১৭-৩০ অক্টোবর নেপালে অনুষ্ঠিতব্য সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ ফুটবলে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ। যে কোনো প্রতিযোগিতায় শিরোপাধারী হিসেবে লড়াই শুরু করাটা বাড়তি চাপ। সেই চাপটা কাঠমান্ডুতে প্রথমবারের মতো অনুভব করবেন সাবিনা খাতুনরা।

২০১০ সাল থেকে শুরু হওয়া নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশপের প্রথম পাঁচটি আসরেই শিরোপা জিতেছিল ভারত। ২০২২ সালে বাংলাদেশের নারীরা স্বর্ণালি সাফল্যে গুঁড়িয়ে দেয় ভারতের আধিপত্য। পুরো টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ ছিল অপ্রতিরোধ্য। গ্রুপ পর্ব থেকে ফাইনাল পর্যন্ত প্রতিপক্ষের জালে ২৩ বার বল জড়ায় বাঘিনীরা। বিপরীতে ফাইনালে নেপালের বিপক্ষে একটিমাত্র গোল হজম। আসরে ৮ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা আর সেরা খেলোয়াড়ের মর্যাদা পান অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার পান রুপনা চাকমা। ২০২৪ সালের স্কোয়াডেও রয়েছেন সাবিনা আর রুপনা। তবু বড্ড বদলে গেছে বাংলাদেশ দল। এক দশকের বেশি সময় ধরে লাল-সবুজের কন্যাদের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা কোচ গোলাম রাব্বানী ছোটন নেই। সাফ শিরোপায় অনবদ্য ভূমিকা রাখা সিরাত জাহান স্বপ্না, আনুচিং মগিনি, সাজেদা খাতুন আর আঁখি খাতুনরা নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন ফুটবল থেকে। ২০২২ সালে সাফ শিরোপা জয়ের পর মেয়েদের ফুটবল নতুন দিশা পাবে, এমনটাই ছিল ভাবনা। অথচ সাফজয়ী নারীদের পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে প্রায় ৯ মাস। ছোটন সরে যাওয়ার পর কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন মাহবুবুর রহমান লিটু এবং সাইফুল বারী টিটু। কিন্তু কেউ স্থায়ী হননি। বর্তমানে মেয়েদের দায়িত্বে রয়েছেন বাফুফের এলিট একাডেমির পিটার বাটলার। ব্রিটিশ কোচের অধীনে জুলাইয়ে ভুটান সফরে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচে জয় পায় বাঘিনীরা। এ ছাড়া গত মে মাসে চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে ঘরের মাঠে দুটি ম্যাচ খেলে হেরেছে বাংলাদেশ। ভুটান আর চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে সাবিনাদের গোছালো মনে হয়নি। পরবর্তী ৩ মাসে বাংলাদেশ কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেনি। দীর্ঘদিন প্রতিযোগিতামুলক ম্যাচ খেলতে না পারাটা বাংলাদেশকে ভোগাতে পারে। 

৭ দলের সাফে ‘এ’ গ্রুপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভারত আর পাকিস্তান। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটি গুরুত্বপূর্ণ বাঘিনীদের জন্য। বিগত আসরের গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ ৩-০ গোলে হারিয়েছিল ভারতকে। কিন্তু ভারতকে ফের হারানো যাবে, নিশ্চয়তা নেই। তারা সাফ অঞ্চলের ফুটবলে পাওয়ার হাউস। আপাতত সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে কোচ বাটলারের শিষ্যদের টার্গেট পাকিস্তান। গত সাফে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৬-০ গোলের জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেছিলেন সাবিনা। 

বাংলাদেশের ব্রিটিশ কোচ বাটলার অতীত নিয়ে ভাবতে রাজি নন, ‘আমার কাছে অতীতের কোনো মূল্য নেই। আমি বর্তমান নিয়ে থাকা মানুষ। ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে পছন্দ করি।’

বাংলাদেশ দলের প্রাথমিক লক্ষ্য সেমিফাইনাল। পরবর্তী ভাবনায় আসবে ফাইনাল আর শিরোপা। বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশ নারী দলের জন্য সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা ধরে রাখার লড়াইটা খুব কঠিন হতে চলেছে। তবে পারফর্ম্যান্সে নিজেদের ছাপিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাগ্যের পরশ পেলে ঘটতে পারে অনেক কিছুই। আপাতত প্রত্যাশা ইতিবাচক প্রাপ্তির দিকেই।