২০২৫ সালের ডিসেম্বরে ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠিত হবে যুব হকির বিশ্বকাপ। পাঁচটি মহাদেশের ২৪টি দেশ নিয়ে অনুষ্ঠেয় যুবাদের হকি বিশ্বকাপে সরাসরি খেলবে বাংলাদেশ। হকির যেকোনো পর্যায়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে চলেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।

সম্প্রতি ওমানের মাসকটে অনুষ্ঠিত হয়েছে অনূর্ধ্ব-২১ এশিয়া কাপ হকি। ১০ দলের আসরে বাংলাদেশ পঞ্চম-ষষ্ঠ স্থান নির্ধারণী ম্যাচে থাইল্যান্ডকে উড়িয়ে দিয়েছে ৭-১ গোলের বিশাল ব্যবধানে। মিলেছে ঐতিহাসিক সাফল্য। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ৩-১ গোলে হারায় স্বাগতিক ওমানকে। দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ ০-৬ গোলে উড়ে যায় পাকিস্তানের কাছে। পরবর্তী দুই ম্যাচে মালয়েশিয়া আর চীনের সঙ্গে ড্র করে ‘বি’ গ্রুপে তৃতীয় স্থান অর্জন করে বাংলাদেশ। তাতেই জেগেছিল বিশ্বকাপে অংশ নেওয়ার স্বপ্ন।  

১৯৭৯ সাল থেকে মাঠে গড়াচ্ছে যুব বিশ্বকাপ হকি। ২০২৫ সাল থেকে যুব বিশ্বকাপ হকির ১৬ দল থেকে বাড়িয়ে ২৪ দল করা হয়েছে। এশীয় কোটায় খেলবে ছয়টি দল। আর স্বাগতিক ভারত খেলবে সরাসরি। এতে বাংলাদেশের ভাগ্য খুলেছে। যদিও বাংলাদেশের জন্য পথটা সহজ ছিল না। একসময় ফুটবলের পরেই হকি ছিল দেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খেলা। ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় এশিয়া কাপ হকি। বাংলাদেশের ইতিহাসে যেকোনো দলীয় খেলায় প্রথম পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট ছিল এটি। ঢাকা স্টেডিয়ামে আয়োজিত টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ হারায় ইরানকে। রুখে দেয় চীন, জাপানকে। ইরানের বিরুদ্ধে দেশের হয়ে হকির প্রথম আন্তর্জাতিক হ্যাটট্রিক করেন কিংবদন্তি জুম্মন লুসাই। তৎকালীন অলিম্পিক স্বর্ণজয়ী, বিশ্ব ও এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানের সঙ্গে বুক চিতিয়ে লড়াই করে হেরে যায় ০-১ গোলে। পঞ্চম স্থান নির্ধারণী ম্যাচে শক্তিশালী মালয়েশিয়ার বিপক্ষে পর্যুদস্ত হলেও বাংলাদেশে হকির নতুন জোয়ার আসে। রাতারাতি সুপারস্টার হয়ে ওঠেন জুম্মন লুসাই, কিসমত, লুলু ও তিসারা। বাংলাদেশের ঘরোয়া হকিও হয়ে ওঠে জনপ্রিয়। দেশের জনপ্রিয় দুই দল মোহামেডান আর আবাহনীতে খেলে গেছেন শাহবাজ খান আর ধনরাজ পিল্লাইয়ের মতো বিশ্বসেরা তারকা।

নব্বই দশক থেকেই হকির বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন দেখেছে বাংলাদেশ। যদিও সেই স্বপ্ন থেকে গেছে অধরা। হকির আধুনিকায়নে আর 

কৃত্রিম টার্ফে খেলার সুযোগ নিয়ে হকির লাগাম নিয়েছে ইউরোপ আর ল্যাটিন আমেরিকা। এশিয়ায় পাকিস্তান আর ভারতের রাজত্বের অবসান ঘটেছে। আর বাংলাদেশ? হকি ফেডারেশনের অদূরদর্শিতা, সঠিক পরিকল্পনার অভাবে ঘরোয়া আসরই নিয়মিত আয়োজনে ব্যর্থ। যার প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক হকিতে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে। তবে ওমানে যুব এশিয়া কাপের সাফল্যে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করেন কাওসার আলী। যুবাদের সঙ্গে ম্যানেজার হিসেবে ওমানে গেছেন তিনি। বাংলাদেশের জাতীয় ফুটবল আর হকি দলে খেলা কিংবদন্তি কোচ কাওসার আলী জানান, জীবনের প্রায় সায়াহ্নে এসে দারুণ এক মুহূর্তের সাক্ষী হলাম। বাংলাদেশ হকিতে বিশ্বকাপ খেলবে এটা এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব।

অভাবিত সাফল্যের পর বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২১ দলের অধিনায়ক মেহরাব হাসান বলেন, ‘আমরা হকি খেলি। কিন্তু লিগ তো নিয়মিত হয় না। হলেও ফুটবল আর ক্রিকেটের তুলনায় পারিশ্রমিক কম। ক্যাম্প চলাকালে আমরা হাত খরচ পাই দিনে মাত্র ৪০০ টাকা। বিদেশে এলে দৈনিক ভাতা এক হাজার টাকা। অথচ এক জোড়া ভালো বুটের দামই ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা।’

জাতীয় দলের সাবেক তারকা খেলোয়াড় ও দেশের অন্যতম সেরা কোচ মামুনুর রশীদ বলেন, ‘হকি ফেডারেশন সঠিক পরিকল্পনা ও দক্ষ নেতৃত্ব থাকলে সিনিয়র বিশ্বকাপ খেলাও সম্ভব। এ জন্য দরকার সমন্বিত উদ্যোগ ও একাগ্রতা।’ আশা করা হচ্ছে, যুব বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়ার পর বাংলাদেশের হকিতে নতুন জোয়ার আসবে। বাড়বে পৃষ্ঠপোষকদের আগ্রহ। সুযোগ-সুবিধা আর পারিশ্রমিক বাড়লে তরুণরাও আগ্রহী হবে হকিতে।