
ঋতুপর্ণা, মনিকা ও রুপনা। ছবি: সংগৃহীত
সেপ্টেম্বরে হঠাৎ করেই অশান্ত হয়ে ওঠে বাংলাদেশের পাহাড়ি জনপথ। খাগড়াছড়ি, বান্দরবান আর রাঙ্গামাটিতে ঘটে হতাহতের ঘটনা। অথচ সেই পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলেই বর্তমানে বইছে আনন্দের বন্যা। বিশেষ করে খাগড়াছড়ি আর রাঙ্গামাটির পাহাড়ি জনপদ মেতেছে উৎসবের আমেজে। সম্প্রতি বাংলাদেশ নারী দল টানা দ্বিতীয়বারের মতো জয় করেছে সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা। কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে স্বাগতিক নেপালকে হারিয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা ধরে রেখেছে ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব। বাংলাদেশের বিশাল অর্জনে মূল কারিগর ছিলেন ঋতুপর্ণা চাকমা, মনিকা চাকমা আর রুপনা চাকমা।
ঋতুপর্ণা ২০২৪ সালের সপ্তম সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন। অসাধারণ জয়সূচক গোলে পেয়েছেন ফাইনালের সেরার পুরস্কার। আর রুপনা টানা দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হয়েছেন সাফ আসরের সেরা গোলরক্ষক। মনিকাও কম যাননি। মেগা ফাইনালের প্রথম গোল করেছেন তিনিই।
বাংলাদেশের নারী ফুটবলের প্রসঙ্গ এলেই উঠে আসে ময়মনসিংহের কলসিন্দুর গ্রামের নাম। তহুরা, মারিয়া মান্ডা, শামসুন্নাহার, সানজিদাদের মতো দেশসেরা নারী ফুটবলার উঠে এসেছে কলসিন্দুর থেকে। পিছিয়ে নেই পার্বত্য চট্টগ্রাম। বর্তমান সাফজয়ী দলের ঋতুপর্ণার গ্রামের বাড়ি রাঙ্গামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের দুর্গম মগাছড়ি গ্রামে। রুপনার বাড়ি রাঙ্গামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ভূঁইয়াদাম গ্রামে। আর মনিকার বাড়ি খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার লক্ষ্মীছড়ি ইউনিয়নের সুমান্ত পাড়ায়। ২০২২ সালের সাফজয়ী দলে ছিলেন দুই সহোদরা আনাই মগিনী ও আনুচিং মগিনী। মজার ব্যাপার হচ্ছে, তারা সবাই উঠে এসেছেন ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। সেখানেই তাদের প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে ফুটবলের হাতেখড়ি।
বাংলাদেশের পাহাড়ি জনপথ মাঝেমাঝেই উত্তপ্ত হয়ে উঠে। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য শান্তি চুক্তি হলেও পুরো শান্তি ফেরেনি। কিন্তু ঋতুপর্ণা আর মনিকারা ঠিকই বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করে চলেছেন। অতীতে অরুণ, বরুণ আর কিংশুকের মতো ফুটবলার খেলেছেন বাংলাদেশের মূল জাতীয় দলে। সুরকৃষ্ণ চাকমা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বক্সিং তারকা। তাদের দ্যুতিতে শুধু পাহাড়ি নৃগোষ্ঠী নয়, আনন্দে উচ্ছ্বল হয়ে ওঠে পুরো বাংলাদেশ। বড় বড় রাজনৈতিক নেতারা যা পারেনি, ঋতু আর রুপনারা পুরো বাংলাদেশকে একইসঙ্গে আনন্দে উদ্বেলিত করতে পেরেছেন। তাই তারা শুধু ফুটবল মাঠের বিজয়ী সৈনিক না। তারা পুরো বাংলাদেশকে এক জাতিসত্তায় উদ্বেলিত করা শান্তির পায়রা।