
ক্রীড়াঙ্গনের কীর্তিমানরা। ছবি: সংগৃহীত
২০২৪ সাল ছিল বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে নক্ষত্র পতনের বছর। বাংলাদেশ হারিয়েছে ফুটবলের কিংবদন্তি জাকারিয়া পিন্টুকে। গ্র্যান্ডমাস্টার দাবাড়ু জিয়াউর রহমানের বিদায়টাও মেনে নেওয়ার মতো ছিল না। ২০২৪ সালকে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের মহীরুহ বিদায়ের বছর বললেও ভুল হবে না।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে পাকাপাকিভাবে জড়িত স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের নাম। ১৯৭১ সালে একদল ফুটবলযোদ্ধা বিদেশের মাটিতে উড়িয়েছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা। সেই দলের অকুতোভয় অধিনায়ক ছিলেন জাকারিয়া পিন্টু। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় দলকেও নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। তার অধিনায়কত্বে ১৯৭৩ সালে মালয়েশিয়ার মারদেকা কাপে অংশ নেয় স্বাধীন বাংলাদেশ। তিনি ছিলেন ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব এবং বাংলাদেশের ফুটবলের কিংবদন্তি। ১৮ নভেম্বর ৮১ বছর বয়সে তিনি পাড়ি জমিয়েছেন অনন্তলোকে।
২০২৪ সালে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অনেকেই চিরবিদায় নিয়েছেন। যাদের একজন সাইদুর রহমান প্যাটেল। ৮ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াইরত প্যাটেল শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ১৯৫১ সালের ৭ অক্টোবর ঢাকার কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদে জন্ম নেওয়া প্যাটেল ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাও। ছিলেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অন্যতম সংগঠক। ২৯ জুলাই চলে যান আমিনুল ইসলাম সুরুজ। ৭ ডিসেম্বর মারা যান স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অন্যতম ফজলে সাদাইন খোকন।
সদ্যই পঞ্চাশে পা রেখেছিলেন ২০০২ সালে গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব পাওয়া বাংলাদেশি দাবাড়ু জিয়াউর রহমান। ৫ জুলাই জাতীয় দাবা প্রতিযোগিতায় লড়াই করছিলেন গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হক রাজীবের বিরুদ্ধে। খেলতে খেলতেই অজ্ঞান হয়ে লুটিয়ে পড়েন। হাসপাতালে নেওয়ার পর রেকর্ড ১৪ বারের জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়নকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। মুহূর্তে ক্রীড়াঙ্গনে নেমে আসে শোকের ছায়া। বাংলাদেশি দাবাড়ুদের মধ্যে সর্বোচ্চ ২৫৭০ ফিদে রেটিং ছিল তার। ১৯৭৪ সালের ১ মে পৃথিবীর আলো প্রথম দেখেছিলেন জিয়া। প্রয়াত জিয়ার সন্তান তাহসিন তাজওয়ার বাবার মতোই গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার স্বপ্ন বুকে নিয়ে দাবা অঙ্গনে এগিয়ে চলেছেন।
১৯৯০ সালে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে কমনওয়েলথ গেমসে ইতিহাস গড়েছিলেন আতিকুর রহমান। ১০ মিটার এয়ার পিস্তল ইভেন্টে আবদুস সাত্তার নিনির সঙ্গে জুটি বেঁধে সোনার পদক জিতেছিলেন তিনি। আতিকুর ১৯৯৩ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাফ গেমস ও ১৯৯৫ সালে মাদ্রাজ (এখন চেন্নাই) সাফ গেমসেও দেশকে সোনার পদক উপহার দিয়েছিলেন। সাফ গেমসে তিনি পাঁচটি সোনা জিতেছেন। বাংলাদেশের শ্যুটিংকে পাদপ্রদীপের আলোয় আনার অন্যতম কৃতিত্ব আতিকুরের। ১৭ জুলাই মাত্র ৫৯ বছর বয়সে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত শ্যুটার।
২০১০ সালে কমনওয়েলথ আরএসএ গেমসে বাংলাদেশকে সোনার হাসি উপহার দেওয়া শ্যুটার সাদিয়া সুলতানাও আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন ২ ডিসেম্বর।
১৮ জুন ক্যান্সারের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই শেষে হার মানেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কোচ জাফরুল এহসান। ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের প্রধান কোচ ছিলেন জাফরুল। জাতীয় নারী দলের প্রধান কোচ ছিলেন ২০০৭ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত।
সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে ১৪ মার্চ মারা যান সাফজয়ী নারী ফুটবলার রাজিয়া খাতুন। ৮ জুলাই মাত্র ২৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৪ ও অনূর্ধ্ব-১৬ জাতীয় নারী ফুটবল দলে খেলা মিথিলা আক্তার। বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক মো. মহসিন। একাধারে জাতীয় দল আর দেশসেরা মোহামেডান এবং আবাহনীর হয়ে খেলা মহসিন পেয়েছিলেন মেগাস্টার খ্যাতি। ২৬ জুলাই ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীর বাসা থেকে বের হয়ে ফিরে আসেননি আর। বর্তমানে মহসিন কোথায়, কী অবস্থায় আছেন, তা জানেন না পরিবারসহ ক্রীড়াঙ্গনের কেউ। সবাই আশা করছে, মহসিন ফিরে আসবেন। আমরাও আশা করছি, কিংবদন্তি মহসিন ফিরে আসুক। কোন দুঃসংবাদ মহসিনকে নিয়ে পেতে চাই না।