’
এমিলি ছাড়াও চুন্নু, মোনেম মুন্না, সুজন ও ওয়ালী ফয়সালের মতো জাতীয় দলের অসংখ্য তারকা ফুটবলারের জন্ম নারায়ণগঞ্জে। কিন্তু বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ শুধু না, গোটা বাংলাদেশেই ফুটবলের দুরবস্থা। ঘরোয়া ফুটবলে দর্শক নেই। পাওয়া যাচ্ছে না মানসম্পন্ন নতুন ফুটবলার। এমিলি বলেন, ‘আমরা ফুটবলের সোনালি যুগ দেখেছি, তখন প্রায় সব ছেলেই স্বপ্ন দেখত একজন সালাহউদ্দিন, মুন্না, সাব্বির কিংবা চুন্নু হতে। বর্তমানে সবাই ক্রিকেটের দিকে ঝুঁকেছে। হয়তো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্রিকেটের সাফল্যের জন্য এই ঝোঁক। কিন্তু তাই বলে আমাদের ফুটবলের কর্তাব্যক্তিরাও দায় এড়াতে পারবে না। তারা ফুটবলের জনপ্রিয়তা ধরে রাখায় উদ্যোগী হতে পারেনি।’
এমিলি বলেন, ‘ঘরোয়া ফুটবলে দর্শক ফেরাতে আমাদের বড় তারকা খুঁজে বের করতে হবে। এক সময় চুন্নু, কায়সার হামিদ কিংবা আমার খেলা দেখতে মানুষ মাঠে এসেছে। আমাদের এমন তারকা চাই, যার খেলা দেখতে মানুষ মাঠে আসবে। আর তা হতে হবে দেশি তারকা। শুধু বিদেশি ফুটবলার-নির্ভর হয়ে আপনি কখনোই খেলার মাঠে দর্শক ফিরিয়ে আনতে পারবেন না।’