ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে শেষ হচ্ছে বাংলাদেশের আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ২০২৩-২৫ মৌসুম। ২২ নভেম্বর অ্যান্টিগায় মাঠে গড়াবে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্ট। দ্বিতীয় আর শেষ টেস্ট শুরু ৩০ নভেম্বর জ্যামাইকায়।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের টেস্ট ম্যাচের সংখ্যা ২০টি। বাংলাদেশ জিতেছে চারটি, হার ১৪টি, ড্র হয়েছে দুটি ম্যাচ। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে বাংলাদেশ পেয়েছিল ২-০ ব্যবধানে জয়ের ঐতিহাসিক স্বাদ। ২০১৮ সালে নিজেদের মাটিতেও ক্যারিবিয়ানদের দুই ম্যাচের সিরিজে ধবল-ধোলাই করে টাইগাররা। পরবর্তী সময়ে মুখোমুখি চার দেখায় টানা হেরেছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি ভারত সফরে লেজেগোবরে অবস্থায় পড়েছে টিম টাইগার। অক্টোবরে নিজেদের মাটিতেও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দুই ম্যাচের সিরিজে ধবল-ধোলাই হয়েছে। সব মিলিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের শুরুতেই টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশ রয়েছে ‘ব্যাকফুটে’।

২০২৩-২৫ মৌসুমের আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট টেবিলে বাংলাদেশ রয়েছে অষ্টম স্থানে। ১০ ম্যাচের তিনটি জয়ে অর্জিত পয়েন্ট ৩৩। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অবস্থা আরো করুণ। ৯ ম্যাচে মাত্র এক জয়ে ২০ পয়েন্ট পাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ রয়েছে সর্বনিম্ন স্থানে। চলতি বছরের জানুয়ারিতেই ব্রিসবেনে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ক্যারিবিয়ানরা চলতি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে একমাত্র জয়ের দেখা পায়। এ ছাড়া দেশের মাটিতে একটি করে টেস্ট ড্র করেছে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে।

২০১৯-২১ মৌসুম থেকে মাঠে গড়ানো আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম দুটি সংস্করণেই ৯ দলের মধ্যে নবম স্থানে ছিল বাংলাদেশ। চলতি মৌসুমেও পরিস্থিতি উন্নয়নের সম্ভাবনা কম। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজ হেরে গেলেই অবনমিত হয়ে বাংলাদেশের নবম স্থান নিশ্চিত। আর ক্যারিবিয়ানদের হোয়াইটওয়াশ করতে পারলে রয়েছে পয়েন্ট টেবিলের সপ্তম স্থানে উঠে আসার হাতছানি। বর্তমানে সপ্তম স্থানে থাকা পাকিস্তানের পয়েন্ট ৪০। তবে পাকিস্তানের সিরিজ বাকি আছে দক্ষিণ আফ্রিকা আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। পয়েন্ট টেবিলে সপ্তম স্থানের জন্য বাংলাদেশকে নিজেদের জয় ছাড়াও তাকিয়ে থাকতে হবে পাকিস্তানের ব্যর্থতার দিকে।  

চলতি মৌসুমে বাংলাদেশের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ দৌড় শুরু হয়েছিল স্বপ্নের মতো। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সিলেটে টাইগাররা হারিয়ে দেয় ২০১৯-২১ মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ডকে। কিন্তু চলতি বছরের মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিলেট আর চট্টগ্রামের মাঠে হেরেছে বাংলাদেশ। আগস্ট-সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানের মাটিতে প্রথম দল হিসেবে স্বাগতিকদের দুই ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করে টাইগাররা। তবে ভারত আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পাকিস্তানে পাওয়া সাফল্য ধরে রাখা যায়নি।   

ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে অনুষ্ঠেয় টেস্ট সিরিজ থেকে ছিটকে পড়েছেন নিয়মিত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। নেই অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় তারকা সাকিব আল হাসানের টেস্ট ক্যারিয়ার শেষ হয়েছে ভারতের মাটিতে। যদিও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিজ দেশে অবসর নিতে চেয়েছিলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। কিন্তু পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক এমপি হিসেবে নিরাপত্তা শঙ্কায় দেশে ফিরতে পারেননি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে তিনটি করে ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টিও খেলবে বাংলাদেশ। টেস্ট আর টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে ‘গুডবাই’ জানানো সাকিবকে দেখা যেতে পারে এক দিনের সিরিজে।

শান্তর পরিবর্তে টেস্ট স্কোয়াডে নেওয়া হয়েছে শাহাদাত হোসেন দিপুকে। বাংলাদেশের হয়ে চারটি টেস্ট ও তিনটি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন ২২ বছর বয়সী এ ব্যাটসম্যান। গত বছর অক্টোবরে হাংজুতে এশিয়ান গেমস ক্রিকেট ইভেন্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের হয়ে অভিষেক শাহাদাতের। টেস্টে ৪ ম্যাচের ৮ ইনিংসে ১৪.৭৫ গড়ে ১১৮ রান করেছেন তিনি। ক্যারিবিয়ান সফরে টেস্ট দলের নেতৃত্ব দিতে পারেন মেহেদী হাসান মিরাজ।

বাংলাদেশ স্কোয়াড : মেহেদী হাসান মিরাজ, সাদমান ইসলাম, মাহমুদুল হাসান জয়, জাকির হাসান, মুমিনুল হক, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন, লিটন কুমার দাস, জাকের আলী অনিক, শাহাদাত হোসেন দিপু, তাইজুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ, নাহিদ রানা ও হাসান মুরাদ।