
ডিপিএলে গুলশান বনাম শাইন পুকুরের ম্যাচটিতে খেলোয়াড়দের গতিবিধি ও কয়েকটি আউট নিয়ে উঠেছে ফিক্সিংয়ের অভিযোগ। ছবি: সংগৃহীত
ফিক্সিং শব্দটি ছোট হলেও এর ভয়াবহতা ব্যাপক। বাংলাদেশে কমবেশি সবাই এখন শব্দটির সঙ্গে পরিচিত। কারো কারো কাছে ফিক্সিং তো রীতিমতো নেশায় পরিণত হয়েছে! দেশের ক্রিকেটে ফিক্সিং নতুন নয়। ২০১৩ বিপিএলে মোহাম্মদ আশরাফুলের তেমন এক ঘটনা আলোড়ন তুলেছিল ক্রিকেটাঙ্গনে। এমনকি ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব গোপন রাখায় শাস্তি ভোগ করতে হয়েছে সাকিব আল হাসানকেও। আশরাফুল-সাকিবরা লম্বা সময়ের নিষেধাজ্ঞা পেলেও এসব ঘটনা থেকে শিক্ষা নেননি দেশের ক্রিকেটাররা।
যার সর্বশেষ উদাহরণ, চলতি ডিপিএলে গুলশান বনাম শাইন পুকুরের ম্যাচ। ম্যাচটিতে খেলোয়াড়দের গতিবিধি ও কয়েকটি আউট নিয়ে উঠেছে ফিক্সিংয়ের অভিযোগ। আছে ব্যাটারদের ইচ্ছাকৃত স্টাম্পিং হওয়ার ঘটনাও।
ফিক্সিং নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠলে তদন্ত শুরু করে বিসিবি। তদন্তের অংশ হিসেবে বোর্ড কর্মকর্তাদের সামনে বিতর্কিত স্টাম্পিংয়ের সেই ঘটনা পুনরাবৃত্তি করেন অভিযুক্ত দুই ক্রিকেটার রহিম আহমেদ ও মিনহাজুল আবেদীন। তাতে অবশ্য উল্টো হাস্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়।
পরিসংখ্যান ঘাটলে দেখা যায়, গত দুই যুগে অন্তত ৬০ জনের বেশি ক্রিকেটার ফিক্সিংয়ে জড়িত ছিলেন, যার ৭০ শতাংশই ঘরোয়া বা লিগভিত্তিক খেলোয়াড়। নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি থাকার পরও কেন ফিক্সিংয়ে জড়ান খেলোয়াড়রা...।
ফিক্সিংয়ের নেপথ্যের কারণ
ফিক্সিংয়ের প্রথম ও প্রধান কারণ, মূলত অর্থের লোভ। ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলা ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক খুবই স্বল্প। কেউ কেউ পুরো মৌসুম খেলে পান ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। এসব খেলোয়াড় সহজেই পড়েন জুয়াড়িদের প্রলোভনে।
দ্বিতীয় কারণটিতে অবশ্য খেলোয়াড়দের তেমন দায় নেই। মাঝে মধ্যে নানা চাপ ও ভয়ের কারণে ফিক্সিংয়ে জড়াতে বাধ্য হন ক্রিকেটাররা। বেশির ভাগ সময়ই জুয়াড়ি চক্র কিংবা ক্লাব কর্তৃপক্ষ হুমকি দেয় ক্রিকেটারদের। ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করেই অনিচ্ছা সত্ত্বেও এমন ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত হন ক্রিকেটাররা।
শুধু খেলোয়াড়দের নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে নয়, বাংলাদেশে ফিক্সিংয়ের আরো একটি বড় কারণ, বিসিবির উদাসীনতা ও দুর্বল আইনি কাঠামো। যেটি প্রায়ই খেলোয়াড় কিংবা ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ফিক্সিংয়ে উৎসাহিত করে।
ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রভাব
ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রভাবে দিনশেষে ক্ষতিটা হচ্ছে দেশের ক্রিকেটারদের। সময়ের সঙ্গে দর্শকদের আস্থা হারাচ্ছে মাঠের ক্রিকেট। মাঠে দর্শক উপস্থিতিও নেই আগের মতো। বলা যায়, দর্শক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এর প্রভাব হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে বিসিবিও। টিভি রেটিং কমে যাওয়ায় অনীহা দেখাচ্ছে পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানগুলোও।