Logo
×

Follow Us

খেলাধুলা

কাঠগড়ায় কাবরেরা

Icon

আহসান হাবীব সুমন

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৫, ১৪:৪২

কাঠগড়ায় কাবরেরা

বাংলাদেশ ফুটবল দলের কোচ হাবিয়ের কাবরেরা।

সম্প্রতি এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ আর সিঙ্গাপুর। আন্তর্জাতিক ফুটবলে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ের কোনো রেকর্ড নেই। ১৯৭৩ সালে মারদেকা কাপে দুই দলের ম্যাচটি ড্র হয়েছিল ১-১ গোলে। আর ২০১৫ সালে ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচে ঢাকা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশকে ১-২ গোলে পরাজিত করেছিল সিঙ্গাপুর।
ফিফা র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে থাকা সিঙ্গাপুরের অবস্থান ১৬১। বিপরীতে বাংলাদেশ রয়েছে ১৮৩তম স্থানে। স্বাভাবিকভাবেই ১০ জুনের ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে ‘ফেভারিট’ তকমা নিয়েই মাঠে নামে সিঙ্গাপুর। কিন্তু যে দলে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হামজা চৌধুরী, কানাডার শীর্ষ লীগে খেলা শমিত সোম আর ইতালির চতুর্থ স্তরের লিগে খেলা ফাহমিদুল ইসলামরা রয়েছেন। তাদের ‘তুড়ি’ মেরে উড়িয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে বাংলাদেশের ফুটবল ভক্তরা দেখেছিল ‘রূপকথা’ রচনার স্বপ্ন। কিন্তু বিধি বাম। নিজ দেশের হাজার হাজার সমর্থকের সামনে বাংলাদেশ ম্যাচ হেরে গেছে ১-২ গোলে।
খেলায় জয়-পরাজয় থাকবেই। কিন্তু সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে হেরে যাওয়া ম্যাচে বাংলাদেশ দলের ‘দুর্বল ম্যানেজমেন্ট’ পড়েছে তোপের মুখে। বিশেষ করে প্রধান কোচ হাভিয়ের কাবরেরার ম্যাচ প্ল্যান ছিল দুর্বোধ্য। বাংলাদেশ দলে স্বীকৃত স্ট্রাইকারের অভাব চিরন্তন। আল আমিন ও সুমন রেজা স্কোয়াডে ছিলেন। কিন্তু তারা কোচের আস্থাভাজন নন। আল আমিনকে কাবরেরা মাঠে নামান খেলার ৭৬ মিনিটে। ততক্ষণে দুই গোল হজম করা বাংলাদেশ সিঙ্গাপুরকে এক গোল ফিরিয়ে দিয়েছে। ম্যাচে ফেরার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময়টায় পৃথিবীর যেকোনো কোচ দলের আক্রমণ ভাগকে শক্তিশালী করবেন। তবে অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, স্ট্রাইকার হিসেবে আল আমিনকে মাঠে নামালেও উইঙ্গার রাকিবকে তিনি নামিয়ে আনেন রাইট-ব্যাক পজিশনে। রাকিব বাংলাদেশের সেরা রাইট উইঙ্গার। গোল করায়ও পারঙ্গম। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষেই ৬৬ মিনিটে হামজার দারুণ এক পাস থেকে বাংলাদেশের একমাত্র গোলটি করেছিলেন তিনি। সেই রাকিবকে দলের অতি প্রয়োজনের মুহূর্তে কাবরেরা কেন রক্ষণ সামলানোর দায়িত্বে নিয়ে এলেন, সেটি কারো বোধগম্য নয়।
জামাল ভুঁইয়া প্রথম প্রবাসী ফুটবলার হিসেবে ২০১৩ সাল থেকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। লাল-সবুজের জার্সিতে সর্বোচ্চ ৮৮ ম্যাচ খেলা এই মিডফিল্ডারের বর্তমান বয়স ৩৫। এটা সত্যি, ডেনমার্কে জন্ম নেওয়া জামাল ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে চলে এসেছেন। কিন্তু তিনি ফুরিয়ে যাননি। ডেড বল, সেট  পিস, কর্নার সিচুয়েশনে এখনো জামালের বিকল্প নেই। ৪ জুন ভুটানের বিপক্ষে ম্যাচে হেড থেকে হামজার গোলটি এসেছিল জামালের অসাধারণ কর্নার কিক থেকে। সেই জামালকে কাবরেরা সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে মাঠেই নামাননি। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ১০টি কর্নার পেয়েও কাজে লাগাতে না পারা বাংলাদেশ দলে জামালের অভাব প্রকটভাবে অনুভূত হয়েছে।   
কোচের এমন সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের কিংবদন্তি ফুটবলার সৈয়দ রুম্মান বিন ওয়ালি সাব্বির কোনো রাখঢাক না রেখেই বলেছেন, ‘সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে বাংলাদেশের খেলা দেখে আমি হতাশ। আমি কোচের কোনো পরিকল্পনা খুঁজে পাইনি।’ সাবেক জাতীয় দলের তারকা জাহিদ হাসান এমিলির সাফ কথা, ‘সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে পরাজয়ের দায় সম্পূর্ণ কোচের (কাবরেরা)। তার কৌশল-পরিকল্পনা যেমন ভুল তেমনি তার খেলোয়াড় নির্বাচন ও পরিচালনা পদ্ধতিও সঠিক ছিল না।’

৪০ বছর বয়সী কাবরেরা ২০১৩ সালে ভারতের স্পোর্টিং গোয়া দলের সহকারী কোচ ছিলেন। তিনি স্পেনের দেপোর্টিভো আলাভেসের এলিট  একাডেমি এবং যুক্তরাষ্ট্রের বার্সেলোনা একাডেমির দায়িত্বে ছিলেন স্বল্প সময়ের জন্য। ২০২২ সাল থেকে বাংলাদেশের দায়িত্ব নেওয়া কাবরেরা  আদৌ হামজা আর শামিতদের  ‘কোচ’ হওয়ার যোগ্যতা আছে কি না প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বাফুফের নির্বাহী কমিটির সদস্য সাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া শাহীন গণমাধ্যমের সামনে এই স্প্যানিশ কোচের ‘অপসারণ’ দাবি করেছেন। বাফুৃফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল বলেছেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করব। বাংলাদেশেরে পারফরম্যান্স নিয়ে জাতীয় দল কমিটির অ্যাসেসমেন্ট ও রিভিউ হবে। নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে আমাদের এগোতে হবে।’

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫