
ছবি: গোল ডটকম
ইউরোতে ইতিহাস গড়ল স্পেন। চারবার শিরোপা জয়ের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি ইউরোপের এই মর্যাদাপূর্ণ ট্রফি জিতলো তারা। আর ইউরোর ফাইনালে ২-১ গোলে হেরে আবারও খালি হাতে দেশে ফিরল ইংল্যান্ড।
প্রথমার্ধে উভয় দল যে ফুটবল খেললো তাতে নিশ্চিতভাবে যা ফুটে উঠলো তার নাম ফাইনালের চাপ। দু’দলই গোল করার চেয়ে গোল না খাওয়ার দিকেই বেশি মনোযোগী ছিল। অতিরিক্ত সর্তকতা। আক্রমণের চেয়ে রক্ষণে নজর বেশি। ফোকাসহীন ফুটবল। আর সেই সঙ্গে প্রচুর ভুলপাস। ফাইনালের টেনশন ও উত্তেজনায় এই অর্ধে ফুটবল আনন্দ হারিয়ে গেল উভয় দলের সতর্ক পাহারা ধাঁচের খেলায়।
তবে শেষের ৪৫ মিনিট গোল, আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণের খেলায় সত্যিকার ফুটবল আনন্দের দেখা মিলল। আর সেই আনন্দযজ্ঞের শেষ হাসি হাসলো স্পেন।
পুরো টুর্নামেন্ট যেরকম দাপুটে ফুটবল দিয়ে শুরু করেছিল স্পেন, ফাইনালে ফিনিসিংটাও টানলো তারা সেই ভঙ্গিতেই। কোনো সন্দেহ নেই টুর্নামেন্টের সেরা দলটাই এবারের ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছে।
দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরুর দুই মিনিটের মধ্যে গোল আনন্দে মাতে স্পেন। দারুণ বোঝাপড়ার সম্মিলিত আক্রমণের ফসল এই গোল। শুরুটা করেন কারভাজাল। তার কাছ থেকে বল নিয়ে বক্সের ভেতর বিষ্ফোরকের কায়দায় ঢুকে পড়েন লামিনে ইয়ামাল। কিন্তু নিজে পোস্টে শট না নিয়ে কোনাকুনি থাকা নিকো উইলিয়ামসের দিকে বাড়ান। চলন্ত সেই বলে ঠিক দুর পোস্টে শট নিয়ে গোল করেন নিকো উইলিয়ামস (১-০)। পুরো স্পেন ফেটে পড়ে গোল আনন্দে। ঠিক দুমিনিট পরে একই কায়দায় আরেকটি গোল প্রায় পেয়ে গিয়েছিল স্পেন। কিন্তু পোস্টের সামনে থেকে শট গোলের বাইরে মেরে সুযোগ নষ্ট করেন দানি ওলমা। ১ গোলে পিছিয়ে থেকে হতদ্যম হয়নি ইংল্যান্ড। স্ট্রাইকিং জোনে শক্তি বাড়াতে দ্রæত খেলোয়াড় বদলের সিদ্ধান্ত নেন ইংল্যান্ড কোচ গ্যারেথ সাউথগেট। তার সিদ্ধান্তটা দারুণ কাজে দেয়। পাল্টা আক্রমণ থেকে গোল পেয়ে যায় ইংল্যান্ড।
৭৩ মিনিটের সময় পালমার যে কায়দায় গোল করে ইংল্যান্ডকে ম্যাচে ফেরালেন তাকে বলে আইসকোল্ড ফিনিসিং! সাকার কাছ থেকে বল পেয়ে দারুণ দক্ষতায় এক ব্যাকহিলে বেলিংহ্যাম পাস বাড়ালেন পালমারের পায়ে। স্কেল রেখে কোনাকুনি টানলে যেমন নিভর্‚ল রেখা হয়, ঠিক তেমন শটই নিলেন পালমার। বল নব্বই ডিগ্রী অ্যাঙ্গেল নিয়ে কোনাকুনিভাবে স্পেনের জালে। স্পেন গোলকিপার সিমন ঝাঁপিয়ে শরীর শুইয়েও বলের নাগাল পেলেন না (১-১)। ৭০ মিনিটের সময় মাইনুর বদলি হিসেবে মাঠে নামেন পালমার। আর এর ঠিক ১১ মিনিটের মধ্যে ম্যাচে সমতাসূচক গোল করেন। আর্ন্তজাতিক ক্যারিয়ারে এটি তার মাত্র দ্বিতীয় গোল। তবে এই গোলই যে ইউরোর ফাইনালে ইংল্যান্ডকে নতুন জীবন দিল।
পালমারের এই গোলের পর ইংল্যান্ড গ্যালারিতে ফের সেই গানের সুর বাজলো জোরে সোরে-‘ইটস কামিং হোম’! কিন্তু এই ফাইনালের স্ক্রিপ্ট যে স্পেন লিখে রেখেছিল! সবাই যখন ভাবছিলেন ফাইনাল ম্যাচ গড়াচ্ছে অতিরিক্ত সময়ে ঠিক তখনই আরেকবার নাটকীয় ভঙ্গিতে লিড নিলো স্পেন। কুকুরেয়া ও বদলি হিসেবে নামা মিখেল ওয়ারজাবাল ওয়ান টু ওয়ান করে সামনে বাড়েন। এই পাসিং ফুটবলে বামপ্রান্ত থেকে কুকুরেয়া ডিফেন্স চেরা ফাইনাল পাস বাড়ান ইংল্যান্ডের পোস্টে। সেখানে সামনে থাকা ডিফেন্ডার গুইঁয়েকে সরিয়ে বলে পা ছোঁয়ান ওয়ারজাবাল, বল সোজা জালে (২-১)। ম্যাচের ঘড়িতে তখন ৮৬ মিনিট চলছে। আর এই গোলই স্পেনকে এনে দিল ইউরোর ট্রফি।
শেষের কয়েক মিনিটে ইংল্যান্ড ম্যাচে ফেরার মরিয়া চেষ্টা করে। দ্বিতীয়বারের মতো সমতায় আনার দারুণ একটা সুযোগ পেয়েও গিয়েছিল প্রায়। কিন্তু গুঁইয়ের হেড একেবারে গোললাইনে দাড়িয়ে হেড করে ফেরান দানি ওলমা। এই গোল রক্ষা আরেকবার জানিয়ে দিল ইউরোর ফাইনালের রাতটা ছিল স্পেনের।
-আর ইংল্যান্ড? গেলবারের মতো এবারো এই টুর্নামেন্টে তাদের ফাইনালে হেরে দ্বিতীয়সেরা হয়েই থাকতে হলো!