Logo
×

Follow Us

খেলাধুলা

কবে ভুল থেকে শিক্ষা নেবে বাংলাদেশ

Icon

আফসার হোসেন

প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২৫, ১১:১০

কবে ভুল থেকে শিক্ষা নেবে বাংলাদেশ

বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ছবি: সংগৃহীত

১৯ ফেব্রুয়ারি ‘হাইব্রিড’ মডেলে পাকিস্তান আর সংযুক্ত আরব আমিরাতে শুরু হয়েছে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির নবম আসর। আট দলের টুর্নামেন্টে অংশ নিতে যাওয়ার আগে বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বলেছিলেন, ‘আমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে যাচ্ছি। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের দলের এই সক্ষমতা আছে।’  

শান্তর কথায় আস্থা রাখেনি বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা। বরং টাইগার অধিনায়কের বক্তব্যে হাস্যরসের বন্যা বয়ে গেছে দেশজুড়ে। এমনকি লিটন দাসকে বাদ দেওয়া এবং টানা অফ ফর্মে থাকা শান্তকে অধিনায়ক করায় সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচকরা। সবাই আশঙ্কা করেছিলেন, চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভরাডুবি ঘটবে বাংলাদেশের। শেষ পর্যন্ত আশঙ্কা সত্যি হয়েছে। ২০ ফেব্রুয়ারি ভারতের কাছে ৬ উইকেটে হেরেছে শান্তর বাংলাদেশ। ২৪ ফেব্রুয়ারি নিউজিল্যান্ডের কাছে বাংলাদেশের আত্মসমর্পণ ৫ উইকেটে। তাতে চার দলের গ্রুপপর্ব থেকে ছিটকে গেছে বাংলাদেশ। ২৭ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের লড়াই স্রেফ নিয়ম রক্ষার। ভারতের বিপক্ষে দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের ইনিংস গুটিয়ে যায় ২২৮ রানে। দ্বিতীয় ম্যাচে রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ পুরো ৫০ ওভার খেলেও ৯ উইকেটে ২৩৬ রানে আটকে যায়। বাংলাদেশের ইনিংসে ডট বল ছিল ১৮১টি! ভাবা যায়, ৫০ ওভারের ম্যাচে ৩০ ওভারের বেশি গেছে ডট বলের হিসেবে? বাংলাদেশের ব্যাটাররা ওয়ানডে নাকি টেস্ট খেলতে নেমেছিলেন, নিজেরাই ভুলে গেছিলেন হয়তো!

ভারতের বিপক্ষে কোনো রান না পাওয়া সৌম্য সরকার, শান্ত, মুশফিকুর রহিমদের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসা ছিল শিক্ষানবিশদের মতো। ম্যাচে ১১৮ বলে ১০০ রান করেন তাওহীদ হৃদয়। এ ছাড়া ১১৪ বলে ৬৮ রান করেন জাকের আলী। ৩৫ রানে পাঁচ উইকেট পতনের পর ১৫৪ রান যোগ করেন দুই মিডল অর্ডার। ষষ্ঠ উইকেটে গড়েন চ্যাম্পিয়নস ট্রফির রেকর্ড জুটি। বাংলাদেশের পক্ষেও এক দিনের ক্রিকেটে উইকেটে সর্বোচ্চ ষষ্ঠ উইকেট জুটি এটি।

ভারতের বিপক্ষে ষষ্ঠ উইকেটে রেকর্ড জুটি সত্ত্বেও বাংলাদেশের ইনিংস বড় হয়নি টপ-অর্ডার ব্যর্থতায়। প্রথম পাওয়ার প্লেতে পাঁচ উইকেট হারানোর ধাক্কা সামাল দেওয়া যায়নি। ভাগ্যের সহায়তাও পেয়েছে বাংলাদেশ। জাকের আর হৃদয় পেয়েছে একাধিক জীবন। অল্প পুঁজি নিয়ে ভারতের বিখ্যাত ব্যাটিং লাইনআপকে আটকে রাখা যায়নি। শুভমান গিলের অপরাজিত ১০১ রানের সুবাদে ভারত জয় পায় ৬ উইকেটে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে বাদ পড়েছেন সৌম্য। ফিরেছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ রিয়াদ ৪ আর মুশফিক ২ রানে বিদায় নিয়ে প্রমাণ করেছেন তাদের বয়স হয়েছে। মুশফিকের আউট দেখে তো ধারাভাষ্যকার ইয়ান স্মিথ পর্যন্ত বলে উঠেছেন, ‘এত অভিজ্ঞ ব্যাটার কি আশ্চর্য শটে আউট!’ একই ম্যাচে শান্ত বাংলাদেশের প্রথম  অধিনায়ক হিসেবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে হাফসেঞ্চুরি (১১০ বলে ৭৭ রান) করেছেন। জাকের আলী ৫৫ বলে ৪৫ রান করেন। দুবাই আর রাওয়ালপিন্ডিতে ছিল একই গল্পের পুনরাবৃত্তি! ব্যাটাররা খাবি খেয়েছেন। ভুল করেছেন। ভারতের শামি পাঁচটি আর কিউই মিচেল ব্রেসওয়েল টাইগারদের বিপক্ষে নিয়েছেন ৪ উইকেট। পক্ষান্তরে দুই ম্যাচে তিন উইকেট পেয়েছেন রিশাদ। দুটি করে উইকেট তাসকিন আহমেদ আর মোস্তাফিজুর রহমানের। মোস্তাফিজ এখন শুধু নামেই ‘কাটার মাস্টার’। ভারতের সেঞ্চুরিয়ান গিলকে ৪৭ রানে সুযোগ পেয়েও রান আউট করাতে ব্যর্থ হয়েছেন শান্ত। টাইগার অধিনায়ক রাহুলকেও দিয়েছেন ক্রিজে টিকে থাকার সুযোগ। রাহুলের ক্যাচ ছেড়েছেন জাকের আলী।

চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশের পুরোনো রোগ ফিরে এসেছে। ব্যাটিং, বোলিং আর ফিল্ডিংয়ে একসঙ্গে জ্বলে উঠতে না পারা, এলোমেলো শটে অভিজ্ঞ ব্যাটারদের উইকেট বিলিয়ে আসা, প্রয়োজনের সময় রান আউট কিংবা স্ট্যাম্পিং আর ক্যাচের সুযোগ নষ্ট করার মতো রোগ রয়ে গেছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ যে অতীত থেকে শিক্ষা নিতে পারেনি, সেটা প্রমাণ হয়েছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫