Logo
×

Follow Us

খেলাধুলা

বাংলাদেশের প্রতি পাকির আলীর অকৃত্রিম ভালোবাসা

Icon

আহসান হাবীব সুমন

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৫, ১০:৩১

বাংলাদেশের প্রতি পাকির আলীর অকৃত্রিম ভালোবাসা

নিজ একাডেমির খুদে ফুটবারদের সঙ্গে পাকির আলী। ছবি: সাম্প্রতিক দেশকাল

পাকির আলী প্রথম বাংলাদেশে পা রেখেছিলেন ১৯৭৬ সালে। আগা খান গোল্ড কাপে শ্রীলঙ্কা যুবদলের হয়ে খেলেছিলেন ঢাকা স্টেডিয়ামে। পরবর্তী সময়ে একই টুর্নামেন্টে ১৯৭৭ আর ১৯৭৯ সালেও অংশ নেন পাকির আলী। সেই সময়েই চোখে পড়েন ঢাকা আবাহনী ক্রীড়া চক্রের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদের। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত হয় তিনি আবাহনীর হয়ে খেলবেন। কিন্তু খেলাটা হয়ে ওঠেনি। চুক্তি জটিলতায় পাকির আলী পাড়ি জমান ভারতের ভাস্কো স্পোর্টস ক্লাবে। তবে আবাহনী তাকে ভোলেনি। ১৯৮১ সালে আবাহনী সভাপতি শামসুল ইসলাম খান আর হারুনুর রশিদ গোয়া থেকে ঢাকায় উড়িয়ে আনেন পাকির আলীকে। শুরু হয় ঢাকার ঘরোয়া ফুটবলে পাকির আলী যুগ। 

বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলের স্বর্ণালি সময় বলা হয় সত্তর থেকে নব্বই দশককে। পাকির আলী প্রায় পুরো আশির দশক পালন করেছেন আবাহনীর স্টপার ব্যাকের দায়িত্ব। অভিষেকের বছরেই আবাহনীকে জিতিয়েছেন লিগ শিরোপা। ১৯৮৩-৮৫ টানা তিনটি লিগ শিরোপায় আবাহনীর জার্সিতে রেখেছেন অনবদ্য ভূমিকা। এ ছাড়া আবাহনীর হয়ে পাঁচটি ফেডারেশন কাপ জয়ের কৃতিত্ব রয়েছে তার। ১৯৮১-৮৯ পর্যন্ত পাকির আলী আবাহনীর অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন। নিঃসন্দেহে পাকির আলী বাংলাদেশে খেলে যাওয়া অন্যতম সেরা বিদেশি ফুটবলার।

পাকির আলীর জন্ম ১৯৫৩ সালের ৫ জুলাই শ্রীলঙ্কার মাতালে শহরে। যে শহরে মানুষ ফুটবলের চেয়ে হকির প্রতি বেশি আগ্রহী। আলী মাতালে শহরের প্রথম ফুটবলার তিনি। পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু ইয়র্ক স্পোর্টস ক্লাবে। ১৯৭৬ থেকে এক দশক আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলা পাকির আলী ১৯৭৮ সালের ব্যাঙ্কক এশিয়ান গেমসে শ্রীলঙ্কা দলের অধিনায়ক ছিলেন। ২০১৮-২০ ছিলেন শ্রীলঙ্কার জাতীয় দলের কোচ। ক্লাব পর্যায়ে বাংলাদেশ ছাড়াও খেলেছেন ভারত আর মালদ্বীপে। এএফসি ‘এ’ লাইসেন্স নিয়ে তিনি কোচিং করিয়েছেন বাংলাদেশের পিডব্লিউডি, মোহামেডান, আবাহনী, শেখ জামাল ধানমন্ডিকে। 

২০১০-১১ মৌসুমে শেখ জামালকে পেশাদার লিগ আর ১৯৯৯ সালে আবাহনীকে জিতিয়েছেন ফেডারেশন কাপ।  

পাকির আলী দেখেছেন বাংলাদেশের ক্লাব ফুটবলের উন্মাদনা। মোহামেডান আর আবাহনীর দ্বৈরথ নিয়ে তার স্মৃতিচারণা, ‘উফ, সেই দিনগুলোর কথা কি ভোলা যায়! হাজার হাজার দর্শক মাঠে। গ্যালারিতে শত পতাকা উড়ছে। মুহুর্মুহু পটকা ফুটছে। মোহামেডান-আবাহনীর নামে মানুষ পাগল হয়ে যেত। মোহামেডানকে হারালে ক্লাবে উৎসব হতো। আর হারলে? সুনসান নীরবতা। মোহামেডানের কাছে হেরে গেছি মানে পাপ করে ফেলেছি। ক্লাবে এসে বাতি নিভিয়ে কত তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়া যায় সে চিন্তায় থাকতাম। উত্তেজিত দর্শক কখন ক্লাবে হামলা চালায় সেই ভয়ে থাকতাম। সত্যিই, ফুটবল নিয়ে উন্মাদনার চূড়ান্ত রূপ আমি বাংলাদেশে দেখেছি। যা অভাবনীয়।’

পাকির আলী নিজ দেশের কোটেতে ‘দ্য ফুটবল ইনস্টিটিউট’ নামে একটি ফুটবল একাডেমি গড়ে তুলেছেন। একাডেমির টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পাকির আলী বলেন, ‘যেকোনো খেলার উন্নয়নে নতুন প্রতিভা উঠে আসা নিশ্চিত করা প্রথম শর্ত। আমরা চেষ্টা করছি, নতুন প্রজন্মকে ফুটবলে উৎসাহী করে তোলার।’  

এই একাডেমির অধীনে নিয়মিত ফুটবল ওয়ার্কশপ আয়োজন করা হয়। খেলোয়াড়দের দেওয়া হয় সার্টিফিকেট। নারী ফুটবলের প্রতি বিশেষ জোর দিয়ে পাকির আলী বলেন, ‘আমি মেয়েদের বলি, তোমাদের শক্তি আর সামর্থ্য আছে। তোমরা মাঠে শুধু ফুটবল খেলতে নামো না, তোমরা সমাজের বাধাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাও। ফুটবলকে তোমরা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নাও। একদিন পৃথিবী তোমাদের জন্য গর্বিত হবে।’

বাংলাদেশ নিয়ে অসীম ভালোবাসায় আপ্লুত হয়ে পাকির আলী বলেন, ‘বাংলাদেশ তো আমার সেকেন্ড হোম। বাংলাদেশ নিয়ে আমার অনেক মধুর স্মৃতি আছে। এখানে খেলেছি। কোচিং করিয়েছি। আমি সুযোগ পেলে বাংলাদেশ যেকোনো সময় আসব। হয়তো কাজে কিংবা ঘুরতে। আমি এখনো বাংলায় কথা বলতে পারি। বাংলাদেশিদের চেয়ে বন্ধুপরায়ণ জাতি আমি দেখিনি। বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে সব সময় থাকবে শুভ কামনা।’  

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫