Logo
×

Follow Us

খেলাধুলা

গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়ার অকাল প্রয়াণ

Icon

আফসার হোসেন

প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২৪, ২০:২২

গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়ার অকাল প্রয়াণ

গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান। ফাইল ছবি

৫ জুলাই, শুক্রবার। বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনে চলছিল জাতীয় দাবা প্রতিযোগিতার ১২তম রাউন্ডের খেলা। দাবার প্রিয় সাদাকালো বোর্ডে জিয়াউর রহমান মুখোমুখি হয়েছিলেন এনামুল হোসেন রাজীবের। দুজনই বাংলাদেশের দাবার জগতে সর্বোচ্চ খেতাবধারী ‘গ্র্যান্ডমাস্টার’।

তাই দাবাপ্রেমীদের বিশেষ নজর ছিল ম্যাচটির প্রতি। কিন্তু তাদের লড়াই শেষ হয়নি। লড়াইয়ের মাঝপথে আচমকা অজ্ঞান হয়ে লুটিয়ে পড়েন জিয়া। দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলেও চিকিৎসকরা জ্ঞান ফেরাতে পারেননি তার। জানা যায়, জিয়া চলে গেছেন আমাদের ছেড়ে। এই পৃথিবী ছেড়ে।

১৯৭৪ সালের ১ মে জন্ম নেওয়া জিয়াউর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। ছেলেবেলা থেকে দাবা ছিল তার ধ্যানজ্ঞান। তার বাবা পয়গাম উদ্দিন আহমেদও দাবাড়ু ছিলেন। ১৯৮৭ সালে নিয়াজ মোর্শেদ উপমহাদেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব জিতে আলোড়ন তোলেন। আর জিয়া বাংলাদেশের দ্বিতীয় দাবাড়ু হিসেবে গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব পান ২০০২ সালে। 

জিয়া বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল দাবাড়ু। ১৯৮৮ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে জাতীয় দাবায় চ্যাম্পিয়ন হন তিনি। পুরুষদের জাতীয় দাবায় সর্বোচ্চ ১৪ বার শিরোপা জিতেছেন। জাতীয়-আন্তর্জাতিক সব টুর্নামেন্ট মিলিয়ে শতবারের কাছাকাছি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কৃতিত্ব রয়েছে তার। জিয়াই সম্ভবত বাংলাদেশের একমাত্র ক্রীড়াবিদ যিনি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দেশে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। বিশ্বকাপ কিংবা দাবা অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের ভরসা ছিল জিয়ার বোর্ড।

জিয়ার স্ত্রী তাসমিন সুলতানা লাবণ্য ২০১০ সালে জাতীয় মহিলা দাবার বাছাইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। তাদের ছেলে তাহসিন তাজওয়ার জিয়া বাংলাদেশের উঠতি দাবাড়ু। ছেলেকে সঙ্গী করে জিয়ার রয়েছে অনন্য রেকর্ড। ২০২২ সালের জুলাইয়ে ভারতে অনুষ্ঠিত ৪৪তম দাবা অলিম্পিয়াডে জিয়া জুটি বেঁধেছিলেন পুত্র তাহসিনের সঙ্গে। দাবা অলিম্পিয়াডে পিতা-পুত্রের এমন জুটির ইতিহাস নেই এশিয়াতে। বিশ্বদাবায়ও বিরল। ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় ছেলের সঙ্গে মুখোমুখি লড়াইয়ে নেমে আলোড়ন তুলেছেন। সর্বশেষ বাংলাদেশ গেমসে আনসারের হয়ে ছেলের সঙ্গে খেলেছিলেন জিয়া। তার বাবা পয়গাম উদ্দিন ১৯৮৪ সালে জাতীয় দাবা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। একই পরিবারে তিন প্রজন্মের (দাদা-বাবা-ছেলে ) জাতীয় দাবায় অংশগ্রহণের রেকর্ড বাংলাদেশে অন্য কারও নেই। 

জিয়া বাংলাদেশের একমাত্র পেশাদার দাবাড়ু ছিলেন। অথচ দাবায় নেই কোনো আর্থিক ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা। ঘরোয়া টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ ফি কিংবা প্রাইজমানি নামমাত্র। দাবায় নেই বড় কোনো ক্লাব বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বড় লগ্নি। যে কারণে নিয়াজসহ বাংলাদেশের কেউ দাবাকে পেশা হিসেবে নিতে সাহস করেননি। একমাত্র জিয়া লড়াই করে যাচ্ছিলেন স্রোতের বিপরীতে। অকাল মৃত্যুতে থেমেছে জিয়ার লড়াই।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫