
বাংলাদেশ নারী কাবাডি দল। ছবি: সাম্প্রতিক দেশকাল
বাংলাদেশের জাতীয় খেলা কাবাডি। অথচ কাবাডিতে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ দল বয়ে বেড়িয়েছে ব্যর্থতার ঘানি। তবে ৪-৮ মার্চ ইরানের তেহরানে অনুষ্ঠিত নারীদের এশিয়ান কাবাডি চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ পদক জিতেছে বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টে শিরোপা জিতেছে ভারত। রানার্স-আপ স্বাগতিক ইরান। এ ছাড়া সম্প্রতি বাংলাদেশের পুরুষ কাবাডি দল দেশের মাটিতে নেপালকে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে ৪-১ ব্যবধানে হারিয়েছে।
এশিয়ান নারী কাবাডির গ্রুপ ম্যাচে বাংলাদেশ হারায় থাইল্যান্ড আর মালয়েশিয়াকে। হেরেছে ভারতের কাছে। সেমিতেও বাংলাদেশের মেয়েরা হার মানে ইরানের সামনে। তাতে অবশ্য প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাবাডিতে ব্রোঞ্জপদক জয়ের রেকর্ড ঠিকই গড়েছে লাল-সবুজের মেয়েরা।
ইরানে বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন শ্রাবণী মল্লিক। বাংলাদেশ দল ইরানে কোনো প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ ছাড়াই খেলতে গেছে। তাতেও এসেছে ঐতিহাসিক সাফল্য। দলের অধিনায়ক শ্রাবণী জানান, ‘অনেক দিন আমাদের কোনো সাফল্য ছিল না। কাবাডিতে সাফল্য খরা ছিল। এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ আমাদের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। আমরা কাবাডি ফেডারেশনকে রেজাল্ট দিতে পেরেছি, এটা অনেক বড় সাফল্য আমাদের জন্য।’
তেহরানে সাফল্যের পর শ্রাবণীর দাবি, ‘আমাদের সামনে বিশ্বকাপ আছে। চাই দীর্ঘমেয়াদি ক্যাম্প। বিশ্বকাপে আমরা যেন চমৎকার ফল আনতে পারি।’ ২০১৯ সালে কাঠমান্ডুতে এসএ গেমসে ব্রোঞ্জজয়ী নারী কাবাডি দলে ছিলেন শ্রাবণী। কাবাডি ছাড়াও শর্টপূট আর কুস্তিতে জাতীয় প্রতিযোগিতা মাতিয়েছেন। জাতীয় কুস্তিতে ৭৬ কেজি ওজন শ্রেণিতে সোনা জিতেছিলেন। আর শটপুটে জাতীয় পর্যায়ে ২০১৭ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সোনা জিতেছেন। ২০১৮ সালে জাকার্তা এশিয়ান গেমসে প্রথমবার জাতীয় কাবাডি দলে প্রতিনিধিত্ব করেন শ্রাবণী। এ ছাড়া ২০১৪ সালে জাতীয় রোলবল দলে খেলেছেন তিনি। ২০১৭-২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ আনসার দলে খেলেছেন চাকরির আশায়, হয়নি। বর্তমানে আছেন বাংলাদেশ পুলিশে। নড়াইলের দরিদ্র পরিবারের কন্যা শ্রাবণী কাবাডি খেলা শুরু করেন ১০-১২ বছর বয়সে। কেবিএম গার্লস হাই স্কুলে পড়ার সময় প্রথম যোগ দেন টিম বিজেএমসিতে। বর্তমানে দেশের হয়ে কাবাডি বিশ্বকাপ মাতানোর স্বপ্নে বিভোর শ্রাবণী।
এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জজয়ী নারী কাবাডি দলকে সংবর্ধনা আর কাবাডি ফেডারেশনকে উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য ২৫ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে বাংলাদেশের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এস এম নেওয়াজ সোহাগ বলেন, ‘খেলাধুলার উন্নয়নে প্রচুর আর্থিক বিনিয়োগ প্রয়োজন। ভারতে ফ্রেঞ্চাইজি কাবাডিতে কোটি টাকা বিনিয়োগে দল গড়া হয়। অথচ আমাদের দেশে স্পন্সর পাওয়া যায় না। বড় কোনো ক্লাব কাবাডিতে অংশ নেয় না। সার্ভিসেস দলগুলোর ওপর নির্ভর করেই কাবাডি এগিয়ে যাচ্ছে। আশার কথা হচ্ছে, বর্তমান যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ কাবাডির প্রতি মনোযোগী। তিনি আমাদের সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। তারুণ্যের উৎসবে দেশব্যাপী কাবাডির প্রতিযোগিতা হয়েছে। নতুন প্রতিভা অন্বেষণ আর অনুশীলন ক্যাম্প করছি। চলতি বছরেই দেশে কাবাডির ফ্রেঞ্চাইজিসহ একাধিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে। বিশ্বকাপসহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাও রয়েছে। সবদিক লক্ষ রেখে পরিকল্পনামাফিক এগোচ্ছি।’