
শামস-উল-হুদা একাডেমির মাঠে তরুণ খেলোয়াড়রা। ছবি: সাম্প্রতিক দেশকাল
ক্রীড়া সাংবাদিকতার শুরুতে বাফুফেতে নিয়মিত আসা-যাওয়ার সময় প্রথমবার শুনি শামস-উল-হুদা ফুটবল একাডেমির নাম। বাফুফের সহসভাপতি মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদীর স্বপ্নের এই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জেনে মন জুড়িয়ে গেল। কল্পনায় ভেসে উঠল সবুজ মাঠ, বল পায়ে তরুণ খেলোয়াড়দের দৌড়। কিন্তু সেখানে যাওয়ার সুযোগ এত দ্রুত মিলবে, সেটি ভাবিনি!
গত ১৭ এপ্রিল ট্যুরের জন্য আগের দিনই অফিসের কাজ গুছিয়ে নিয়েছিলাম। ভোরে গাড়ি ছাড়ার কথা থাকলেও সকাল ৯টায় রওনা দিই। শুরুতে অবশ্য একটু বিপাকেই পড়তে হলো।
ঢাকা-যশোর মহাসড়কের ভাঙা টোল প্লাজার কাছে গাড়ি থেমে গেল হঠাৎ! ইঞ্জিন বিকল। গ্রীষ্মের কড়া রোদে ঘামে ভিজে গেল শরীর, পাশ দিয়ে ছুটে যাচ্ছে হাজারও যান।
প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষার পর দুটো মাইক্রো ভাড়া করে চোকদার হোটেলে পৌঁছাই। সকালের নাশতা সারতেই তখন দুপুর ১২টা!
যশোরের হামিদপুরের গ্র্যান্ড হোটেলে পৌঁছে সবাই ফ্রেশ হয়ে লাঞ্চ করতে চলে গেলাম। ঘড়ির কাঁটা তখন বিকেল ৩টা। বিশ্রামের সুযোগ মেলেনি। লাঞ্চ শেষে গাড়ি ছুটল শামস-উল-হুদা একাডেমির দিকে। গেট পার হতেই চোখ আটকে গেল, যেন প্রকৃতি নিজেই এঁকেছে ফুটবলের স্বর্গভূমির এক অপরূপ চিত্র! ৮০ বিঘা জমিজুড়ে আন্তর্জাতিক মানের চারটি মাঠ, ছয়তলা হোস্টেল, সুইমিংপুল। সবুজ ঘাসের গালিচায় দৌড়াচ্ছে ১৪৮ জন কিশোর। দেশের ফুটবলের উন্নয়নে এমন এক একাডেমি দেখে মন ভরে গেল। এমনটা যে শুধু উন্নত দেশগুলোতেই দেখা যায়!
একাডেমির মাঠে পা রাখতেই ক্যামেরা ও বুম নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। মাঠে হাঁটতে হাঁটতে কথা বললাম একাডেমির খেলোয়াড় তৌসিফের সঙ্গে। তার কথা, ‘এই একাডেমিতে আসতে পারাটা সৌভাগ্যের, আমি কোচদের প্রতি চির কৃতজ্ঞ!’ কোচ মারুফ হাসানের সঙ্গে কথা বলতে বলতে ফুটেজ তুললাম আবাসিক ক্যাম্প করতে আসা যুব ফুটবলারদের, যারা আগামী মাসে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেবে। সবকিছু নিয়ে অফিসে নিউজ পাঠাতেই ঘড়িতে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা।
ঢাকায় ফিরতে রাত ৮টায় উঠে বসলাম গাড়িতে। ফেরার পথে ভাঙা টোল প্লাজার চায়ের স্টলে দাঁড়িয়ে চুমুক দিলাম এক কাপ গরম চায়ে। আকাশে ঝিলমিল তারা। মনে হচ্ছিল, এই একাডেমির কোনো এক শিশুই হয়তো একদিন জ্বলবে বিশ্ব ফুটবলের আকাশে। ঢাকায় পৌঁছলাম রাত দেড়টায়। এক দিনের ভ্রমণে ক্লান্ত হলো শরীর। তবে শামস-উল-হুদা একাডেমি শেখাল ক্লান্তি, ঝামেলা, সময়ের অভাব সবই তুচ্ছ, যখন চোখের সামনে ভেসে ওঠে জাতি গড়ার স্বপ্ন। এখানে শুধু ফুটবল শেখানো হয় না, শেখানো হয় স্বপ্নকে বাস্তব করতে ছুটে চলার লড়াইও। স্বপ্নকে বাস্তব করার এ লড়াইয়ের মূল কারিগর যেন নাসের শাহরিয়ার জাহেদী।