হামজার অন্তর্ভুক্তিতে জাগবে বাংলাদেশের ফুটবল

আহসান হাবীব সুমন
প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০৮

ফুটবলার হামজা চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত
সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে খেলার অনুমতি পেয়েছেন হামজা চৌধুরী। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এবং ইংল্যান্ডে জন্ম নেওয়া হামজা পেয়েছেন লাল-সবুজের পাসপোর্ট। পেয়েছেন বাংলাদেশের হয়ে খেলার জন্য ইংলিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এফএ) এবং সম্প্রতি বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার প্লেয়ার্স স্ট্যাটাস কমিটির সবুজ সংকেত। তাই বাংলাদেশের জার্সিতে হামজার খেলা এখন শুধু সময়ের ব্যাপার। সবকিছু ঠিক থাকলে বাংলাদেশের পরবর্তী ম্যাচে অর্থাৎ ২০২৫ সালের ২৫ মার্চ এএফসি এশিয়ান কাপ কোয়ালিফিকেশনে ভারতের বিরুদ্ধে হতে পারে হামজার আন্তর্জাতিক অভিষেক।
মায়ের সূত্রে হামজা বাংলাদেশি। জন্ম আর বেড়ে ওঠা ইংল্যান্ডের লিচেস্টারে। লিচেস্টার সিটি ক্লাবের একাডেমিতে দলে তার ফুটবলে হাতেখড়ি মাত্র আট বছর বয়সে। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার কিংবা রাইট ব্যাক পজিশনে খেলতে অভ্যস্ত হামজার পেশাদার ফুটবল অভিষেকও হয়েছে লিচেস্টারে। ২০১৫ সাল থেকে লিচেস্টারের জার্সিতে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ম্যাচের সেঞ্চুরি পূরণ করেছেন বহু আগে। ক্লাবের অধিনায়কত্ব করেছেন এবং জিতেছেন এফএ কাপও। খেলেছেন ইউরোপের দ্বিতীয় সেরা ক্লাব টুর্নামেন্ট ইউরোপা লিগ ও উয়েফা কনফারেন্স লিগ এবং ইংল্যান্ডের বয়সভিত্তিক দলে। এখন আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশের পক্ষে খেলার জন্য তৈরি তিনি। বাফুফের পেজে প্রকাশিত ভিডিও বার্তায় হামজা বলেছেন, ‘আমি বাংলাদেশের পক্ষে খেলতে যাচ্ছি। আশা করি, দ্রুতই দেখা হবে।’
প্রশ্ন হচ্ছে, হামজার অন্তর্ভুক্তি বাংলাদেশের ফুটবল কতটা লাভবান হবে? কোনো সন্দেহ নেই, বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া হামজার রয়েছে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি। হামজার উপস্থিতিতে বাংলাদেশ দল পাবে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার মনোযোগ। তাতে আলোকিত হবে বাংলাদেশে হামজার সতীর্থরা। কিন্তু ফুটবল দলীয় খেলা। হামজার একার পক্ষে বাংলাদেশের ফুটবলের পরিস্থিতি রাতারাতি পাল্টে দেওয়া সম্ভব নয়। তাকে পেতে হবে সতীর্থদের যোগ্য সহযোগিতা। বাংলাদেশের ফুটবলারদের সামনে থাকবে হামজার সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নেওয়ার চ্যালেঞ্জ। হামজা ইউরোপের ফুটবলের পেশাদারিত্ব, লড়াইয়ের শক্তিশালী মানসিকতা আর অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ। তিনিও নানা বিষয়ে সহযোগিতা দিয়ে সমৃদ্ধ করতে পারেন সতীর্থদের।
বাংলাদেশের ফুটবলের মান বর্তমানে নি¤œমুখী। জনপ্রিয়তাও তলানিতে। হামজার কল্যাণে বাংলাদেশের ফুটবল দল দেশীয় দর্শকদের মনোযোগ কাড়বে বলে আশা করা যায়। তিনি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ফুটবলের সবচেয়ে বড় ‘আইকন’ হতে চলেছেন। যেকোনো খেলার জৌলুস নির্ভর করে তারকা খেলোয়াড়দের উপস্থিতির ওপর। জাতীয় দল কিংবা ক্লাব মহিমান্বিত হয়ে ওঠে মহাতারকাদের নামে। এখনো হাঙ্গেরি ফুটবল দলকে সবাই মনে রেখেছে ফেরেংক পুশকাসের জন্য। পেলের কল্যাণে মার্কিন ক্লাব কসমসের নাম সবার কমবেশি জানা। ইন্টার মিয়ামি কিংবা সৌদি আরবের আল নাসরকেই বিশ্বের ক’জন মানুষ চিনতো? শুধু লিওনেল মেসি আর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর উপস্থিতিতে রাতারাতি বদলে গেছে পরিস্থিতি। দুই মহাতারকায় আলোকিত ইন্টার মিয়ামি আর আল নাসরের খেলা দেখার জন্য স্টেডিয়াম তো বটেই, ছোটপর্দায় হুমড়ি খেয়ে পড়ছে কোটি কোটি ভক্ত। হামজার উপস্থিতিতে বাংলাদেশের ফুটবলেরও নবজাগরণের অপেক্ষায় ভক্তরা।