Logo
×

Follow Us

খেলাধুলা

ক্লে কোর্টের রাজাকে লাল সেলাম

Icon

আহসান হাবীব সুমন

প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৪৩

ক্লে কোর্টের রাজাকে লাল সেলাম

ধ্রুপদী টেনিসের সবচেয়ে বড় শিল্পী রাফা। ছবি: সংগৃহীত

টেনিসের সর্বকালের সেরা পুরুষ খেলোয়াড় কে? প্রশ্নটা নিশ্চিতভাবেই বিভ্রান্তিতে ফেলে দেবে যে কোনো ক্রীড়াপ্রেমীকে। অনেকেই ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২৪টি গ্র্যান্ডস্লামের মালিক নোভাক জকোভিচের পক্ষ নেবেন। কেউ বলবেন, ২০টি গ্র্যান্ডস্লাম জয় করে অবসরে যাওয়া ধ্রুপদী টেনিসের সবচেয়ে বড় শিল্পী রজার ফেদেরারের কথা। তাতে তেড়ে আসবেন রাফায়েল নাদালের ভক্তরা। ২২টি গ্র্যান্ডস্লামের মালিক রাফাও যে ইতিহাসের সেরার দাবিদার। আর প্রশ্নটা যদি আসে ক্লে-কোর্ট প্রতিযোগিতার, রাফার তো প্রতিদ্বন্দ্বীই নেই। 

টেনিস দুনিয়ায় প্রতিবছর চারটি গ্র্যান্ডস্লাম অনুষ্ঠিত হয়। ইউএস আর অস্ট্রেলিয়ান ওপেন অনুষ্ঠিত হয় হার্ড কোর্টে। উইম্বলডন খেলা হয় সবুজ ঘাসে। আর ফ্রেঞ্চ ওপেনের ময়দান লাল। রোলাঁ-গারোঁর লাল দুর্গ ইটের গুঁড়ো আর পোড়ামাটিতে বানানো। ফ্রেঞ্চ ওপেনের লাল দুর্গে ১৪টি শিরোপা জিতেছেন নাদাল। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬টি ফ্রেঞ্চ ওপেন রয়েছে সুইডিশ কিংবদন্তি বিয়নবর্গের নামের পাশে। ৩টি করে ফ্রেঞ্চ ওপেন জিতেছেন জকোভিচ, ম্যাটস উইলেন্ডার আর ইভান লেন্ডল। অপেশাদার যুগে (১৯০৩-১৯১৪) পর্যন্ত ৮ বার ফ্রেঞ্চ ওপেন উঁচিয়ে ধরেছেন ফরাসি ম্যাক্স ডেকুগিস। পরিসংখ্যানে স্পষ্ট, লাল মাটির দুর্গে নাদাল অতুলনীয়। প্যারিসে নাদালের জয়ের হার ৯৬.৫ শতাংশ, যা কোনো গ্র্যান্ডস্লামে একজন খেলোয়াড়ের সর্বোচ্চ। এখানে ১১৬ ম্যাচ খেলে জিতেছেন রেকর্ড ১১২টিতে। ২০০৮, ২০১০, ২০১৭ ও ২০২০ সালে ফ্রেঞ্চ ওপেন জয়ের পথে একটি সেটও তিনি হারেননি। 

নাদাল হার্ড কোর্টে চারটি ইউএস ওপেন আর দুটি অস্ট্রেলিয়ান ওপেনও জিতেছেন। সবুজ ঘাসের উইম্বলডন জিতেছেন দুই বার। কিন্তু স্প্যানিশ মহাতারকা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন লাল মাটির দুর্গের রাজা হিসেবে। ২০০৫ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে ফ্রেঞ্চ ওপেনে পা রেখেই হৈচৈ ফেলে দিয়েছিলেন। ফাইনালে হারিয়েছিলেন ম্যারিয়ানো পুয়ের্তাকে। সেই শুরু। ২০২২ সালে ৩৬ বছর বয়সে জীবনের শেষ গ্র্যান্ডস্লামটি এসেছে ফ্রেঞ্চ ওপেনেই। একই বছর পেয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে দ্বিতীয় সাফল্য। 

নাদালের বর্তমান বয়স ৩৮। আগামী নভেম্বরে দেশের হয়ে ‘ডেভিস কাপ’ খেলেই বিদায় জানাবেন টেনিসকে। সাম্প্রতিক সময়ে ইনজুরিতে বারবার ছিটকে পড়েছেন। শরীর নিতে পারছিল না পেশাদার টেনিসের ধকল। অলিম্পিকে দেশের হয়ে একক আর ডাবলসের সোনার পদকজয়ী নাদালের অবসরে টেনিসের সোনালি অধ্যায়ের অবসান হচ্ছে । 

লিওনেল মেসি আর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ঐতিহাসিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রায় দুই দশক বুঁদ হয়ে থেকেছে ফুটবলপ্রেমীরা। টেনিসেও নাদাল আর জকোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা রূপকথার মতো। সমসাময়িক দুই মহান প্রতিপক্ষ পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছেন ৬০ বার। জয়ের হিসেবে ৩১-২৯ ব্যবধানে এগিয়ে জকো। ব্যবধানই বলে দিচ্ছে, কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লড়াই হয়েছে দুজনের মধ্যে। জকো একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে দুবার ফ্রেঞ্চ ওপেনে হারিয়েছেন নাদালকে। আবার ২০১২, ২০১৪ ও ২০২০ ফাইনালে জকোভিচকে হারিয়েই ফ্রেঞ্চ ওপেন জিতেছেন নাদাল। ২০১০ আর ২০১৩ সালের ইউএস ওপেন ফাইনালেও নাদালের কাছে হেরেছেন সার্বিয়ান জকো। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন আর উইম্বলডন ফাইনালে রজার ফেদেরারকে হারিয়েছেন রাফা। 

নাদালের প্রসঙ্গে টেনিসের অন্যতম কিংবদন্তি রড লেভার বলেছিলেন, ‘নাদালকে খেলতে দেখা আমার জীবনের সৌভাগ্য। তার টেনিস দর্শকদের পৌঁছে দেয় অন্য গ্রহে। চ্যাম্পিয়ন অনেকে, তবে নাদাল এক জনই।’

টেনিসে ফেদেরারকে বলা হয় ধ্রুপদী শিল্পী। জকো প্রায় শতভাগ নিখুঁত। আর রাফা পাওয়ার টেনিসের প্রথম এবং শেষ কথা। ফুটবল আর রিয়াল মাদ্রিদের ভক্ত। টেনিসের র‌্যাকেট তুলে রাখার পর ফুটবলের সংগঠক হিসেবে নাদালকে দেখা যাবে- এমন সম্ভাবনাই দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে নাদাল টেনিসের সঙ্গেও জড়িয়ে থাকবেন। তিনি স্পেনে নিজের নামে গড়েছেন টেনিস একাডেমি, যেখানে তৈরি হচ্ছেন হালের কার্লোস আলকারাজ কিংবা ইয়ানিক সিনারের মতো ভবিষ্যৎ তারকা। নাদালের মতো মহানায়ককে ঈশ্বরও সম্ভবত টেনিস থেকে আলাদা করতে চাইবেন না। এটা সম্ভব না।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫