
মাঠে মেজাজ হারান তামিম ইকবাল খান। ছবি: সংগৃহীত
চলমান ১১তম বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ক্রিকেটের খেলা মাঠে গড়িয়েছিল ৩০ ডিসেম্বর। যদিও ২৩ ডিসেম্বর জাঁকজমকপূর্ণ মিউজিক ফেস্টের মাধ্যমে বিপিএলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি বলেছিলেন, ‘নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে দেশের প্রতিটি সেক্টরে সংস্কার চলছে। বিপিএলকেও আধুনিক এবং দর্শকপ্রিয় করার লক্ষ্যে নতুনভাবে সাজানো হয়েছে।’
সত্যি কি ২০২৪-২৫ মৌসুমের বিপিএল নতুন কিছু উপহার দিতে পেরেছে? এক কথায় উত্তর হচ্ছে, না। বরং বিপিএল ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে নানামুখী বিতর্ক। দুরন্ত রাজশাহী নামের ফ্রেঞ্চাইজির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে ক্রিকেটারদের ঠিকমতো পারিশ্রমিক না দেওয়া, দৈনিক ভাতা প্রদান না করা, এমনকি কিট ব্যাগ থেকে শুরু করে প্রস্তুতির জন্য জার্সির ব্যাপারে অব্যবস্থাপনার। পাওনা টাকা না পেয়ে বিদেশি ক্রিকেটারদের অনুশীলন আর ম্যাচ বয়কটের মতো নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে। খোদ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি ফারুক আহমেদ জানিয়েছেন, ‘রাজশাহী যা করছে, সেটা বিপিএলের মতো একটা টুর্নামেন্টকে ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট।’
বিপিএলে ম্যাচ ফিক্সিং নিয়েও উঠেছে মারাত্মক অভিযোগ। আন্তর্জাতিক বেটিং নজরদারি একটি সংস্থার তদন্তে জানা গেছে যে, পুরো টুর্নামেন্টের আটটি ম্যাচে ফলাফল পূর্বনির্ধারিত ছিল এবং অন্তত ১০ জন খেলোয়াড় ম্যাচ ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জড়িত! বোলারদের অস্বাভাবিক ডেলিভারি, ইচ্ছাকৃত নো বল এবং ওয়াইড বোলিংয়ের মতো ঘটনাগুলো ফিক্সিংয়ের সম্ভাবনা উসকে দেয়। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের অধীনে অ্যান্টি-করাপশন ইউনিট (আকসু) এই ম্যাচগুলো নিয়ে তদন্ত করবে।
ম্যাচ ফিক্সিং বিতর্কে বিসিবি সভাপতি ফারুক জানিয়েছেন, ‘যদি আমরা এমন কিছু (ফিক্সিং) খুঁজে পাই, তাদের জীবন অন্য রকম হয়ে যাবে, কারণ আমি দোষীদের কোনো সুযোগ দেই না।’ বিপিএলে ম্যাচ ফিক্সিং নতুন কোনো ঘটনা না। ২০১২ সালে বিপিএলের এক ম্যাচে স্পট ফিক্সিংয়ের জন্য দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর শরিফুল হক প্লাবনকে আজীবন নিষিদ্ধ করা হয়। ২০১৩ সালে ম্যাচ ফিক্সিং কাণ্ডে পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞায় ক্যারিয়ার শেষ হয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রথম সুপারস্টার মোহাম্মদ আশরাফুলের।
চলমান বিপিএল নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে প্রথম থেকে। বুথে টিকিট না পেয়ে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের গেটে ভাঙচুর চালায় দর্শকরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে মোতায়েন করতে হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। এ ছাড়া আলোচনায় উঠে আসে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল ও ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, বিশেষ করে বিসিবি সভাপতি ও পরিচালকের কথার লড়াই। তামিম ইকবাল আর সাব্বির রহমানের মতো সিনিয়র ক্রিকেটার মাঠে তর্কে জড়িয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন।
নানামুখী বিতর্কে বিপিএলকে নতুনভাবে জনপ্রিয় আর সাজানোর পরিকল্পনা ধাক্কা খেয়েছে সন্দেহ নেই। এ বিষয়ে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ বলেন, ‘অনেক কিছুতে সমন্বয় ঠিকমতো হয়নি। এনএসসিতে (জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ) একটা সত্যানুসন্ধান কমিটি করা হয়েছে। তারা দেখবে ভুলগুলো কোথায় কোথায় ছিল। তারা খুঁজে বের করবে ভুল কোথায় কোথায় ছিল। এবারের বিপিএলে শেখার ছিল অনেক, ভবিষ্যতে আশা করি আরো ভালো করতে পারব।’