আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির লড়াই শুরু হচ্ছে ১৯ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলতে দেখা যাবে না তামিম ইকবাল খানকে। ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা ওপেনার নিজেই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানার ঘোষণা দেন। তবে ২০২৩ সালের জুলাইয়েও আফগানিস্তান সিরিজের মধ্যে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে মনোমালিন্যের জেরে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন তামিম। আবার ফিরেও এসেছিলেন। এরপর ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি ওয়ানডে খেলার পর আর তাকে দেখা যায়নি জাতীয় দলে।

বাংলাদেশ দলে তামিমের প্রত্যাবর্তন নিয়ে ছিল নানা জল্পনা-কল্পনা। আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বিসিবি (বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড) নির্বাচকদের বিবেচনায় ছিলেন তিনি। থাকবেন না কেন? তিনি তো টেস্ট আর ওয়ানডে ক্রিকেটকে বিদায় জানাননি। তা ছাড়া সদ্যঃসমাপ্ত বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ক্রিকেটে দুর্দান্ত ছন্দে ছিলেন তামিম। ফরচুন বরিশালের হয়ে ১৪ ম্যাচে ৩৭.৫৪ গড়ে চারটি হাফ সেঞ্চুরিসহ করেছেন ৪১৩ রান, যা টুর্নামেন্টের চতুর্থ সর্বোচ্চ। ৭ ফেব্রুয়ারি মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে চট্টগ্রাম কিংসের ছুড়ে দেওয়া ১৯৪ রানের টার্গেট ছাপিয়ে ৩ উইকেটের জয় পায় বরিশাল, যা বিপিএল ফাইনালে সর্বোচ্চ রান তাড়ায় জয়ের নতুন রেকর্ড। আর সেই জয়ের নায়ক ছিলেন স্বয়ং অধিনায়ক তামিম। তিনি খেলেছেন ২৯ বলে ৫৬ রানের অনবদ্য ইনিংস।

বিপিএলের মাঝপথে আসে তামিমের চূড়ান্ত অবসর ঘোষণা। ২০২২ সালের জুলাইয়ে টি-টোয়েন্টিকেও ‘গুডবাই’ জানিয়ে এসেছেন। তাই নিশ্চিতভাবেই তামিমের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ। বিপিএল ফাইনাল শেষে বিসিবি তরফে তামিমকে বিদায়ি সংবর্ধনাও দেওয়া হয়েছে। হাতে তুলে দেওয়া হয় তার ক্যারিয়ারের দীর্ঘ পরিসংখ্যানসংবলিত স্মারক জার্সি ও ক্রেস্ট। 

২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় তামিমের। তিন সংস্করণ মিলে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের জার্সিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৮৭ ম্যাচ ও ৪৪৮ ইনিংসে ১৫ হাজার ১৯২ রান করেছেন। ১৭ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বাংলাদেশের হয়ে তামিম গড়েছেন নানা রেকর্ড। ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই সেঞ্চুরি করা বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র ব্যাটার তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৫ হাজার রান করা প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটারও তিনি। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে তামিমের সেঞ্চুরি ২৫টি; বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ। এ ছাড়া তার রয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৯৪টি হাফ সেঞ্চুরি। ওয়ানডেতে আট হাজার রান করা একমাত্র বাংলাদেশি ব্যাটার তামিম। টিম টাইগারদের পক্ষে ওয়ানডেতে ছক্কার সেঞ্চুরি করা প্রথম ব্যাটার তামিম। এমনকি ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে কম বয়সে সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েন তামিম। ২০০৮ সালে ১৯ বছর দুই দিন বয়সে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২২ বার ম্যাচ সেরা হয়েছেন তামিম। তার উপরে আছেন শুধুই সাকিব, তিনি হয়েছেন ৪৫ বার। তামিম সিরিজ সেরা হয়েছেন সাতবার, এখানেও তামিমের উপরে আছেন সাকিব, সিরিজ সেরা হয়েছেন ১৭ বার।

তামিমের বিদায়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটের একটি অবিস্মরণীয় অধ্যায়ের ইতি ঘটেছে। তবে ৩৫ বছরের তামিম পুরোপুরি ক্রিকেট থেকে দূরে থাকছেন, এমন নয়। তিনি ঘরোয়া ক্রিকেট চালিয়ে যাবেন।