ক্রিকেটার জাহানারা আলম। ছবি: সাম্প্রতিক দেশকাল
‘কাজল চোখের মেয়ে,/আমার দিবস কাটে, বিবশ হয়ে,/তোমার চোখে চেয়ে’-সাদাত হোসাইনের কবিতার এই কয়েক পঙ্ক্তি মনে পড়লে চোখে ভেসে ওঠে ক্রিকেটার জাহানারা আলমের কাজল ভরা নয়ন। বাংলাদেশের এই নারী ক্রিকেটারের সিগনেচার লুক তার কাজলমাখা চোখ। সেই কাজল চোখের মেয়ের পাত্র হিসেবে পছন্দ বলিউড সুপারস্টার হৃতিক রোশনের মতো পাত্র। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় থাকা এই বাংলাদেশি পেসার সাম্প্রতিক দেশকালের সঙ্গে আলাপকালে জানিয়েছেন নিজের পছন্দ-অপছন্দ ও ক্রিকেট ক্যারিয়ারের বর্তমান হালচালের কথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হিমু আক্তার।
মানসিক স্বাস্থ্যের কারণ দেখিয়ে লম্বা সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দূরে। এখন কেমন আছেন? এই কয় মাসে নিজের কতটা উন্নতি হয়েছে?
মানসিক স্বাস্থ্য এখন আগের চেয়ে ভালো। ধরতে পারেন, এখন পুরোপুরি ভালো আছি। এখানে সিজন (মৌসুম) শেষ করলাম। অস্ট্রেলিয়ায় তো ক্রিকেটীয় সিজন ছয় মাস থাকে, এরপর খেলা থাকে অল্পস্বল্প। এখন খেলার ব্যস্ততা নেই, তাই ট্রেনিং করছি, নিজেকে নিয়ে কাজ করছি। তা ছাড়া বাংলাদেশেও এখন যেহেতু খেলা নেই তাই গিয়ে সেভাবে লাভ নেই। এ জন্য এখানে ট্রেনিং করছি। আর সুযোগ পেলে কোচিং করাচ্ছি।
কোচিংয়ের কথা বললেন, এই ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চাই।
এটি বয়সভিত্তিক কোচিং সেশন। ক্যানবেরাতে হচ্ছে। সেখানে আমি কোচ হিসেবে তিন দিনের একটি সেশন করিয়েছি। ৪ থেকে ১৪ বছরের ছেলেমেয়েরা এখানে ক্যাম্প করে, কোচিং করে। এটাকে উইন্টার ক্যাম্প বলে। এই দেশে প্রতিটা স্টেটেই এমন ক্যাম্প হয়।
কেমন ছিল প্রথমবার কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা?
এদের কোচিং প্যাটার্ন একদমই আলাদা। এদের পরিবেশ থেকে শুরু করে সবকিছুই আলাদা। বাংলাদেশের বাচ্চারা কোনো ক্লাবের হয়ে কোচিং করে সব সময়। কিন্তু এখানে সম্পূর্ণ আলাদা। এরা খেলাটাকে বিনোদন হিসেবে নেয়। এখানে তারা মানসিক স্বাস্থ্যটাকে বেশি গুরুত্ব দেয়। এই ফানের মাধ্যমেই তারা স্ট্রং বেসিক তৈরি করে। এরা এসব ইস্যুতে নিজেদের চাপ দেয় না। পুরোটাই ফান গেম হিসেবে নেয়।
সম্প্রতি বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। দীর্ঘ মেয়াদে নিজেকে সরিয়ে নেবেন নাকি একেবারে সরে যাওয়ার পরিকল্পনা?
আমার দীর্ঘ ১৬ বছরের ক্যারিয়ার। এটাকে আরো এগিয়ে নেওয়ার ইচ্ছা তো অবশ্যই আছে। আবারও ফিরব। তো এখন আলোচনা করতে হবে ফেরার প্রসেসটা কী! আমাকে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে আসতে হবে নাকি সরাসরি আসা যাবে, সেটাও দেখতে হবে। কিছুদিন আগেও বিসিবি থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে যে আমি কবে নাগাদ ফিরব? তা ছাড়া যখন ডিসেম্বরে আমি ছুটির আবেদন করি তখনই অনুরোধ করেছিলাম আমাকে চুক্তির বাইরে রাখার জন্য। এর পরও বিসিবি দুই মাসের বেতন দিয়েছে। পরে আবারও অনুরোধ করি। এরপর মার্চ থেকে চুক্তির বাইরে আছি আরকি।
এখন তো তাহলে ফেরার জন্য প্রস্তুত?
হ্যাঁ, এখন আমি ফেরার জন্য প্রস্তুত। অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশ আমাকে স্বাভাবিক হতে খুব সাহায্য করেছে। ক্রিকেটীয় পরিবেশ, প্রকৃতি, খাবার- সবকিছুই আমার সঙ্গে ভালোভাবে ম্যাচ করেছে। সব মিলিয়ে এখন আমি ফিরতে প্রস্তুত।
আপনি সিডনি ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে গিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ায়, সেখানে তাদের কাছে কেমন সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন?
ক্লাব আমাকে খুবই সাহায্য করেছে। একজন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার বা সাবেক অধিনায়ক হিসেবে যে সম্মান করেছে, সেটা বলার বাইরে। আমি আসার আগেও এতটা প্রত্যাশা করিনি, যতটা পেয়েছি এই ক্লাবে। শুধু খেলা নয়, তারা আমাকে মেন্টরিং করতেও পরামর্শ দিয়েছেন। ক্লাবে যারা জুনিয়র আছে, অনূর্ধ্ব-১৮ আছে বা যারা পেসার আছে তাদের মনিটরিং করার পরামর্শ দিয়েছেন। আমাকে এই সুযোগটা দিয়েছেন। তারা আমার সার্টিফিকেট চায়নি। তারা আমার ১৮ বছরের ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ারের যা অভিজ্ঞতা সেটা দিয়েই মনিটরিং করতে বলেছে। অস্ট্রেলিয়ার মতো জায়গায় এটা অনেক বড় সম্মান।
আমাদের দেশে মেয়েদের ক্রিকেটের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার মেয়েদের ক্রিকেটে ব্যবধান কেমন দেখলেন?
স্কিলের দিক থেকে এরা অনেক এগিয়ে। আমি যে বললাম, চার বছরের শিশুরাও বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে কোচিং করে, ট্রেনিং নয়। দেখেন, এত ছোট বয়স থেকেই ওদের বেসিক স্ট্রং হয়। এটা শুধু অস্ট্রেলীয়রা না- ভারত, শ্রীলঙ্কা বা অন্য যেসব দেশেরই হোক না কেন সবাই চার বছর বয়স থেকেই ট্রেনিং করে। আমি মাঝে প্রাইভেট কোচিংও করিয়েছি। এটাও সিডনি ক্রিকেট ক্লাবের ব্যানারের আন্ডারে। এটা এক বা দুজন করে কোচিং। তো তাদের যখন প্রশ্ন করলাম, তোমার প্রথম কোচ কে? সবার উত্তর- মা-বাবা। এটা থেকে বুঝলাম, তাদের পরিবার অনেক বেশি সংযুক্ত। তাই বেসিকটাও ছোট থেকেই শক্ত হয়। শিশুদের ক্রিকেট খেলাতে প্রচুর বিনিয়োগ করে। তো এসবের কারণে স্কিলটাও উন্নত। স্বাভাবিকভাবে আমাদের সঙ্গে ওদের অনেক ফারাক। এখানে ব্যবধান থাকবে এটাই স্বাভাবিক।
অস্ট্রেলিয়ায় লম্বা সময় আছেন, সম্প্রতি গাড়িও কিনেছেন, সেখানেই কি নিজের জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরুর ইচ্ছা আছে? আর বিয়ের জন্য কেমন পাত্র চান?
সেটা নিয়ে এখনো ভাবিনি। তবে সময়টা খুব উপভোগ করছি। আর পাত্রের কথা বলতে গেলে লম্বা, হ্যান্ডসাম, সুন্দর ও মাসল থাকবে- এমন পাত্র পছন্দ। তেমন পাত্র পেলে বিয়ে করে ফেলব। এখানে এসে দেখি তো অস্ট্রেলিয়ান ছেলেরাই এমন। এখানে যদি আরো কিছুদিন থাকি তাহলে এখানেই বিয়েটা করব। আর আমি তো লম্বা আর আমারও লম্বা ছেলে পছন্দ। তা ছাড়া একটু হ্যান্ডসাম, কেয়ারিং বা লাভিং পারসন চাই। মোট কথা স্মার্ট হতে হবে। হৃতিকের (রোশন) মতো দেখতে হতে হবে। এমন পাত্র পেলে দ্রুতই বিয়ে করে ফেলব।