
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। ছবি- সংগৃহীত
বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবলার হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। যিনি বাংলাদেশের মানুষের কাছে মেজর (অব.) হাফিজ নামেই পরিচিত। ছেলেবেলা থেকেই ফুটবলে হাতেখড়ি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৬১ সালে ভর্তি হয়েছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্বিভাগ ফুটবলে টানা দুটি হ্যাটট্রিক করায় ছড়িয়ে পড়ে তার নাম। সেই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোচ ছিলেন সাহেব আলী। তিনি হাফিজকে সুযোগ করে দেন ঢাকা লিগে ফায়ার সার্ভিস দলে খেলার। তারপর ঢাকা ওয়ান্ডারার্স হয়ে ১৯৬৭ সালে যোগ দেন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে। ১৯৭৮ সালে অবসর নেওয়া পর্যন্ত তিনি কাটিয়েছেন প্রিয় সাদা-কালো শিবিরে।
১৯৬৭ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান জাতীয় ফুটবল দলে খেলেছেন হাফিজ। ১৯৭০ সালে পাকিস্তান জাতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন। একমাত্র বাঙালি হিসেবে হাফিজ উদ্দিন এশিয়ান কাপ খেলতে যান রেঙ্গুনে। ঢাকায় সৌদি আরবের বিপক্ষে খেলেছেন। পাকিস্তান জাতীয় দলের হয়ে একাধিকবার ইরান আর তুরস্ক সফর করেছেন। তুখোড় ফরোয়ার্ড হাফিজ উদ্দিন ঢাকা ফুটবল লিগে প্রথম ডাবল হ্যাটট্রিকের নজির গড়েন। ১৯৭৩ সালে ফায়ার সার্ভিসের বিপক্ষে ৬-০ গোলে জিতেছিল মোহামেডান। সব গোলই করেছিলেন তিনি। অ্যাথলেট হিসেবে ১৯৬৪-৬৬ পর্যন্ত টানা তিন মৌসুম পূর্ব পাকিস্তানের দ্রুততম মানব ছিলেন।
খেলাধুলার পাশাপাশি সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন হাফিজ উদ্দিন। ১৯৭১ সালে ছিলেন প্রথম ইস্ট বেঙ্গল ব্যাটালিয়নের একজন অফিসার। ৩০ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। জামালপুরের কামালপুর বিওপির (সীমান্তচৌকি) আক্রমণ, গৌরীপুরসহ সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চলে দুঃসাহসী সব যুদ্ধে অংশ নেন। জীবন-মৃত্যুর মুহূর্তের নাটকীয়তায় হারিয়েছেন কয়েকশ সহযোদ্ধাকে, আহত হয়েছেন নিজেও। মুক্তিযুদ্ধে দুঃসাহসিক সব অভিযানের জন্য ‘বীরবিক্রম’ খেতাবে ভূষিত হন হাফিজ উদ্দিন।
১৯৪৪ সালের ২৯ অক্টোবর বরিশালের ভোলার লালমোহনে জন্মগ্রহণ করেন হাফিজ উদ্দিন। তার বাবা আজাহার উদ্দিন আহম্মদ চিকিৎসক ছিলেন। হাফিজ উদ্দিনের বাবা ১৯৬৩ ও ১৯৬৫ সালে দুইবার প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং বিরোধী দলের ডেপুটি নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ সালে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তার মায়ের নাম করিমুন্নেছা। এ শতাব্দীর শুরুতে ফিফা হাফিজ উদ্দিনকে বাংলাদেশের ‘শতাব্দী-সেরা ফুটবলারে’র মর্যাদা দেয়। বাফুফে সভাপতি এবং এএফসি নির্বাচিত সহসভাপতি হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। তুখোড় রাজনীতিবিদ মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন ভোলার লালমোহন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন একাধিকবার। মন্ত্রিত্ব করেছেন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, দেশের ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা তারকা।