Logo
×

Follow Us

খেলাধুলা

বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে নারী

Icon

আহসান হাবীব সুমন

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৫, ১০:৫৯

বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে নারী

ক্রীড়াঙ্গনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চেষ্টা করছে নারীরা।

একদা অবগুণ্ঠনে নিজেদের আড়াল করে রাখা বাঙালি নারীরা সমাজের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চেষ্টা করছে ক্রীড়াঙ্গনে। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল জিতেছে টানা দুটি সাফ শিরোপা। ইতিহাসের প্রথম ক্রীড়াদল হিসেবে অর্জন করেছে ‘একুশে পদক’। ২০১৮ সালে নারীরা জয় করে ক্রিকেটের এশিয়া কাপ। ২০১৯ সালে এসএ গেমসে নারী ক্রিকেটের প্রথম অন্তর্ভুক্তিতেই বাঘিনীরা পেয়েছে স্বর্ণ।

দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটি খেলা নারীদের সাফল্যে ভাস্বর। আন্তর্জাতিক মাস্টার রাণী হামিদ ৮০ বছর বয়সেও মাতাচ্ছেন দাবাবিশ্ব। ২০২৪ সালে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে বিশ্ব দাবা অলিম্পিয়াডে টানা ছয়টি ম্যাচ জিতে তাক লাগিয়েছেন। তার ঝুলিতে রয়েছে ব্রিটিশ নারী দাবা চ্যাম্পিয়নশিপের তিনটি শিরোপা। ২০১৭ সালে দিল্লিতে জিতেছেন কমনওয়েলথ দাবায় স্বর্ণপদক। ২০১৮ সালে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত দাবা বিশ্বকাপে ‘জার্নালিস্ট চয়েজ অ্যাওয়ার্ড’ জিতেছেন। জাতীয় দাবায় সর্বাধিক ২০টি শিরোপার মালিক রাণী। জোবেরা রহমান লিনু ১৯৭৭-২০০১ সাল পর্যন্ত ১৬ বার জাতীয় টেবিল টেনিস প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নাম লিখিয়েছেন ‘গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড’-এ। ১৯৯৭ সালে কমনওয়েলথ শ্যুটিংয়ে স্বর্ণজয়ের ইতিহাস গড়েন শ্যুটার সাবরিয়া সুলতানা। ২০১০ সালে কমনওয়েলথ গেমসে স্বর্ণ জিতেছিলেন সাদিয়া সুলতানা আর শারমিন রত্ন জুটি। ২০২১ সালে বিশ্বকাপ আর্চারির স্টেজ-২ রিকার্ভে রোমান সানার সঙ্গে জুটি বেঁধে রৌপ্য জেতেন দিয়া সিদ্দিকী।

১৯৯২ সালে বার্সেলোনা অলিম্পিক গেমসে অংশ নেওয়া কাজী শাহানা পারভীন প্রথম বাংলাদেশি নারী অলিম্পিয়ান। শ্যুটার শাহানা ১৯৯২ সালে কলম্বো সাফ গেমসে গড়েন বাংলাদেশের নারীদের প্রথম আন্তর্জাতিক স্বর্ণজয়ের রেকর্ড। ২০১৯ সালের সাউথ এশিয়ান গেমসে আর্চারির ইতি খাতুন ব্যক্তিগত, দলীয় ও মিশ্র দলগত ইভেন্টে বাংলাদেশের প্রথম নারী ক্রীড়াবিদ হিসেবে তিনটি স্বর্ণজয় করেন। ২০১৬ সালে এসএ গেমসে প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে জোড়া স্বর্ণ এনে দেন সাঁতারু মাহফুজা খাতুন শিলা। এসএ গেমসে শাহানা ছাড়া সাতজন নারী শ্যুটার সোনা জিতেছে- ফারজানা হোসেন, সাবরিনা সুলতানা, লাভলী চৌধুরী, শারমিন আক্তার, শারমিন আক্তার (রত্ন), সৈয়দা সাদিয়া সুলতানা ও তৃপ্তি দত্ত। কারাতেতে মুন্নী খানম, জ উ প্রু, উসাইনু মারমা, মরিয়ম খাতু‌ন, মারজানা আক্তার প্রিয়া, হুমায়রা আক্তার অন্তরা; তায়কোয়ান্দোতে শারমিন ফারজানা রুমি ও শাম্মি আক্তার, উশুতে ইতি ইসলাম, ফেন্সিংয়ে ফাতেমা মুজিব ও ভারোত্তোলনে মাবিয়া আক্তার সীমান্ত স্বর্ণপদক জয়ের কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। আর্চারিতে দলগত আর মিশ্র ইভেন্টে সোনা এনে দিয়েছেন সুস্মিতা বণিক, সুমা বিশ্বাস আর শ্যামলী রায়।

বাংলাদেশের একমাত্র ক্রীড়াবিদ হিসেবে টানা তিনটি অলিম্পিকে অংশ নিয়েছেন সাঁতারু ডলি আক্তার। ২০০০ সালে সিডনি অলিম্পিকে মাত্র ১৫ বছর বয়সে অংশ নেন ডলি। তিনি অলিম্পিকে বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ ক্রীড়াবিদ। মেয়েরা চ্যালেঞ্জিং আর ঝুঁকিপূর্ণ খেলাতেও অংশ নিচ্ছে। বাংলাদেশের প্রথম নারী বক্সার তামান্না হক বর্তমানে কমব্যাট স্পোর্টসে নিজেকে জড়িয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় ম্যান্ডেলা কাপে গোল্ড জিতেছেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশি বক্সার জিনাত ফেরদৌস। দেশের প্রথম নারী হিসেবে আন্তর্জাতিক কার রেসিং প্রতিযোগিতায় (ভিয়েতনামের হ্যানয়ে এশিয়ান অটো জিমখানা চ্যাম্পিয়নশিপ) অংশ নিয়ে ইতিহাস গড়েছেন কাশফিয়া আরফা। সত্তর-আশির দশকে বাংলাদেশের প্রথম নারী ক্রিকেট এবং হকি দলের সদস্য ছিলেন পারভিন নাসিমা নাহার পুতুল। নারী দলের সহকারী কোচ হিসেবে ২০০৭ সাল থেকে সালমা খাতুনের মতো ক্রিকেটার অন্বেষণে রেখেছেন ভূমিকা।  

সন্দেহ নেই, খেলাধুলায় বাংলাদেশের নারীরা দ্রুত অগ্রসরমাণ। অথচ নারীদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণ কণ্টকমুক্ত নয়। নারী ফুটবলারদের হাফপ্যান্ট পরে খেলার অপরাধে হেনস্তা কিংবা জয়পুরহাটে ম্যাচ আয়োজনের আগে হামলার মতো ঘটনা অতিসম্প্রতি ঘটছে। নারী ক্রীড়াবিদদের যেকোনো খেলায় পারিশ্রমিকেও রয়েছে বৈষম্য। কিছু সার্ভিসেস দল ছাড়া নারীদের বেশির ভাগ খেলায় বড় ক্লাবগুলো অংশ নেয় না। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ভেবে নারী খেলোয়াড়দের অনেকেই অল্প বয়সে খেলাধুলা ছেড়ে সংসারী হচ্ছেন কিংবা অন্য পেশায় নিজেকে জড়াচ্ছেন। এমনকি স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে এসেও নারী ক্রীড়াবিদদের নিশ্চিত ভবিষ্যৎ তো দূরের কথা, দিতে পারিনি পূর্ণ নিরাপত্তা- এটা লজ্জাজনক।     

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫