
বাংলাদেশ-আমিরাত সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি আসা সেই সমর্থক। ছবি: ভিডিও থেকে
বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে বাজি না ধরায় ভালো। সেই বাজিতে হারের সম্ভাবনা যে বেশি! ধরুন, বন্ধুদের সঙ্গে আবেগবশত বাজি ধরলেন, বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জিতলেই তবে বিয়ে করবেন। আপনার সেই ‘ধনুক ভাঙা পণ’ দেখে নিশ্চিত হয়ে বলা যায়, বন্ধুরা এক চোট হাসবে। হাসতে হাসতে কুটিকুটি হবে।
অস্ট্রেলিয়া, ভারত, ইংল্যান্ড হলে না হয় অন্য কথা। বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জিতবে, সেটি বিশ্বাস করবে কে! খোদ বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা বিশ্বাস করে কিনা সন্দেহ। কিন্তু সমর্থন তো আর এসব ভেবে করে না কেউ। সমর্থকেরা চায়, তাদের প্রিয় দল শিরোপা জিতুক। তাদের প্রিয় খেলোয়াড় স্পর্শ পাক ট্রফির।
তেমন এক সমর্থকের দেখা মিলল মঙ্গলবার শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষ বাংলাদেশের সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি দেখতে এসেছিলেন তিনি। গায়ে বাংলাদেশ দলের সবুজ জার্সি। আর হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা, “বাংলাদেশ বিশ্বকাপ না জেতা পর্যন্ত আমি বিয়ে করব না।”
লেখাটি অবশ্য ইংরেজিতে। তবে বুঝতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সময় এই সমর্থকের প্ল্যাকার্ডে লেখাটি দেখে কেউ হেসেছেন, কেউ হয়তো দীর্ঘশ্বাসও ফেলেছেন। হাসির কারণ তো আগেই বললাম। আর দীর্ঘশ্বাসের কারণও একই—ইশ! বাংলাদেশের হাতে যদি একটি বিশ্বকাপ জিতত!
সেই আশা যে কবে পূরণ হবে সমর্থকদের! সেই কারণে আশায় থাকা সমর্থকের জন্য কি মায়া হচ্ছে না? হচ্ছে বলেই এই লেখা। এমন আশায় থাকলে যে বেচারার বিয়েই হবে না! এই প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী নচিকেতার ‘কালো মেয়ে’ গানের কথা মনে পড়ে গেল, ‘বিয়েতো হবে না কথাও কবে না/আই বুড়ী বলে শুধু ধুর ধুর ছাই ছাই’।
সেই গানের কথাকে একটু পাল্টে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে, বাংলাদেশ ‘বিশ্বকাপও জিতবে না, বিয়েও হবে না।’ একটু বেশি হয়ে গেল কি? কিন্তু বাস্তবতা যে সেটি বলতে বাধ্য করছে। না হয় দেখুন, টি-টোয়েন্টিতে লিটন দাস-নাজমুল হোসেন শান্তরা আমিরাতের বিপক্ষেও হারে! ২০৬ রানের লক্ষ্য দিয়েও যে জিততে পারেনি বাংলাদেশ। দারুণ লড়াইয়ে সিরিজে ১-১ ব্যবধানেও সমতায় ফিরেছে আমিরাত।
অথচ শক্তিমত্তা, ক্রিকেটীয় ইতিহাস বিবেচনায় আমিরাতের চেয়ে ঢের এগিয়ে বাংলাদেশ। কিন্তু আইসিসির পূর্ণ সদস্য হয়েও সহযোগী সদস্যের বিপক্ষে এই হার বাংলাদেশের জন্য বিব্রতকরই। সেটি টি-টোয়েন্টিতে হলেও। র্যাঙ্কিংয়েও তো বাংলাদেশ এগিয়ে আমিরাতের বিপক্ষে। তারপরও কেন হারতে হলো! শুরু থেকে বাংলাদেশের যে অধারাবাহিকতা সব সংস্করণে, সেটি আসলে ঘুচবে কবে কে জানে।
সেটি ঘুচলে হয়তো বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখা যেতেই পারে। কিন্তু ক্রিকেটে অন্য দেশ যেভাবে এগোচ্ছে সেখানে বাংলাদেশ যেন পেছাচ্ছে। সেই কারণেই ক্যামেরা খুঁজে নেওয়া সেই সমর্থকের জন্য এত মায়া। বেচারা ভাইরাল হয়েছে বটে, তবে স্বপ্নপূরণ যে স্বপ্নই থেকে যাচ্ছে। কখনো কি কোনো এক সংস্করণে বাংলাদেশের আইসিসি শিরোপা ছোঁয়ার অপেক্ষা ঘুচবে?
বিশ্বকাপ অবশ্য একটি আছে। সেটি এসেছে বয়সভিত্তিক দলের হাত ধরে। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ভারতকে হারিয়ে জিতেছিল সেই শিরোপা। সেই দলের অনেকে এখন খেলছেন জাতীয় দলে। তাদের হাত ধরে কি ঘুচবে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন?