
২০০৭ সাল থেকে মাঠে গড়ানো পেশাদার লিগের শিরোপা ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের হাতে ধরা দিয়েছে ২০২৪-২৫ মৌসুমে। প্রথমবারের মতো পেশাদার লিগ জয়ে সাদা-কালো শিবির মেতেছিল রঙিন উৎসবে। কিন্তু সেই রং এখন যেন ফিকে হতে শুরু করেছে।
লিগ শিরোপা জয়ের রেশ কাটতে না কাটতে পদত্যাগ করেছেন মোহামেডানের ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর। ২০২১ সালের মার্চে প্রকৌশলী আলমগীর যখন দায়িত্ব নেন, তখন মোহামেডান লণ্ডভণ্ড এক দল। ক্যাসিনোকাণ্ডে কলংকিত। ২০০৫-০৬ জাতীয় লিগের পর বড় কোনো শিরোপা নেই। সান্ত্বনা হিসেবে এসেছে দুটি ফেডারেশন কাপ আর একটি করে স্বাধীনতা কাপ ও সুপার কাপ। এক সময় পেশাদার লিগের রেলিগেশন জোনেও ঘোরাফেরা করতে হয়েছে দেশের অন্যতম সফল ক্লাবটিকে। সেই মোহামেডান ইঞ্জিনিয়ার আলমগীরের নেতৃত্বে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে।
২০২২-২৩ মৌসুমের ফেডারেশন কাপ ছিল দীর্ঘ ৯ বছর পর মোহামেডানের প্রথম শিরোপা। আসে পেশাদার লিগে নিজেদের প্রথম শিরোপাও।
পেশাদার লিগ শিরোপা জয়ে মোহামেডানের সামনে ছিল এএফসি চ্যাম্পিয়নশিপে খেলার সুযোগ। কিন্তু মোহামেডানের মতো ঐতিহ্যবাহী দলের এএফসি লাইসেন্সই নেই! ফেডারেশন সূত্রে জানা গেছে, লাইসেন্সের জন্য আবেদন করলেও মোহামেডান এএফসির কোনো শর্তই পূরণ করতে পারেনি। তাই লিগ রানার্স-আপ ঢাকা আবাহনী ক্রীড়া চক্র আর লিগে তৃতীয় হওয়া বসুন্ধরা কিংস এএফসি টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ পাচ্ছে মোহামেডানের পরিবর্তে। অথচ মোহামেডানের ম্যানেজার ইমতিয়াজ আহমেদ নকীব এএফসি কাপে লাইসেন্স পাওয়ার জোর প্রচেষ্টার কথা জানিয়েছিলেন।
এএফসি টুর্নামেন্টে খেলার স্বপ্ন শেষ। সমর্থকদের প্রত্যাশা, আসন্ন ২০২৫-২৬ মৌসুমে লিগ শিরোপা ধরে রাখার জন্য শক্তিশালী দল গঠন করবে মোহামেডান। কিন্তু আলামত ভিন্ন। উজবেক তারকা মুজাফফর মুজাফফরভ জানিয়েছেন, মোহামেডানের পক্ষ থেকে কেউ যোগাযোগ করেনি তার সঙ্গে। অথচ মুজাফফরভ ছিলেন ২০২৪-২৫ মৌসুমের পেশাদার লিগে অন্যতম সেরা পারফরমার। অধিনায়ক এবং সেরা গোলদাতা সুলাইমান দিয়াবাতের সঙ্গে নতুন চুক্তির বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত কথা হয়নি ক্লাবের।
দেশীয় খেলোয়াড়দের সঙ্গেও মোহামেডান কর্তারা যোগাযোগ করেনি বলে পরিষ্কার জানিয়েছেন মেহেদি হাসান মিঠু, গোলরক্ষক সুজন হোসেন আর আশরাফুল হক আসিফ। জানা গেছে, গত মৌসুমের বেতনও বাকি রয়েছে খেলোয়াড়দের। লিগ শেষে ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার সময় ক্লাবের তরফ থেকে খেলোয়াড়দের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সেই যোগাযোগটা হয়ে ওঠেনি। এতে শঙ্কায় পড়েছে দেশীয় খেলোয়াড়দের ভবিষ্যৎ।
প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, একটি মৌসুম শেষ হওয়ার আগে পরবর্তী মৌসুমের জন্য কাক্সিক্ষত খেলোয়াড়দের সঙ্গে চুক্তির বিষয়টি আগাম পাকা করে ফেলে যে কোনো ক্লাব। কিন্তু এবার সেটা হয়নি। শুধু মোহামেডান নয়, বসুন্ধরা কিংস আর ঢাকা আবাহনীর মতো বড় ক্লাবও পরবর্তী দলবদলের জন্য মাঠে নামেনি। ধারণা করা হচ্ছে, ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিরতায় অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ক্লাবগুলো। মোহামেডানেও একই সমস্যা। ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান পদত্যাগ করায় ক্লাবের দলবদল নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে শঙ্কা। গত চার বছর তিনিই ছিলেন ফুটবলে মোহামেডানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক।
২০২১ সালের মার্চে মোহামেডানের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দুই বছর মেয়াদি কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েও পেরিয়েছে দ্বিগুণ সময়। ক্লাবের কর্তারা বারবার নির্বাচনের আশ্বাস দিচ্ছেন। কিন্তু নির্বাচনের কোনো নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হয়নি। ফুটবলের পরিচালনা পর্ষদের নতুন কমিটির নির্বাচন না হলে মোহামেডানের পক্ষে নতুন মৌসুমের জন্য শক্তিশালী দল গঠন করা কঠিন হবে। এরই মধ্যে চ্যাম্পিয়ন মোহামেডানের নতুন খেলোয়াড়দের ওপর ‘নজর’ রয়েছে একাধিক ক্লাবের। অতিসত্বর নতুন অভিভাবক না পেলে মোহামেডানের সাজানো ঘর ভাঙতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, যা দলের জন্য অশনিসংকেত বৈকি।