
সিরিজ জয়ে আফগানিস্তানের উল্লাস। ছবি: সংগৃহীত
গত ১১ নভেম্বর হতে পারত মেহেদি হাসান মিরাজের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সবচেয়ে স্মরণীয় দিন। নাজমুল হাসান শান্তর ইনজুরিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে অধিনায়কত্ব করার প্রথম সুযোগটা পেয়েছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে নেমেছিলেন নিজের শততম ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে। যদিও পরিস্থিতি ছিল জটিল। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটি হেরে ব্যাকফুটে বাংলাদেশ। তবে দ্বিতীয় ম্যাচ জেতায় সিরিজ জয়ের স্বপ্ন বেঁচে ছিল। কিন্তু তিন ম্যাচ সিরিজের ‘অঘোষিত’ ফাইনালে বাংলাদেশ ৫ উইকেটে হেরে যাওয়ায় টাইগারদের ২৩তম অধিনায়ক হিসেবে মিরাজের অভিষেকটা পরিণত হয়েছে বিষাদে।
২০২৪ সালে দুর্দান্ত ছন্দে আফগানিস্তান। খেলেছে আইসিসি টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে। সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুঁড়িয়ে এক দিনের সিরিজে ঐতিহাসিক জয় পায় খোরাসানের সিংহরা। সদ্যই আফগান ‘এ’ দল জিতেছে ইমার্জিং কাপের শিরোপা। সব মিলিয়ে ক্রিকেটে বৃহস্পতি তুঙ্গে থাকা আফগানদের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজ নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে খুব বেশি আশাবাদী হওয়ার কিছু ছিল না। বিশেষত সর্বশেষ ভারত আর দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে বাংলাদেশের ভরাডুবি ছিল জলজ্যান্ত ক্ষত। সিরিজের প্রথম ম্যাচেই বাংলাদেশ হেরেছে ৯২ রানের লজ্জার ব্যবধানে। আফগানদের ২৩৬ রানের টার্গেট তাড়ায় টাইগাররা অলআউট হয়েছে ১৪৩ রানে। অথচ এক পর্যায়ে দুই উইকেটের খরচায় ১২০ রানে পৌঁছে যাওয়া বাংলাদেশ দেখছিল সহজ জয়ের স্বপ্ন। কিন্তু আল্লাহ গজনফর ৬.৩ ওভারে ৬ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের ললাটে এঁকে দেন নির্মম পরাজয়ের ক্ষতচিহ্ন। দ্বিতীয় ম্যাচে অধিনায়ক শান্তর ৭৬ রান, নাসুম আহমেদের ৩ উইকেটসহ দলীয় পারফরম্যান্সে বাংলাদেশ দলের জয় ৬৮ রানে।
আফগানিস্তান সিরিজে ছন্দেই ছিলেন শান্ত। প্রথম ম্যাচে করেছিলেন ৪৭ রান। পরবর্তী সময়ে ৭৬ রান করে হয়েছিলেন ম্যাচের সেরা। কিন্তু তৃতীয় আর শেষ ম্যাচেই ইনজুরির জন্য মাঠে নামা হয়নি তার। শান্তর অনুপস্থিতিতে টাইগারদের ১৭তম ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে বেশকিছু ‘মাইলফলক’ গড়েন মিরাজ। ব্যাট হাতে করেন ৬৬ রান। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে সঙ্গে নিয়ে গড়েন ১৪৫ রানের জুটি। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে অভিষেকে ফিফটি পাওয়া পঞ্চম খেলোয়াড় মিরাজ। এর আগে এই কৃতিত্ব দেখিয়েছেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল, হাবিবুল বাশার, সাকিব আল হাসান আর শান্ত। এ ছাড়া বাশার আর মুশফিকের পর তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে শততম আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচে হাফসেঞ্চুরি করেছেন মিরাজ।
ব্যক্তিগত রেকর্ড গড়েও অভিষেকে ‘অধিনায়ক’ হিসেবে সিরিজ জয়ের স্বাদ পাননি মিরাজ। মাহমুদুল্লাহর ৯৮ রানও অঘোষিত ফাইনালে বাংলাদেশকে জয় এনে দিতে পারেনি। বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ২৪৫ রানের টার্গেট আফগানরা পেরিয়েছে পাঁচ উইকেট আর ১০ বল হাতে রেখে। ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজের ১০১ রান আর আজমাতুল্লাহ ওমরজাইর অপরাজিত ৭৭ রানে দাপুটে জয় পায় আফগানিস্তান। সঙ্গে যোগ হয়েছে সিরিজ জয়ের উল্লাস।
বাংলাদেশ আর আফগানিস্তান সিরিজ দিয়ে শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়াম গড়েছে নতুন বিশ্বরেকর্ড। সিরিজের প্রথম ম্যাচটি ছিল মরুর দেশের নয়নাভিরাম স্টেডিয়ামে আয়োজিত ৩০০তম আন্তর্জাতিক ম্যাচ। বিশ্বের আর কোনো স্টেডিয়ামের ৩০০টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজনের রেকর্ড নেই। ১৯৮৫ সালে শারজাতে প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল পাকিস্তান আর শ্রীলঙ্কা। আর ৩০০তম ম্যাচে বাংলাদেশকে গুঁড়িয়ে শারজার ইতিহাসে নিজেদের নাম চিরস্থায়ী করেছে আফগানিস্তান। যেখানে বাংলাদেশের ব্যাঘ্রশাবকদের নামটাও জুড়ে থাকবে আফগান সিংহদের শিকার হিসেবে।