
ক্রিকেটে বাংলাদেশের অর্জন। ছবি: সংগৃহীত
অম্ল-মধুর অভিজ্ঞতায় শেষ হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর। তবে সফরের সমাপ্তি ঘটেছে বাংলাদেশের ইতিহাস গড়া জয়ে। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবার তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছে টাইগাররা। ২০১২ সালে আয়ারল্যান্ডের পর তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে প্রতিপক্ষের মাটিতে ধবলধোলাইয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ।
২২ নভেম্বর শুরু হওয়া বাংলাদেশের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজ শেষ হয়েছে ১-১ সমতায়। পরবর্তী সময়ে ওয়ানডে লড়াইয়ে বাংলাদেশ মুখ থুবড়ে পড়ে স্বাগতিকদের সামনে। তিন ম্যাচের ওয়ানডে লড়াইয়ে ক্যারিবিয়ানরা বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় ডোবায়। কিন্তু টি-টোয়েন্টি সিরিজে অভাবিতভাবে ঘুরে দাঁড়ানো বাংলাদেশ ইতিহাস গড়ে ৩-০ ব্যবধানের জয়ে। তিনটি ম্যাচেই বাংলাদেশ অল-আউট করেছে প্রতিপক্ষকে, যা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বিশ্বরেকর্ড। চলতি বছর ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচে ২৯ উইকেট নিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বাংলাদেশের বড় তারকা হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার সম্ভাবনা দেখিয়েছেন জাকের আলী অনিক। ২০২৩ সালের অক্টোবরে হ্যাংঝাউ এশিয়ান গেমসে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে জাকেরের আন্তর্জাতিক অভিষেক। মার্চে সিলেটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে
টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৩৪ বলে ৬৮ রানের ইনিংস খেলে আলোচনায় উঠে আসেন। তবে পরবর্তী ১৫টি ইনিংসে ফিফটি তো দূরের কথা, ৮ ইনিংসে দুই অঙ্কেই যেতে পারেননি। গত জুনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ৪ ম্যাচ খেলে ১১.৬৬ গড়ে জাকের রান করেছিলেন মাত্র ৩৫! তবু টিম ম্যানেজমেন্ট আস্থা রেখেছে তার ওপর। অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকা আর নভেম্বরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট ও ওয়ানডে অভিষেকও হয়ে যায়। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মিরপুরে অভিষেক টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে করেন ১১১ বলে ৫৮ রান।
জাকের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে জ্বলে উঠেছেন তিন ফরম্যাটে। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ৪ ইনিংসে ৪৪ গড়ে ১৭৬ রান করে হয়েছেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। শেষ টেস্টে তার ৯১ রানের ইনিংস বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয়ে বড় অবদান রেখেছিল। ওয়ানডে সিরিজে ৫৬.৫০ গড়ে ১১৩ রান করে দলের
তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন জাকের। আর টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচে যেন হয়েছে জাকেরের পুনর্জন্ম। প্রথম দুই ম্যাচে ২৭ বলে ২৭, ২০ বলে ২১ করার পর শেষ ম্যাচে খেললেন ৪১ বলে ৩ চার এবং ৬ ছক্কায় অপরাজিত ৭২ রানের ইনিংস। যা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে পাঁচে নেমে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটারের সর্বোচ্চ। জাকেরের বিস্ফোরক ব্যাটিংয়েই ৮০ রানের বিশাল জয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। ম্যাচে জাকেরের ব্যাটিং দেখে মুগ্ধ ক্যারিবীয় ধারাভাষ্যকার নিখিল উত্তামচান্দানি বলছিলেন, ‘ইটস জাকের আলী শো। সুপারস্টার ইন দ্য মেকিং।’
টি-টোয়েন্টি সিরিজে জাকের মেরেছেন ৯টি ছক্কা। যা দ্বিপক্ষীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশের রেকর্ড। ২০২৪ সালে জাকের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে মেরেছেন ২১টি ছক্কা, যা এক পঞ্জিকাবর্ষে বাংলাদেশের পক্ষে যৌথ সর্বোচ্চ। চলতি বছরেই তাওহিদ হৃদয় মেরেছেন সমানসংখ্যক ছক্কা।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে নেতৃত্ব দিয়ে ইতিহাসের অংশ হয়ে রইলেন লিটন। নাজমুল হাসান শান্ত ইনজুরির কবলে পড়ে ছিটকে পড়েন সফর থেকে। লিটনের ওপর বর্তায় সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার ভার। অধিনায়ক হিসেবে সফল হলেও ওপেনার লিটন ছিলেন পুরো ব্যর্থ। তিন ম্যাচে তার ব্যাট থেকে আসে ১৪ রান। দেড় বছর ধরেই সংক্ষিপ্ত সংস্করণে ছন্দে নেই লিটন। সর্বশেষ ২৫ ইনিংসের মধ্যে মাত্র একটিতে ফিফটি ছুঁয়েছে তার ব্যাট। জাতীয় দলের হয়ে ৯৫টি ম্যাচ খেলা লিটনের রানের গড় মাত্র ২২.৪৪- তার পরও বিকল্পের অভাবেই দলে নিয়মিত সুযোগ মিলছে তার।
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। আপাতত বাংলাদেশের কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ নেই। ৩০ ডিসেম্বর মাঠে গড়াচ্ছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ক্রিকেট।