Logo
×

Follow Us

খেলাধুলা

বুদাপেস্টে রানী হামিদের সাফল্যগাথা

Icon

আহসান হাবীব সুমন

প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪:৪৯

বুদাপেস্টে রানী হামিদের সাফল্যগাথা

রানী হামিদ ও সুজান পোলগার। ছবি: সংগৃহীত

সুজান পোলগার। নারী দাবার সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন এবং দাবা অলিম্পিয়াডে নারী বিভাগে পাঁচটি সোনাসহ ১২টি পদকের মালিক তিনি। নারী দাবা অলিম্পিয়াডে দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ৫৬ ম্যাচ খেলে কখনও হারেননি সুজান। 

তিনি নিঃসন্দেহে বিশ্ব দাবা জগতের জীবন্ত কিংবদন্তি। হাঙ্গেরিতে জন্ম নিলেও বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক তিনি। সম্প্রতি তার জন্মভূমিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে ৪৫তম দাবা অলিম্পিয়াড। ওপেন আর মহিলা বিভাগে শিরোপা জিতে নিয়েছে ভারত। আর অনন্য পারফর্ম্যান্সে আলো ছড়িয়েছেন বাংলাদেশের রানী হামিদ। হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে টানা ছয়টি ম্যাচ জিতে ৮০ বছরের রানী হামিদ প্রমাণ করেছেন, বয়স শুধু একটি সংখ্যা মাত্র। 

দাবা অলিম্পিয়াড চলাকালে সুজান নিজের ফেসবুক আইডিতে রানী হামিদের সঙ্গে একটি ছবি শেয়ার করেন। ক্যাপশনে লেখেন, ‘আমার বন্ধু রানী হামিদ। ৮০ বছর বয়সী তরুণী! এখনও জয়ের অদম্য নেশা যার প্রবল।’ ভুল বলেননি সুজান। বুদাপেস্টে যেখানে বাংলাদেশে তরুণ দাবাড়ুরা অসহায় আত্মসমর্পণ করেছেন প্রতিপক্ষের কাছে, সেখানে রানী হামিদ সাদা-কালো ঘুপচিতে লিখেছেন বিজয়গাথা। অথচ তার বয়সে বেশিরভাগ লোক শারীরিক এবং মানসিক ভাটা অনুভব করে থাকেন। তারুণ্যের শক্তি ও দক্ষতা ম্লান হয়ে যায়। কিন্তু ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই ৮০তম জন্মদিন পালন করা রানী হামিদ হাঙ্গেরিতে ফিদে দাবা অলিম্পিয়াডে লড়েছেন বাংলাদেশের মানরক্ষার জন্য। কুর্নিশ রানী হামিদ।

রানী হামিদ সাফল্য পেয়েছেন। কিন্তু বুদাপেস্টে বাংলাদেশ দলের ভরাডুবি হয়েছে। উন্মুক্ত বিভাগে বাংলাদেশ পেয়েছে ৭৮তম স্থান। নারী বিভাগে অবস্থান ৮১তম। উন্মুক্ত বিভাগে অংশ নিয়েছিলেন দুই গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোরশেদ ও এনামুল হোসেন রাজীব, আন্তর্জাতিক মাস্টার মোহাম্মদ ফাহাদ রহমান এবং দুই ফিদে মাস্টার মনন রেজা নীড় ও তাহসিন তাজওয়ার জিয়া। নারী বিভাগে অংশ নেন আন্তর্জাতিক মাস্টার রানী হামিদ, দুই ফিদে মাস্টার নোশিন আঞ্জুম, ওয়াদিফা আহমেদ এবং দুই ক্যান্ডিডেট মাস্টার নুশরাত জাহান আলো ও ওয়ালিজা আহমেদ। বুদাপেস্ট অলিম্পিয়াডে সব মিলিয়ে রেকর্ড সংখ্যক ১৯৫টি দেশের ১৯৭টি পুরুষ দল ও মহিলা বিভাগে রেকর্ড সংখ্যক ১৮২টি দেশের ১৮৪টি দল অংশ নেয়। নারী আর পুরুষ বিভাগে স্বাগতিক দেশের তিনটি করে দল অংশ নেয়। 

পুরুষ দলের হয়ে প্রথম অংশ নিয়েছেন ১৪ বছর বয়সী জাতীয় চ্যাম্পিয়ন মনন রেজা নীড়। ইসরায়েলের গ্র্যান্ডমাস্টার গোর্শটেইন ইডোকে (২৫৪৩ রেটিং) হারিয়ে চমক দেখিয়েছেন ফিদে মাস্টার নীড়। সব মিলিয়ে ১০ গেমে অংশ নিয়ে চারটি জয় ও তিনটি ড্র করেছেন তিনি। নীড়কে নিয়ে স্বপ্ন দেখাই যায়। এদিকে বাংলাদেশ নারী দলের হয়ে আটটি ম্যাচ খেলেছেন রানী হামিদ। জিতেছেন সাতটি ম্যাচ। টানা জয়ের ডাবল হ্যাটট্রিকের পর সপ্তম ম্যাচে বর্ষীয়ান রানী হারেন নরওয়ের দাবাড়ুর কাছে। শেষ রাউন্ডে তিনি জয় পান বেলজিয়ামের প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। রানী অপ্রতিরোধ্য ছিলেন। কিন্তু দলীয় ব্যর্থতায় বাংলাদেশকে হতাশায় শেষ করতে হয়েছে টুর্নামেন্ট। শেষ ম্যাচের কথাই ধরা যাক। রানী জিতেছেন। কিন্তু ড্র করেছেন নোশিন আনজুম। নুসরাত জাহান ও ওয়াদিফা আহমেদ হেরেছেন। তাতে বাংলাদেশ ১.৫-২.৫ পয়েন্টে হেরেছে বেলজিয়াম নারী দলের কাছে।

বাংলাদেশের নারী দাবায় রানী হামিদকে নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। বর্ষীয়ান রানী হামিদ ১৯৮৫ সালে আন্তর্জাতিক মাস্টার খেতাব পান। জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন ২০ বার। ব্রিটিশ মহিলা দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে তিন বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। ২০১৭ সালে দিল্লি কমনওয়েলথ গেমসে বাংলাদেশকে এনে দিয়েছিলেন স্বর্ণপদক। বাংলাদেশের দাবাকে বিশ্বদরবারে প্রতিষ্ঠিত করার পুরোধায় রয়েছেন রানী হামিদ। বাংলাদেশ দলের ব্যর্থতার মাঝে রানী হামিদ বুদাপেস্টে লিখেছেন সাফল্যের গল্প। প্রমাণ করেছেন, তিনি সত্যিই বাংলাদেশের দাবার রানী। অতীত তো বটেই, বর্তমান প্রজন্মের মধ্যেও রানীকে টপকে যাওয়ার মতো কেউ নেই।


Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫