
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। ছবি: সংগৃহীত
হাসিনা সরকার পতনের পর দায়িত্ব নিয়েছে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। দাবি উঠেছে ক্রীড়াঙ্গনকে ঢেলে সাজানোর। পরিবর্তন আর সংস্কারের দাবিতে উত্তাল ফুটবল অঙ্গনও। ২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি পদে থাকা কাজী সালাউদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন বিক্ষুব্ধরা। কিন্তু সালাউদ্দিন ঘোষণা দিয়েছেন পঞ্চম মেয়াদে নির্বাচন করবেন। তাতে পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠেছে।
সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে পছন্দের লোকদের কাউন্সিলরশিপ দিয়ে নিজের পক্ষে ভোট টানার। সাবেক ফুটবলার হিসেবে নন্দিত হলেও বাফুফে প্রধান হিসেবে কাজী সালাউদ্দিন সম্পূর্ণ ব্যর্থ। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীদের বেকায়দায় ফেলতে ব্যবহার করতেন সরকারের প্রভাব। তাতে ক্রীড়াঙ্গনে তিনি পরিচিতি পেয়েছেন ‘স্বৈরাচার’ হিসেবে। চলতি বছরের মে মাসেও সালাউদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে সমাবেশ করেছেন আব্দুল গাফফারের নেতৃত্বে স্বনামধন্য সাবেক ফুটবলাররা। হাসিনা সরকার পতনের পর দাবি জোরালো হয়েছে। দেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক আমিনুল হক বলেন, ‘সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে ফুটবল ধ্বংসের পথে। দুর্নীতির দায়ে ফিফা কর্তৃক শাস্তি পাওয়ার পর সালাউদ্দিনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে থাকার অধিকার নেই। প্রয়োজনে ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করে সংস্কার করতে হবে কাউন্সিলর বাছাইয়ের প্রক্রিয়া। প্রকৃত সংগঠকদের জায়গা দিতে হবে ফেডারেশনে।’
সালাউদ্দিনের পদত্যাগসহ সাত দফা দাবিতে বাফুফে ভবনের সামনে ‘প্রফেশনাল ফুটবল খেলোয়াড়বৃন্দ’-এর ব্যানারে মানববন্ধন করেছেন প্রিমিয়ার লিগের ৪০-৪৫ জন ফুটবলার। এ ছাড়া নারী ফুটবল উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে সরব হয়েছে বর্তমান আর সাবেক নারী ফুটবলাররা। নারী ফুটবলের সংগঠক ও কিংবদন্তি খেলোয়াড় কামরুন নাহার ডানা অভিযোগ করেন, ‘ফুটবল ফেডারেশন যেন সালাউদ্দিন-কিরণের ফেডারেশন। বাফুফেতে অপরাজনীতি হয়েছে। দুর্নীতি হয়েছে।’ নারী দলের সাবেক অধিনায়ক ডালিয়ার অভিযোগ গুরুতর, ‘আপনি (মাহফুজা আক্তার) চুরি ছাড়া আর কিছু করেননি। আপনি ভালোবাসেন আপনার চেয়ার। অলিম্পিক বাছাই খেলতে পাঠানো হয়নি আমাদের মেয়েদের। কত টাকা মেরে খেয়েছেন? এবার পদ থেকে সরে যান।’
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের ক্রীড়া উপদেষ্টা যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। শেখ জামাল ধানমন্ডি, শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র আর চট্টগ্রাম আবাহনী অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। তারা আওয়ামী ঘরানার ক্লাব হিসেবে পরিচিত। অথচ দেশে বর্তমানে আওয়ামী লীগ বিরোধী হাওয়া বইছে। অনেকেই শেখ জামাল আর শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের নাম পরিবর্তনের দাবি তুলেছে। ইতিপূর্বে ক্লাব দুটোকে অর্থায়ন করা বসুন্ধরা গ্রুপও পিছু হটার আভাস দিয়েছে। তাতে ২০২৪-২৫ মৌসুমে ফুটবল মাঠে দেখা নাও যেতে পারে তাদের। এতে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে দলের সংখ্যা কমবে। সবচেয়ে বড় কথা, ক্লাবগুলোতে নাম লেখানো ফুটবলারদের রুটি-রুজি নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। ক্রীড়া উপদেষ্টার বরাত দিয়ে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন জানিয়েছেন, ‘নামের কারণে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র ও শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের লিগে খেলার ব্যাপারে সরকারের আপত্তি নেই। প্রয়োজনে খেলার মাঠে তাদের নিরাপত্তা দেওয়া হবে। তবে পৃষ্ঠপোষক যেহেতু ক্লাবের ব্যাপার, তাই এটা নিয়ে যেন তারাই চেষ্টা চালায়।’
ঢাকা আবাহনী ক্লাবেও হামলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ক্লাব ভবন। লুট হয়েছে ট্রফি। শেখ কামাল প্রতিষ্ঠিত ক্লাবটিতে সালমান এফ রহমান, কাজী নাবিল আহমেদ, নাজমুল হাসান পাপনদের মতো ধনাঢ্য ব্যক্তিরা ছিলেন শেয়ারের মালিক। তারাই ক্লাব চালাতেন। সালমান এফ রহমান বর্তমানে কারাগারে। ক্রীড়ামন্ত্রী পাপনসহ বাকিরা পলাতক। তাই আবাহনী এখন অভিভাবকশূন্য। ঢাকা আবাহনীর পরিচালক কাজী ইনাম আহমেদ অবশ্য জানিয়েছেন, ‘আবাহনী ৫২ বছর ধরে দল গড়ছে। আরও ৫২ বছর গড়বে।’
আগামী ২৬ অক্টোবর বাফুফে নির্বাচন। ২২ আগস্ট শেষ হবে ফুটবলের দলবদল। ফুটবল মৌসুম কবে শুরু হবে জানা নেই।