
পাল্লেকেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম-সৌন্দর্যে শিল্পীর তুলিতে আঁকা যেন এক নিখুঁত ছবি! সবুজ ঘাসে পা রাখলেই স্বাগত জানাবে দূরের পাহাড় আর শান্ত মেঘ। স্টেডিয়াম তো অনেক হয়। তবে পাল্লেকেলেকে শুধু স্টেডিয়ামের মাপকাঠিতে মাপলে ভুল হবে। এই ভেন্যুতে এলে মনে হবে মেঘ-পাহাড়ের রাজ্যে ঢুকে পড়েছেন। দুই চোখ হারিয়ে যাবে ২২ গজ ছাপিয়ে ড্রেসিংরুমের ওপারে; যেখানে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে মেঘে ঢাকা পাহাড়।
হুনাসগিরিয়া আর রিকিল্লাগাসকাডা-হানতানে পর্বতশ্রেণির কোলে অবস্থিত এই ভেন্যু। যার চারপাশজুড়ে শুধু সবুজ আর সবুজ। প্রকৃতির এই সবুজ ভূস্বর্গে বসে ক্রিকেটের স্বাদ নেওয়া একজন ক্রিকেটপ্রেমীর জন্য বোনাসই বলা চলে। অবাক করা বিষয়, ৩৫ হাজার লোক ধারণ ক্ষমতার এই স্টেডিয়ামে আসনসংখ্যা মাত্র আট হাজার! না ভুল পড়েননি, এই ভেন্যুর চারপাশজুড়েই গ্রিন গ্যালারি। ভিআইপি গ্যালারি ছাড়া মাঠের পুরোটায় সবুজ গালিচা। যে গালিচায় বসে দর্শক দেখে ক্রিকেট।
ক্যান্ডি শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই ভেন্যু তৈরির পেছনে আছেন শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তি মুত্তিয়া মুরালিধরন। দুই ব্যবসায়ীকে সঙ্গে নিয়ে তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে স্টেডিয়ামটির গোড়াপত্তন হয়। ২০০৯ সালে নির্মিত এই ভেন্যু ২০১০ সালে বিশ্বে ১০৪তম টেস্ট ভেন্যু হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এরপর ২০১১ সালের বিশ্বকাপের আগে করে তোলা হয় আরো আকর্ষণীয়। কথা
ছিল, বিশ্বকাপের পর মুরালির নামেই অলঙ্কৃত হবে এই ভেন্যু। কিন্তু রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড ৯৯ বছরের জন্য ইজারা নেওয়ায় সেটি আর হয়নি।
২০১১ সালের মার্চে বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তানের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে শুরু হয় পাল্লেকেলের ওয়ানডে যাত্রা। একই বছর আগস্টে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ দিয়ে শুরু টি-টোয়েন্টি। এই মাঠে সেই বিশ্বকাপে ইতিহাস গড়েন দুই শ্রীলঙ্কান ব্যাটার তিলকারত্নে দিলশান ও উপুল থারাঙ্গা। ২০১১ সালের ২৬ মার্চ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম উইকেটে ২৮২ রানের জুটি গড়েন দুজনে, যেটা ক্রিকেট বিশ্বকাপে প্রথম উইকেটের সর্বোচ্চ জুটি। টি-টোয়েন্টিতে লাসিথ মালিঙ্গার দ্বিতীয়বার চার বলে চার উইকেট নেওয়ার কীর্তিও এই মাঠে। নিজের ১০০তম টি-টোয়েন্টি উইকেটটাও এই মাঠেই পান তিনি।
তবে ইতিহাস আর মাঠের খেলা ছাপিয়ে এই ভেন্যু মুগ্ধ করবে প্রকৃতির কারণে। তাই তো ক্যান্ডিতে আসা পর্যটকদের ভ্রমণ তালিকায় থাকে পাল্লেকেলে। শান্ত এই শহর যেমন টানে ক্যান্ডির লেক, টেম্পল অব ট্রুথ কিংবা অবারিত সবুজের জন্য, তেমনি টানবে পাল্লেকেলের জন্যও। যেখানে বসে খেলা দেখার পাশাপাশি মেঘ ছুঁয়ে যাবে আপনার শরীর। গ্রিন গ্যালারির পাশে থাকা ফুড কার্ডের সামনে দাঁড়িয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে হয়তো মনের অজান্তেই বলে ফেলবেন-পাল্লেকেলে তুমি সত্যিই শিল্পীর তুলিতে আঁকা এক নিখুঁত ছবি!