
ভারতের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের জয়ের বীরত্বগাথা। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের মাটিতে টেস্ট সিরিজ খেলতে নেমে বুক কেঁপে ওঠে না, এমন দল খুঁজে পাওয়া ভার। লাল বলের ক্রিকেটে ২০১২ সালে টিম ইন্ডিয়া তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ১-২ ব্যবধানে হেরেছিল ইংল্যান্ডের কাছে। পরবর্তী এক যুগে টানা ১৮ সিরিজে ভারত লিখেছে জয়ের বীরত্বগাথা।
২০২৪ সালের অক্টোবরে টেস্ট সিরিজ খেলতে ভারতের ভূমিতে পা রাখে নিউজিল্যান্ড। নিয়মিত অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামসন নেই। টম ল্যাথামের কাঁধে চড়ে ভারতের বিপক্ষে সম্মানজনক লড়াইয়ের লক্ষ্যটাই ছিল কিউইদের। সঙ্গী ছিল ২০১৬ সালে ভারতের কাছে ০-৩ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ হারের স্মৃতি। ছিল সেপ্টেম্বরেই শ্রীলঙ্কার কাছে দুই ম্যাচ সিরিজে হোয়াইটওয়াশের দগদগে ঘা। তাই ধারণা ছিল, রোহিত শর্মা আর বিরাট কোহলিরা সহজেই কিউইদের নাস্তানাবুদ করে দেশে ফেরত পাঠাবেন।
বাস্তবে ঘটেছে উল্টো ঘটনা, যা সম্ভবত পৃথিবীর ধুরন্ধর বাজিকরও ভাবতে পারেননি। ভারতকে তিন ম্যাচ সিরিজের টেস্ট লড়াইয়ে হোয়াইটওয়াশের অবিশ্বাস্য রূপকথা লিখেছে নিউজিল্যান্ড। ২০০০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজে ঘরের মাঠে ধবল-ধোলাই হয়েছিল ভারত। কিন্তু তিন বা ততোধিক ম্যাচের সিরিজে নিউজিল্যান্ডই স্বাগতিকদের দিয়েছে প্রথম ধবল-ধোলাইয়ের তিক্ত স্বাদ। ১৯৩২ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে ভারতের টেস্ট অভিষেক। ১৯৩৩ সালে নিজেদের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই প্রথম হোম সিরিজ আয়োজন করে ভারত। তিন ম্যাচের সিরিজে ভারত হেরেছিল ০-২ ব্যবধানে। সেই থেকে নিজেদের ঘরের মাঠে ৮৮টি টেস্ট সিরিজ খেলেছে ভারত। তার মধ্যে সিরিজ হেরেছে ১৭টি এবং সমান ১৭ সিরিজ তারা ড্র করেছে। দেশে ও দেশের বাইরে সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ১৭৭ টেস্ট সিরিজের মধ্যে ভারত জিতেছে ৭৭টি। ৩৪টি সিরিজ তারা ড্র করেছে এবং ৬৬ বার তারা সিরিজ হেরেছে।
ভারতের সর্বনাশের মূল নায়ক ছিলেন এজাজ প্যাটেল। প্রথম ভিনদেশি বোলার হিসেবে ভারতের মাটিতে তিন ম্যাচের সিরিজে ১৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি। অবশ্য এজাজকে ভিনদেশি বলার উপায়ও নেই। তিন যুগ আগে তার জন্ম মুম্বাইয়ের এক গুজরাটি মুসলিম পরিবারে। ৮ বছর বয়সে সপরিবারে নিউজিল্যান্ডে পাড়ি জমান। সেই এজাজই এখন ভারতীয়দের কাছে ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’।
ভারত বরাবর ঘরের মাঠে প্রতিপক্ষের জন্য পেতে রাখে স্পিনের ফাঁদ। তাতেই বরাবর বাজিমাত। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে নিজেদের পাতা ফাঁদেই কুপোকাত হয়েছে তারা। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ২১ টেস্টের ৩৭ ইনিংসে ৮৫ উইকেট শিকার করা এজাজ নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তিন টেস্ট খেললেও কোনো উইকেট পাননি। তার সব টেস্ট উইকেটই নিউজিল্যান্ডের বাইরে। বিশেষ করে ভারতের স্পিন-সহায়ক উইকেট যেন তার প্রিয় চারণভূমি। মুম্বাইয়ের শেষ টেস্টে নিয়েছেন দুই ইনিংস মিলিয়ে ১১ উইকেট। ২০২১ সালে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেরেতেই এক ইনিংসে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে জিম লেকার এবং অনিল কুম্বলের পর তৃতীয় বোলার হিসেবে নিয়েছিলেন ১০ উইকেট। যদিও ম্যাচটি নিউজিল্যান্ড হেরেছিল।
২০২৪ সালের অক্টোবর মাসটি নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসেও লেখা থাকবে সোনালি অক্ষরে। প্রথমবার তারা ক্রিকেট ইতিহাসে একই টেস্ট সিরিজে তিনটি ম্যাচ জয়ের দেখা পেয়েছে।