Logo
×

Follow Us

খেলাধুলা

বিদায় তামিম, বিদায় সাকিব

Icon

আহসান হাবীব সুমন

প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:১৪

বিদায় তামিম, বিদায় সাকিব

তামিম ইকবাল খান ও সাকিব আল হাসান।

সাকিব আল হাসান ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন। তামিম ইকবাল খান বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা ওপেনার। দুজনই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখেছিলেন প্রায় একই সময়ে। সাকিবের বাংলাদেশের হয়ে পথচলা শুরু ২০০৬ সালের আগস্টে। জিম্বাবুয়ের মাটিতে এক দিনের সিরিজ দিয়ে।

তামিমের অভিষেকও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে। পরবর্তী সময়ে দীর্ঘ প্রায় দেড় দশক সাকিব আর তামিম কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছেন বাংলাদেশের হয়ে। কাকতালীয়ভাবে ক্রিকেট থেকে সাকিব আর তামিমের বিদায়টাও হলো একই সময়ে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তান আর সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাটিতে অনুষ্ঠিত হবে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। সাকিবকে নেওয়া হয়নি টাইগার স্কোয়াডে। তামিম স্কোয়াড ঘোষণার আগেই বিদায় জানিয়েছেন জাতীয় দলকে।

তামিম ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের হয়ে সর্বশেষ মাঠে নেমেছিলেন। সাকিব ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট খেলার পর বাংলাদেশের জার্সি গায়ে চাপাননি। ভারত সফরেই টেস্ট আর টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান তিনি। তবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলেই এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর প্রত্যাশায় ছিলেন। কিন্তু নাটকীয়ভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষিদ্ধ হয়েছে সাকিবের বোলিং। ইংলিশ কাউন্টিতে খেলতে গিয়ে বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহের মুখে পড়েছিলেন তিনি। আম্পায়ারদের সন্দেহে তাকে বোলিং পরীক্ষা দিতে হয় বার্মিংহামের লাফবরো ইউনিভার্সিটির মেডিক্যাল বিভাগ এবং ভারতের চেন্নাইতে আইসিসি অনুমোদিত শ্রী রামচন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেকানিক্স ল্যাবে। দুটি পরীক্ষায়ই সাকিবের বিপক্ষে রায় এসেছে। জানা গেছে, চেন্নাইয়ে বোলিং পরীক্ষায় সাকিবের কনুই ২৫ ডিগ্রি বা তার বেশি ভেঙেছে। আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, একজন বোলার সর্বোচ্চ ১৫ ডিগ্রি পর্যন্ত তার কনুই বাঁকাতে পারবেন। তাই বোলিং অ্যাকশন শুধরে নেওয়ার পরীক্ষায় পাস না করা পর্যন্ত সাকিব আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বোলিং করতে পারবেন না।

সাকিবকে শুধু ব্যাটার হিসেবে দলে নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর নেতৃত্বাধীন নির্বাচক কমিটি। তাতে সাকিবের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারেরও ইতি ঘটেছে বলা যায় নিশ্চিতভাবে। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক সংসদ সদস্য হিসেবে সাকিবের বাংলাদেশে ফেরায় রয়েছে ঝুঁকি। খেলছেন না চলমান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেও। সাকিব আর তামিমের বিদায় বাংলাদেশের ক্রিকেটের একটি সফল যুগের অবসান। সাকিব তো ইতিহাসের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটে অলরাউন্ডার হিসেবে আইসিসি র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষস্থান দখল করে গড়েন অনন্য নজির। এখনো তিনি ক্রিকেটের তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ৭০০০ রান আর ৩০০ উইকেট দখলকারী একমাত্র ক্রিকেটার। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও সাকিব প্রথম ১০০০ রান আর ১০০ উইকেটের মালিক হয়েছেন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৫০ উইকেট আর টেস্টে দ্রুততম ৪০০০ রান এবং ২০০ উইকেট দখলের অনেক রেকর্ডের মালিক সাকিব।

তামিমও কম যাননি। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৫ হাজার রান করার কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। টেস্টে ওপেনারদের মধ্যে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ৫১৩৪ রান তার। তামিম বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটার, যিনি টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি তিন ফরম্যাটেই সেঞ্চুরি করেছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে ১১৯টি হাফসেঞ্চুরির মালিকও তামিম। ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে ছক্কার সেঞ্চুরি আর ৮০০০ রানের মাইলফলক গড়েন। তামিম ২০০৮ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেন।

তামিমের বিদায়টা রাজসিক না হলেও সম্মানের সঙ্গে হচ্ছে। তিনি এখনো দেশের ক্রিকেটে জনপ্রিয়তার শীর্ষে। কিন্তু ক্যারিয়ার-জুড়ে নানা বিতর্কের জন্ম দেওয়া সাকিব বিদায়বেলায়ও রেখে যাচ্ছেন কালোদাগ। তার নামের সঙ্গে জড়িয়েছে সন্দেহজনক বোলিং অ্যাকশন আর রাজনৈতিক বিতর্ক। খোদ বাংলাদেশে সাকিবের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে। তবে অস্বীকার করার উপায় নেই, সাকিব আর তামিম দুজনই বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় তারকা। রেকর্ড যার সাক্ষী দেবে যুগ যুগ ধরে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫