Logo
×

Follow Us

খেলাধুলা

ফুটবলের ‘তেজস্বিনী’ সাগরিকা

Icon

আহসান হাবীব সুমন

প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২৫, ১২:১০

ফুটবলের ‘তেজস্বিনী’ সাগরিকা

বাংলাদেশের নারী ফুটবল দলের দুর্ধর্ষ স্ট্রাইকার সাগরিকা

সাগরিকা-চার অক্ষরের শব্দটির মধ্যে রয়েছে অদ্ভুত এক রোমান্টিকতার পরশ। সাগরিকা নামটি উচ্চারিত হলে বাঙালির মনে হানা দেয় বাংলা চলচ্চিত্রের কালজয়ী জুটি উত্তম-সুচিত্রা অভিনীত ক্ল্যাসিক সিনেমার স্মৃতি। আবার চট্টগ্রামে বঙ্গোপসাগর-তীরবর্তী সাগরিকার বালুকাবেলা আর স্টেডিয়ামের রয়েছে আন্তর্জাতিক পরিচিতি। এ ছাড়া সাগরিকা হচ্ছেন বাংলাদেশের নারী ফুটবল দলের একজন দুর্ধর্ষ স্ট্রাইকার।

১১-২১ জুলাই বাংলাদেশের মাটিতে হয়ে গেল সাফ নারীদের অনূর্ধ্ব-২০ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ। স্বাগতিক বাংলাদেশ ছাড়াও নেপাল, ভুটান ও শ্রীলঙ্কার অংশগ্রহণে ‘ডাবল লিগ’ পদ্ধতির টুর্নামেন্টে সাগরিকা পেয়েছেন ‘সেরা খেলোয়াড়’ পুরস্কার। শতভাগ সাফল্যে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের সামনে দাঁড়াতে পারেনি প্রতিপক্ষের কেউ। কোচ পিটার বাটলার জাতীয় নারী দলকে সাফ শিরোপা আর এএফসি এশিয়া কাপের ‘টিকিট’ এনে দেওয়ার পর অনূর্ধ্ব-২০ পর্যায়ে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করলেন। ২০২৩ সালের পর টানা দ্বিতীয় সাফ নারীদের অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ।

২০২৪ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাফ নারীদের অনূর্ধ্ব-১৯ টুর্নামেন্টে ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। সেই টুর্নামেন্টে সেরা খেলোয়াড় ছাড়াও চার গোল করে ভারতের শিবানি আর পূজার সঙ্গে যৌথভাবে সেরা গোলদাতা ছিলেন সাগরিকা। ফাইনালে নিশ্চিত হারের মুখে থাকা বাংলাদেশকে ম্যাচে ফিরিয়েছিল সাগরিকার গোল। আসরে বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আফেইদা খন্দকার। তিনি এখন জাতীয় দলের অধিনায়ক। সদ্যঃসমাপ্ত অনূর্ধ্ব-২০ দলের শিরোপা জয়েও নেতৃত্ব দিয়েছেন আফেইদা। 

সাগরিকা অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপে ৮ গোল করেছেন। ১০ গোল করে নেপালের পূর্ণিমা রাই হয়েছেন সর্বোচ্চ গোলদাতা। পুরস্কারটি সাগরিকাও জিততে পারতেন। কিন্তু নেপালের সঙ্গে প্রথম দেখায় লাল কার্ড আর তিন ম্যাচ নিষেধাজ্ঞায় পড়েন। ‘অঘোষিত’ ফাইনালে নেপালের বিপক্ষেই ফিরে করেন চার গোল। ম্যাচটি ৪-০ গোলে জিতেছে বাঘিনীরা। বলা যায়, এক সাগরিকাতে ধ্বংস হয়েছে নেপাল। ম্যাচ-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে নেপালের সহকারী কোচ নির্দ্বিধায় সাগরিকাকে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা স্ট্রাইকার হিসেবে স্বীকৃতি দিতে কার্পণ্য করেননি।  

সাগরিকা টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেন। ১৮ বছরের সাগরিকার জাতীয় দলে অভিষেক হয়েছে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে। থিম্পুতে স্বাগতিক ভুটানের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক অভিষেকেই হ্যাটট্রিক করেন। তবে জাতীয় দলে তিনি থিতু হতে পারেননি এখনো। কোচ বাটলার বলেছেন, ‘সাগরিকা দুর্দান্ত ফরোয়ার্ড। সে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করে যাচ্ছে। তার এই পারফরম্যান্স জাতীয় দলের জন্য প্রবেশদ্বার।’

বাংলাদেশের নারীদের জাতীয় দলে ঋতুপর্ণা চাকমা, তহুরা খাতুন আর শামসুন্নাহাররা সাফল্য পাচ্ছেন। সাগরিকাকে জাতীয় দলে নিয়মিত জায়গা পেতে হয়তো অপেক্ষা করতে হবে। সাগরিকার বড় গুণ হলো, তিনি ঠান্ডা মাথায় দারুণ ফিনিশিং করতে পারেন। চাপের মুখেও প্রতিপক্ষের বক্সে খেই হারান না। রয়েছে দূরপাল্লার শটে গোল করার ক্ষমতা। সব মিলিয়ে পূর্ণাঙ্গ স্ট্রাইকার হওয়ার সব বৈশিষ্ট্য সাগরিকার মধ্যে বিদ্যমান। তিনি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ তারকাÑনিঃসন্দেহে বলে দেওয়া যায় এই কথা।

ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার রাঙ্গাটুঙ্গি ইউনাইটেড প্রমীলা ফুটবল একাডেমির খেলোয়াড় সাগরিকা। ছোট থেকেই ফুটবলের প্রতি সাগরিকার টান ছিল। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় বঙ্গমাতা টুর্নামেন্ট দিয়ে ফুটবল খেলা শুরু তার। ২০২১-২২ নারী ফুটবল লিগে এফসি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হয়ে অভিষেক মৌসুমেই ১০ গোল করে নজর কাড়েন তৎকালীন কোচ গোলাম রাব্বানি ছোটনের। তিনি সাগরিকাকে নিয়ে আসেন বয়সভিত্তিক দলে। সেই থেকে তিনি বয়সভিত্তিক আর জাতীয় দলের লাল-সবুজের জার্সিতে নিজেকে প্রমাণ করে চলেছেন সুযোগ পেলেই।

সাগরিকার ফুটবলার হয়ে ওঠার গল্পটা বাংলাদেশের বেশির ভাগ নারী ফুটবলারের সঙ্গে মিলে যায়। বাবা লিটন মিয়া চায়ের দোকানি। মা আনজুয়া বেগম গৃহিণী। সাগর নামে আছে এক ভাই। আর্থিক সমস্যার কারণে মা-বাবা একটা বুটও কিনে দিতে পারেননি। কিন্তু সাগরিকা থামেননি। স্থানীয় কোচ তাজুল ইসলামের অনুপ্রেরণায় নিজেকে ফুটবলার হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হননি। সাগরিকার সামনে এখনো অনেক পথ পাড়ি দেওয়া বাকি। সেটি নিজেও জানেন সাগরিকা। তার ভাষায়, ‘আমার লক্ষ্য জাতীয় দলে স্থায়ীভাবে জায়গা পাওয়া। কাজটা কঠিন। আমাদের জাতীয় দল খুব ভালো। দুর্দান্ত পারফরম্যান্স ছাড়া জায়গা পাওয়া খুব কঠিন। আমাকে প্রচণ্ড পরিশ্রম করতে হবে।’ 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫