একুশে পদক এবং নারী ফুটবলের অনিশ্চিত গতিপথ

আহসান হাবীব সুমন
প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০১

নারী ফুটবল দল। ছবি: সংগৃহীত
২০২২ আর ২০২৪ সালে টানা দুটি সাফ শিরোপা জয়ে পুরো বাংলাদেশকে উচ্ছ্বাসে ভাসিয়েছে জাতীয় নারী ফুটবল দল। ২০২৫ সালে নারী ফুটবল দলকে দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘একুশে পদক’। দল হিসেবে একুশে পদক পাওয়ার ঘটনা বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে প্রথম। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের নারী ফুটবল নিয়ে স্বপ্নটা বিস্তৃত হচ্ছে ক্রমেই। কিন্তু হঠাৎ করেই ছন্দঃপতন। কোচ পিটার বাটলারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমে এবং বিনা নোটিশে অনুশীলন বয়কট করে নারী ফুটবলাররা পড়েছে সমালোচনার মুখে।
এর আগে নারীরা বেতন-ভাতাসহ নানা সুযোগ-সুবিধা আদায়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে, যা ছিল খুবই যৌক্তিক। কিন্তু বর্তমানে কোচের বিরুদ্ধে নারী ফুটবলারদের অসহযোগ দেখা হচ্ছে বাড়াবাড়ি হিসেবে। গুরু বাটলারের বিরুদ্ধে সাবিনা খাতুনদের মূল অভিযোগ- সিনিয়র খেলোয়াড়দের বাদ দিয়ে নতুনদের ওপর আস্থা রাখা, ফিটনেস আর নিয়মানুবর্তিতার ওপর জোর দেওয়া। আর যাই হোক, এসব অভিযোগে কোচের অপসারণ দাবি কিংবা অনুশীলন বয়কট করা যায় না বলেই মনে করেন ফুটবলসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তবে বাফুফেও দায় এড়াতে পারবে না। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ থেকেই কোচ-খেলোয়াড় দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য। সমস্যাকে গুরুত্ব না দিয়ে বাফুফে পিটার বাটলারকে দুই বছরের জন্য নিয়োগ দিয়েছে। এখন কোচ ও খেলোয়াড়দের দ্বন্দ্ব নিয়েছে কদর্য রূপ। এতে সামগ্রিক ক্রীড়াঙ্গনের ভাবমূর্তিও পড়েছে সংকটের মুখে।
এরই মধ্যে নারী ফুটবলের সংকট নিয়ে গঠিত সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দিয়েছে। তাতে কোচ বাটলারের বিরুদ্ধে নারী ফুটবলারদের অভিযোগের সত্যতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এরই মধ্যে বাফুফের প্রেসিডেন্ট তাবিথ আউয়াল আর নারী উইংসের প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরণ মেয়েদের আহ্বান জানিয়েছেন অনুশীলনে ফিরতে। খেলোয়াড়রা সাড়া দেননি। ইংলিশ কোচ বয়সভিত্তিক দলের খেলোয়াড়দের নিয়ে অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, সিনিয়র খেলোয়াড়রা না ফিরলে নতুনদের নিয়ে চলতি মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাবেন নারীরা। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ নারীদের ম্যাচ রয়েছে আমিরাতে। জুনে রয়েছে এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাই।
নারীদের বিদ্রোহে সমালোচনার মুখে পড়েছেন অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। যিনি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা নারী ফুটবলার। দুটি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। জাতীয় দলের হয়ে তার গোলের সংখ্যা ৩৬টি। সাতক্ষীরা জেলা, বাংলাদেশ ভিডিপি, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, শেখ জামাল ধানমন্ডি, বসুন্ধরা কিংস ছাড়াও মালদ্বীপ আর ভারতের একাধিক দলে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। সেখানেও করেছেন প্রায় ৩৫০ গোল। বাংলাদেশের যেকোনো পর্যায়ের ফুটবলে সাবিনার চেয়ে বেশি গোল কারো নেই। অনেকেই সাবিনাকে বাংলাদেশের মেসি নামেও ডাকে। কিন্তু কোচের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সাবিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে দলে নিজের জায়গা আর অধিনায়কত্ব পাকা রাখতেই তিনি আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। যদিও সাবিনা পুরো বিষয় অস্বীকার করে জানিয়েছেন, ‘আট বছর ধরে অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ড পরে আছি। দুটি সাফ জিতেছি। আমাদের দলটি প্রথমবারের মতো একুশে পদক পেয়েছে। এখন নতুনদের হাতে দায়িত্ব দিতে চাই। আর আন্দোলনে আমার ভূমিকা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। জাতীয় দলের সবাই প্রাপ্তবয়স্ক। নিজের ভালো-মন্দ বুঝতে পারার মতো বয়স হয়েছে। ওরা আমার মতো এই ইস্যুতে একমত। তাই সবাই মিলে আন্দোলন করে যাচ্ছি।’
ইংলিশ কোচ পিটার বাটলারকে নিয়েও নানা অভিযোগ উঠে আসছে। ২০১২ সালে মালয়েশিয়ার তেরেঙ্গানু এফএ ক্লাবের কোচ থাকাকালে নির্ধারিত চুক্তি শেষ হওয়ার ছয় মাস আগে বরখাস্ত হয়েছিলেন। তিনি তার দলের গোলরক্ষককে কোনো প্রমাণ ছাড়াই ম্যাচ পাতানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করেছিলেন। ২০১৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বাটলার ছিলেন লাইবেরিয়ার জাতীয় দলের কোচ। লাইবেরিয়া জাতীয় দল গড়তে ২০২১ সালে পক্ষপাতিত্ব করেছিলেন বাটলার। কোনো নিয়মনীতি ও স্বচ্ছতার তোয়াক্কা না করে লাইবেরিয়া ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এলএফএ) কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের ক্লাবের ফুটবলারদের নিয়ে জাতীয় দল গড়েন তিনি। এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয় লাইবেরিয়ার লিব ব্লেচার স্পোর্টস-এ ২০২১ সালের ৫ জুন।