Logo
×

Follow Us

খেলাধুলা

সুরিনাম পারলে কেন পারবে না বাংলাদেশ

Icon

আহসান হাবীব সুমন

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৫, ১৫:০৬

সুরিনাম পারলে কেন পারবে না বাংলাদেশ

১৯৮৮ সালের সিউল অলিম্পিকে সুরিনামের অ্যান্থনি ন্যাস্টি প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ সাঁতারু হিসেবে জিতেছিলেন ১০০ মিটার বাটারফ্লাই ইভেন্টের স্বর্ণপদক। ন্যাস্টির স্বর্ণপদক জয়ের আগে পৃথিবীর বুকে ‘সুরিনাম’ বলে একটি দেশ আছে, জানা ছিল না অনেকেরই! 

১৯৮৮ সালেই ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ ফুটবলের শিরোপা জিতে নেয় নেদারল্যান্ডস। ‘টোটাল ফুটবলের’ জনক হিসেবে ইয়োহান ক্রুইফের নেদারল্যান্ডস ১৯৭৪ ও ১৯৭৮ সালের ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনালে উঠলেও কোনো আন্তর্জাতিক শিরোপা জিততে পারেনি। সেই আফসোস ১৯৮৮ সালে ইউরো জয়ের মধ্য দিয়ে মেটান রুদ গুলিত-ফ্রাঙ্ক রাইকার্ডরা। গুলিত ও রাইকার্ডের শেকড় পোঁতা রয়েছে সুরিনামে। দুজনের বাবা জন্মসূত্রে সুরিনামিজ। রাইকার্ডের বাবা হারমান রাইকার্ড সুরিনামের ঘরোয়া লিগেও খেলেছেন। বর্তমান সময়ে ডাচ দলের সেরা পারফর্মার ভার্জিল ফন ডাইকের মাতৃভূমিও সুরিনাম।  

সুরিনাম আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর-পূর্ব অংশে অবস্থিত একটি রাষ্ট্র। ক্যারিবিয়ান দেশ হলেও ফুটবলে সুরিনাম ‘কনকাকাফ’ অঞ্চলের প্রতিনিধি। ১৯৭৫ সালের ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত ডাচ কলোনির অধীন থাকা সুরিনাম স্বপ্ন দেখছে ২০২৬ সালের ফিফা বিশ্বকাপে খেলার। অথচ দেশটির জনসংখ্যা মাত্র সাড়ে ছয় লাখ! ফিফা র‌্যাংকিংয়ে বর্তমান অবস্থান ১৩৭। সাফ অঞ্চলের ভারতীয়রাও (১২৭) ফিফা র‌্যাংকিংয়ে সুরিনামের চেয়ে এগিয়ে। তাহলে কোন যাদুবলে মাত্র ১,৬৩,৮২০ কিলোমিটার আয়তনের ছোট্ট দেশটি ফুটবলের সর্ববৃহৎ মঞ্চে খেলার স্বপ্ন দেখছে? 

সুরিনাম জাতীয় ফুটবল দলের মূল শক্তি নেদারল্যান্ডসে জন্ম নেওয়া সুরিনামিজ বংশোদ্ভূত ফুটবলাররা। গোলরক্ষক ওয়ার্নার হ্যান ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন বিখ্যাত ডাচ ক্লাব আয়াক্সের একাডেমি দলে। ডাচদের বয়সভিত্তিক দলে খেলা হ্যান ২০২১ সাল থেকে সুরিনাম জাতীয় দলের অংশ। এ ছাড়া অ্যাতিয়েনে ভ্যাসেন, শাকিলে পিনাস, লিয়াম ভ্যান গেল্ডেরেনের মতো প্রবাসী ফুটবলারসমৃদ্ধ সুরিনাম দ্রুত উঠে আসছে ফুটবলে।    

২০২৬ সালের ফিফা বিশ্বকাপের আয়োজক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো। ৪৮ দেশের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপের ‘কনকাকাফ’ বাছাইপর্বে সুরিনাম পা রেখেছে তৃতীয় রাউন্ডে। ১২ দলের তিন গ্রুপের তিনটি শীর্ষ দল সরাসরি পাবে বিশ্বকাপের টিকিট। রানার্সআপ দল সুযোগ পাবে আন্তর্মহাদেশীয় প্লে-অফে খেলার। সুরিনাম ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি সুরিন মাতুরার উচ্চাকাক্সক্ষীয় স্বপ্ন, ‘পুরো দেশ বিশ্বকাপ ফুটবলে খেলার স্বপ্ন দেখছে। আমাদের খেলোয়াড়রা বিশ্বকাপের সঙ্গে দূরত্ব অনেকটা কমিয়ে এনেছে। বাকি পথটা পাড়ি দেওয়ার সামর্থ্য আমাদের রয়েছে বলেই আমরা বিশ্বাস করি।’  

সুরিনামের মতোই সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ফুটবলে প্রবাসীদের মিলনমেলা বসেছে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ জাতীয় দলে প্রবাসী ফুটবলার যুগের সূচনা করেছিলেন ডেনমার্কপ্রবাসী জামাল ভুঁইয়া। এবার ইংল্যান্ড থেকে উড়ে এসেছেন হামজা চৌধুরী। কানাডার শমিত সোম আর কাজেম শাহ, ফিনল্যান্ডের তারিক কাজী, ইতালির ফাহামিদুল ইসলামরা এরই মধ্যে বাংলাদেশের জার্সি গায়ে চাপিয়েছেন। আসছেন ইংল্যান্ডপ্রবাসী কিউবা মিশেলসহ অনেকে। ফুটবল শক্তি হিসেবে বাংলাদেশ ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না। বাংলাদেশের ফিফা র‌্যাংকিং ১৮৩। হামজা কিংবা শমিতরা বাংলাদেশের ফুটবলকে রাতারাতি বিশ্ব পর্যায়ে নিয়ে যাবেন-এমন আশা বাড়াবাড়ি। ফুটবলপ্রেমীরা বাংলাদেশকে অন্তত এশিয়ান পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেখতে চান। সেই সঙ্গে সাফ শিরোপা পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন দেখাটাও অমূলক নয়। তবে বাংলাদেশকে এগোতে হবে সাবধানে। গত দুই দশকে দেশের ঘরোয়া ফুটবল ছিল দিশাহীন। বয়সভিত্তিক কিংবা জেলা লিগগুলো অনিয়মিত হওয়ায় জাতীয় দলের ‘পাইপলাইন’ প্রায় শূন্য। তাই বাংলাদেশকে এখন মনোযোগ দিতে হবে তৃণমূল পর্যায়ে। 

প্রবাসী খেলোয়াড় নিয়ে নিদারুণ ব্যর্থতার উদাহরণ হিসেবে আমাদের সামনে রয়েছে পাকিস্তান। দেশটির জাতীয় দলের ইউসুফ বাট, রাহিস নবি, হাসান বশির, ইশা সুলেইমান, ওটিস খান, হারুন হামিদ, আবদাল্লা ইকবালরা ইউরোপ-আমেরিকায় বেড়ে উঠেছেন। সেখানেই ফুটবল খেলেন। ইশা সুলেইমান তো ইংল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-২০ দলের অধিনায়ক হিসেবে ইউরো কাপও জিতেছেন। অথচ পাকিস্তান সাফ প্রতিযোগিতায় হালে পানি পায় না। ঘরোয়া ফুটবলের ভগ্নদশায় পাকিস্তান দল সম্ভাবনা সত্ত্বেও ফুটবলে পারছে না কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে। 

প্রবাসীদের সঙ্গে দেশীয় মানসম্মত ফুটবলারদের ‘সেতুবন্ধ’ তৈরি না হলে অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। বাংলাদেশের ফুটবল কর্তাদের তাই প্রবাসীদের সঙ্গে দেশীয় ফুটবলার তৈরিতে পরিকল্পনামাফিক এগোতে হবে-এটাই বাস্তবতা।    


Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫