স্বল্পভাষী হামজা চৌধুরী ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই থেকেছেন আড়ালে। খুব বেশি আলোচনায় আসেননি আগে। কেননা মাঠের পারফরম্যান্সই ছিল তার পরিচয়পত্র। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। লেস্টার সিটি থেকে ধারে যোগ দিয়েছেন শেফিল্ড ইউনাইটেডে। আর খুব অল্প সময়েই বদলে দিয়েছেন দলের মাঝমাঠের চেহারা। শক্তি, স্থিরতা আর সাহসের মিশেলে হয়ে উঠেছেন দলের ভরসার প্রতীক। 

যে হামজা বেশি কথা বলেন না, সে হামজাই এখন পায়ের খেলায় লিখছেন প্রিমিয়ার লিগে ফেরার গল্প। তার দল এখন চ্যাম্পিয়নশিপের প্লে-অফের ফাইনালে, প্রতিপক্ষ সান্ডারল্যান্ড।

একটি মাত্র জয় মানেই প্রিমিয়ার লিগ। আর হামজার জন্য সেটা শুধু লিগে ফেরা নয়, এটা হবে নিজের সব লড়াইয়ের, অপেক্ষার ও প্রস্তুতির প্রকৃত পুরস্কার। 

মাত্র সাত বছর বয়সে লেস্টার সিটির একাডেমিতে নাম লেখান হামজা। তখনই চোখে ছিল পেশাদার ফুটবলার হওয়ার স্বপড়ব। ধীরে ধীরে লেস্টারের বয়সভিত্তিক দল হয়ে পৌঁছে যান মূল স্কোয়াডে। সময়ের সঙ্গে গড়ে ওঠে তার মিডফিল্ড শৈলী।

প্রতিপক্ষের আক্রমণ ভেঙে দ্রুত রক্ষণ সামলে আক্রমণে সহায়তার দারুণ দক্ষতা তার। ২০১৭ সালে লেস্টারের মূল দলে অভিষেক হামজার। এর পর থেকে নিয়মিতই স্কোয়াডে থেকেছেন। কখনো শুরুতে, কখনো বেঞ্চে। তবে নিজের পারফরম্যান্স দিয়ে বারবার নজর কেড়েছেন ক্লাব কোচদের। 

 ২০২১-২২ মৌসুমে লেস্টার থেকে ধারে ওয়াটফোর্ডে যোগ দেন হামজা। সেখানে ছিলেন পুরো এক মৌসুম। প্রিমিয়ার লিগে নতুন এক ক্লাবের হয়ে খেলে শিখেছেন গতি, চাপ আর রক্ষণে দায়িত্বশীলতা। ওয়াটফোর্ডের জার্সিতে খেলেছেন ২২ ম্যাচ, লড়েছেন শক্তিশালী ক্লাবগুলোর বিপক্ষে। সেই লড়াই ছিল জাতীয় দলে আসার প্রথম সিঁড়ি।

এরপর ২০২৩-২৪ মৌসুমে ফেরেন লেস্টারে। ক্লাব তখন চ্যাম্পিয়নশিপে। দলের লক্ষ্য ছিল প্রিমিয়ার লিগে ফেরার, আর সেই লক্ষ্যে অন্যতম সৈনিক হন হামজা। পুরো মৌসুমজুড়ে ছিলেন কোচের নির্ভরতার প্রতীক।

খেলেছেন ৩৮ ম্যাচ, ছিলেন মিডফিল্ডের ভারসাম্য রক্ষার মূল কারিগর। তার নেতৃত্ব, পজিশন সেন্স আর ট্যাকলিং দক্ষতা দলের শিরোপা জয় ও প্রিমিয়ার লিগে প্রত্যাবর্তনের পথে বড় অবদান রাখে।

২০২৪-২৫ মৌসুমে হামজার জন্য আসে আরেক চ্যালেঞ্জ ধারে যোগ দেন শেফিল্ডে। সেখানেও হয়ে ওঠেন দলের মেরুদণ্ড। টানা ম্যাচ খেলে নিজের ছন্দ ও আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনেন।

কোচের আস্থার প্রতীক হিসেবে খেলেছেন নিয়মিত। এখন সামনে আর মাত্র এক ধাপ। ২৪ মে ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে সান্ডারল্যান্ডকে হারালেই শেফিল্ড ফিরবে লিগে। সঙ্গে হামজারও শীর্ষ লিগে ফেরার সম্ভাবনা। বাংলাদেশের একজন বিশ্বের সেরা লিগে খেলবে এটা যে দেশের ফুটবলের জন্য অনেক বড় গর্বের।