Logo
×

Follow Us

খেলাধুলা

কঠোর হয়ে সফল পিটার বাটলার

Icon

আসান হাবীব সুমন

প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৫, ১৬:২৮

কঠোর হয়ে সফল পিটার বাটলার

বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল পেয়েছে এশিয়ার ‘এলিট’ শ্রেণির মর্যাদা। অর্জন করেছে ২০২৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অনুষ্ঠেয় এএফসি এশিয়া কাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার ‘টিকিট’। এর আগে বাঘিনীরা টানা দুটি ‘সাফ’ শিরোপা জয়ে গড়েছিল ইতিহাস। এশিয়া কাপে খেলার যোগ্যতা আদায় করে নেওয়া অধিনায়ক আফেইদা খন্দকার আর ঋতুপর্ণা চাকমারা ছাপিয়ে গেছে পূর্বের সাফল্য।

ফুটবল দলীয় খেলা। তবু কখনো কখনো পুরো দলকে ছাপিয়ে বিশেষ কেউ ‘হিরো’ বনে যান। পেলে, দিয়াগো ম্যারাডোনা, লিওনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোরা উৎকৃষ্ট প্রমাণ। তারা নিজেদের দলের চেয়েও বড় তারকা। গুরুত্বপূর্ণ হলেও দলের কোচ থাকেন পার্শ্বচরিত্র হিসেবে। তবে বাঘিনীদের কোচ পিটার বাটলার বুঝি ব্যতিক্রম। ২০২৪ সালের সাফের পর এশিয়া কাপের ‘টিকিট’ এনে দেওয়া বাটলারকে বলা হচ্ছে নারী ফুটবল দলের ‘মাস্টার মাইন্ড’। আপসহীন মানসিকতার জন্য ইংলিশ ভদ্রলোক কুড়াচ্ছেন ভূয়সী প্রশংসা।  

২০২৩ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের এলিট একাডেমির কোচ হিসেবে নিয়োগ পান বাটলার। ২০২৪ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপকে সামনে রেখে বাটলারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয় নারী ফুটবল দলের দায়িত্ব। চায়নিজ তাইপের কাছে ০-৪ গোলে হেরে বাংলাদেশের কোচ হিসেবে বাটলারের অভিষেক। মে মাসে নেপালের কাঠমান্ডুতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১-১ গোলের সমতায় সাফে বাটলারের শিষ্যদের শুরু। পরে ভারত, ভুটান, নেপালকে হারিয়ে সাফের শিরোপা ধরে রাখা বাংলাদেশ গড়ে ইতিহাস। কিন্তু বাটলারের বিরুদ্ধে ওঠে নানা অভিযোগ। তিনি সিনিয়র খেলোয়াড়দের মূল্যায়ন করেন না। শৃঙ্খলা রক্ষায় অধিক কঠোর। এ বছরের ৩০ জানুয়ারি অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের নেতৃত্বে নারী ফুটবলাররা ‘বিদ্রোহ’ করে বসে বাটলারের বিরুদ্ধে। সিনিয়র খেলোয়াড়দের কেউ ব্রিটিশ কোচের অধীনে অনুশীলন কিংবা ম্যাচ খেলতে নারাজ।  

বাটলার নিজের অবস্থানে অনড় ছিলেন। শৃঙ্খলার প্রশ্নে আপস করেননি। সাবিনা, সানজিদাসহ সিনিয়র ১৮ জন খেলোয়াড়কে বাদ দিয়েই শুরু করেন অনুশীলন। প্রায় আনকোরা দল নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে দুটি ম্যাচে হেরেও আসেন। বাটলারের একগুঁয়েমি বাংলাদেশের নারী ফুটবলের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎকে নষ্ট করছে-অভিযোগ উঠতে শুরু করে। কিন্তু বাটলার কোনো সমালোচনায় কান না দিয়ে নিজের কাজ করে গেছেন নিভৃতে। আফেইদা খন্দকারকে ‘অধিনায়ক’ করে ঋতুপর্ণা, মনিকা, রুপনা, তহুরা, সুরভি আকন্দদের নিয়ে উড়ে যান মিয়ানমারে এএফসি বাছাইয়ের লড়াইয়ে।

মিয়ানমারে বাংলাদেশ খেলতে নেমেছিল ‘আন্ডার ডগ’ হিসেবে। ‘সি’ গ্রুপে থাকা বাংলাদেশের ফিফা র‍্যাংকিং ১৩৩। মিয়ানমার ৫৫, বাহরাইন ৯২। ১৪১তম অবস্থানে থাকা তুর্কমেনিস্তান শুধু পিছিয়ে বাঘিনীদের চেয়ে। কিন্তু মাঠের খেলায় র‌্যাংকিং তত্ত্বকে উড়িয়ে দিয়ে আফেইদারা পায় অভাবিত সাফল্য। বাহরাইন আর তুর্কমেনিস্তানের জালে গুনে গুনে সাতটি করে গোল দেয় বাংলাদেশ। স্বাগতিক মিয়ানমারকেও হারিয়ে দেয় ২-১ গোলে।

মিয়ানমারে বাংলাদেশের হয়ে খেলা ৫০ শতাংশ খেলোয়াড়ই অনূর্ধ্ব-২০ বছর বয়সী। নারীদের জাতীয় দল নিয়ে বাটলারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা স্পষ্ট। তবে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনাও ছিল। এশিয়া কাপ বাছাইয়ে ভরাডুবি হলে বাটলার কাঠগড়ায় উঠতেন। কিন্তু নিজের একাগ্রতা, নিপুণ কৌশল আর সঠিক খেলোয়াড় নির্বাচনের দক্ষতায় পাহাড়সম চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম হয়েছেন তিনি। প্রতিপক্ষ বিবেচনায় বাটলারের কৌশল দুর্দান্ত প্রমাণিত হয়েছে। সাফের কোনো দলের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের হারের রেকর্ড ছিল না। বাংলাদেশের হাই ডিফেন্স, অফসাইড ফাঁদের সফল প্রয়োগ আর কাউন্টার অ্যাটাকের কৌশলে হেরে যায় মিয়ানমার। বাহরাইন আর তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ খেলেছে পুরো আক্রমণাত্মক ফুটবল। সব মিলিয়ে মিয়ানমারে বাংলাদেশ দলকে মনে হয়েছে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় ‘পরিপক্ক’। যার কৃতিত্ব বাটলারের।

আর হ্যাঁ, কোচের সঙ্গে ঋতুপর্ণাদের কৃতিত্ব না দিলেও অন্যায় হবে। ঋতুপর্ণা বিগত সাফের ফাইনালে নেপালের বিপক্ষে জয়সূচক গোল করেছেন। মিয়ানমারের বিপক্ষে ঋতুর অসামান্য জোড়া গোল বাংলাদেশকে এনে দিয়েছে স্মরণীয় জয়ের উপলক্ষ। ঋতুকে বলা হচ্ছে বাংলাদেশের ‘মেসি’। নেতা হিসেবে আফেইদা শতভাগ সফল। পোস্টের নিচে রুপনা চাকমা এখন দক্ষিণ এশিয়ার সেরা।

সব মিলিয়ে বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল বাটলারের দিকনির্দেশনায় এশিয়ায় নিজেদের প্রমাণ করার পথে রয়েছে। আশা করা যায়, নারীদের কাঁধে ভর করেই বাংলাদেশের ফুটবল পাবে বিশ্বদরবারে সম্মান।     

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫