Logo
×

Follow Us

খেলাধুলা

গার্দিওলার কঠিন সময়

Icon

আহসান হাবীব সুমন

প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:২৮

গার্দিওলার কঠিন সময়

ফুটবল কোচ পেপ গার্দিওলার। ছবি: সংগৃহীত

সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের পেট্রোডলারে ফুলে ফেঁপে ওঠা ক্লাবের তালিকায় শীর্ষে থাকবে ম্যানচেস্টার সিটির নাম। ২০০৮ সালের আগস্টে আবুধাবি ইউনাইটেড গ্রুপ ইংল্যান্ডের ক্লাবটিকে কিনে নেয়। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে যাদের কোনো শিরোপা ছিল না। সেই ম্যানসিটি আবুধাবি ইউনাইটেড গ্রুপের মালিকানায় হয়ে ওঠে ইংল্যান্ড তো বটেই, ইউরোপ তথা বিশ্বের অন্যতম সফল ক্লাবে। যার কৃতিত্বের বেশির ভাগ কোচ পেপ গার্দিওলার।  

প্রিমিয়ার লিগে ম্যানসিটির প্রথম শিরোপা আসে ২০১১-১২ মৌসুমে ইতালিয়ান কোচ রবার্টো মাঞ্চিনির তত্ত্বাবধানে। ২০১৩-১৪ মৌসুমে ম্যান সিটিকে প্রিমিয়ার লিগ জেতান ম্যানুয়েল পেলিগ্রিনি। তবে সিটিজেনদের ‘সোনালি সময়’ এসেছে গার্দিওলার হাত ধরে। ২০১৬ সালে গার্দিওলা যোগ দেন সিটিজেনদের ডাগ-আউটে। বিগত আট মৌসুমে দলকে জিতিয়েছেন ছয়টি প্রিমিয়ার লিগ। তিনি যেন স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন যুগের কথা। ১৯৮৬ সালে ম্যানইউতে যোগ দেওয়া ফার্গুসন ২৬ বছরে ৩৮টি শিরোপা অর্জন করে। যার মধ্যে ১৩টি প্রিমিয়ার লিগ আর দুটি উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপাও রয়েছে। ইউরোপের ক্লাব ফুটবলে স্যার ফার্গুসন কিংবদন্তি। তাকে ছোঁয়া সহজ নয়। কিন্তু গার্দিওলাও কম না। বার্সেলোনাকে ২০০৮-০৯ মৌসুম থেকে স্প্যানিশ লা লিগার হ্যাটট্রিক শিরোপা আর দুটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতিয়েছেন। বায়ার্নকেও জিতিয়েছেন উয়েফা সুপার কাপ আর ক্লাব বিশ্বকাপ। সব মিলিয়ে ২০২৩-২৪ মৌসুম পর্যন্ত গার্দিওলার শিরোপা সংখ্যা ৩৯; যার মধ্যে ১৮টি এসেছে ম্যানসিটির কোচ হিসেবে। 

২০২২-২৩ মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, উয়েফা সুপার আর ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ জিতে আক্ষরিক অর্থেই গার্দিওলার ম্যানসিটি পরিণত হয় বিশ্বসেরা ক্লাবে। আর গার্দিওলা নিজেও ‘কোচ’ হিসেবে দুটি ব্যালন ডি’অর আর ফিফা অ্যাওয়ার্ড জিতে নিয়ে আকাশে উড়ছিলেন।  

২০২২ সালের বিশ্বকাপ জয়ের পর আর্জেন্টিনার অধিনায়ক লিওনেল মেসি বলেছিলেন, ‘লিওনেল স্কালোনি আর্জেন্টিনাকে স্বপ্নের বিশ্বকাপ ট্রফি এনে দিয়েছেন। তিনি আমাদের সবার কাছে স্পেশাল। কিন্তু আমার দেখা বিশ্বসেরা কোচ পেপ গার্দিওলা।’ উল্লেখ্য, বার্সেলোনায় গার্দিওলার অন্যতম প্রিয় শিষ্য ছিলেন আর্জেন্টাইন খুদে জাদুকর।   

ম্যানেজার হিসেবে ক্যারিয়ারের শুরু থেকে সাফল্যের ধারাবাহিকতায় সবাইকে পেছনে ফেলেছেন গার্দিওলা। অথচ ২০২৪ সালের শেষভাগে তাকে দেখতে হচ্ছে বিপরীত চিত্র। 

১৫ ডিসেম্বর ম্যানচেস্টার ডার্বিতে এগিয়ে থেকেও গার্দিওলার দল হেরেছে ম্যানইউর কাছে শেষ মুহূর্তের দুই গোলে, যা অক্টোবর থেকে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১১ ম্যাচে ম্যান সিটির অষ্টম পরাজয়! এর মধ্যে ম্যানসিটি প্রায় ছিটকে গেছে প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা লড়াই থেকে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও স্পোর্টিং লিসবন আর জুভেন্টাসের কাছে হেরে বিদায়ের শঙ্কায় ইংলিশ ক্লাবটি।

প্রশ্ন হচ্ছে, ম্যানসিটির হঠাৎ অধঃপতন কেন? বর্তমানে ম্যানসিটি চোট সমস্যায় জর্জরিত। সদ্য ব্যালন-জয়ী রদ্রি আর কেভিন ডি ব্রুয়েন ম্যানসিটির মধ্যমাঠের চালিকাশক্তি। মৌসুমের শুরু থেকে দুই ‘নিউক্লিয়াস’ একই সঙ্গে খুব কম মাঠে থাকতে পারছেন। রুবেন দিয়াস, জ্যাক গ্রিয়েলিশ, জেরেমি ডোকু, ইলখাই গুন্দোয়ান, নাথান একে, ম্যানুয়েল আকাঞ্জি এবং ফিল ফোডেনকে চোটের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে। বের্নারদো সিলভা এবং কাইল ওয়াকার ফর্ম হারিয়েছেন। আবার ম্যানসিটির ‘গোলম্যাশিন’ আর্লিং হাল্যান্ড যেন গোল করতে ভুলে গেছেন। লিগের প্রথম পাঁচ ম্যাচে তার গোলের সংখ্যা ছিল ১০। পরবর্তী সময়ে জালের দেখা পেয়েছেন মাত্র ৩ বার! আরেক তরুণ তুর্কি ফিল ফোডেন লিগের ১০ ম্যাচে কোনো গোল পাননি! মনে হচ্ছে, গার্দিওলার তুরুপের সব তীরে হঠাৎ করে যেন জং ধরেছে!

গার্দিওলার দল আক্রমণাত্মক ফুটবলে প্রতিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করতে  অভ্যস্ত। অথচ সেই গার্দির শিষ্যরা যেন হালে জিততে ভুলে গেছে। অনেকেই মনে করছেন, ব্যর্থতার জন্য সিটি শিবির ছাড়বেন তিনি। তবে গার্দিওলা জানিয়েছেন, ‘আমি বিপদে পড়লে মা-বাবা কখনো ছেড়ে যাননি, আমিও আমার খেলোয়াড়দের পাশে থাকব। আমরা রিসেট করে শূন্য থেকে শুরু করব।’ 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫