
শেষ বিকেলের সূর্য যখন ডাম্বুলার আকাশে রং ছড়ায়, ইবানকাটুয়ার শান্ত জলে সেই আলো ঠিকরে পড়ে তৈরি করে এক স্বর্গীয় প্রতিচ্ছবি। ঠিক সেখানেই মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে রাঙ্গিরি ডাম্বুলা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম।
রাঙ্গিরি শব্দটি এসেছে পালি ও সিংহলি থেকে। যার অর্থ ‘জ্যোতির্ময়’! নামের মতোই এ যেন চমৎকার এক শিল্পকর্ম। যার পটভূমিতে আছে সিগিরিয়া নামক বিস্ময়ের আবছায়া, ইবানকাটুয়া লেকের মুগ্ধতা আর চারপাশে কৃষ্ণচূড়ার আগুন! এমন পরিবেশের মাঝে ক্রিকেটের লড়াই দেখা একজন ক্রিকেটপ্রেমীর জন্য নিশ্চিতভাবে ঐন্দ্রজালিক অভিজ্ঞতা হতে পারে।
বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে সেই অভিজ্ঞতা নেওয়ার আগে গোধূলির আলোয় রাঙ্গিরির রং দেখতে ছুটে গেলাম ইবানকাটুয়া লেকের ধারে। ভরা পূর্ণিমা নামার আগে প্রকৃতি যেন নিজেকে উজাড় করে দিয়েছে রাঙ্গিরিকে। গোধূলির সোনালি আলোর নরম ছোঁয়া মাঠের প্রতিটি কোনাকে আলোকিত করছিল। চারপাশে
কৃষ্ণচূড়ার লাল ফুলগুলো নাচছিল বাতাসে। ইবানকাটুয়া লেকের জলও অপেক্ষার প্রহর গুনছিল পূর্ণিমার জন্য। সবমিলিয়ে এক অপরূপ সৌন্দর্যের খেলা যেন মুছে দিল সব ক্লান্তি।
অবশ্য প্রকৃতির কোলে গড়ে ওঠা এই মাঠ আকারে অত বড় নয়। তুলনীয় নয় আধুনিক স্টেডিয়ামগুলোর সঙ্গে। আধুনিক স্টেডিয়ামের সব সুযোগ-সুবিধাও নেই। তবে এই মাঠকে আলাদা করেছে
প্রকৃতির বিশালতা। পাহাড় আর জলের ধারে অনেকটা পার্ক থিমে গড়া এই ভেন্যু। মাত্র ১৬ হাজার ধারণক্ষমতার মাঠটি তৈরি করতে লেগেছে মাত্র ১৬৭ দিন! ২০০০ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হয়ে ২০০১ সালের মার্চেই তৈরি হয়ে যায় এই রাঙ্গিরি ডাম্বুলা স্টেডিয়াম। সে মাসে শ্রীলঙ্কা-ইংল্যান্ডের ম্যাচ দিয়ে হয়ে যায় আন্তর্জাতিক অভিষেক। অবশ্য এর কিছুদিন পরে আইনি জটিলতায় কিছু সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বন্ধ ছিল। পরে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড সমস্যা মিটিয়ে ২০০৩ সালে ফের ক্রিকেট ফেরায় এই মাঠে।
শ্রীলঙ্কার উত্তর-মধ্য প্রদেশে অবস্থিত এই স্টেডিয়াম নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল সারা বছর খেলার জন্য উপযোগী থাকা। কারণ শ্রীলঙ্কার এই অঞ্চল শুষ্ক। বৃষ্টিপাত কম। তাই সারা বছর নির্বিঘ্নে ওয়ানডে খেলার উপযোগী রাখতেই নির্মাণ এই স্টেডিয়াম। স্টেডিয়ামটির গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডে রয়েছে ভাসমান ছাদ। এটি এমন ডিজাইনে তৈরি, যা দর্শকের জন্য খুব কাছ থেকে খেলা উপভোগের সুযোগ করে দেয়। আকারে খুব বেশি বড় না হলেও এখানে রয়েছে মিডিয়া সেন্টার ও ভিআইপি লাউঞ্জ। ২০২৪ সালে উদ্বোধন করা হয় সেন্টার অব এক্সিলেন্স। যেখানে রয়েছে ইনডোর অনুশীলন সুবিধা ও মেডিক্যাল ফ্যাসিলিটি।
তবে এসবের চেয়ে বড় কথা, পর্যটকদের হৃদয়ে জায়গা করে নেওয়া স্টেডিয়ামের চত্বর। ভিআইপি গ্যালারিতে দাঁড়ালেই ডাম্বুলা রকের দৃশ্য। আরেক পাশে সুবিশাল লেক। মাঝে ক্রিকেট গ্রাউন্ড! ডাম্বুলার এই মাঠে স্পিন কিংবদন্তি মুত্তিয়া মুরালিধরন নিয়েছেন সর্বাধিক ৪২ উইকেট ও আরেক লঙ্কান কিংবদন্তি মাহেলা জয়াবর্ধনে করেছেন সবচেয়ে বেশি রান। এই মাঠেই সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার সৌরভ গাঙ্গুলী পেয়েছিলেন তার ১০ হাজারতম ওয়ানডে রান।
রাঙ্গিরির ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের নামও। ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কা সফরে এই মাঠে বাংলাদেশের পঞ্চম বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিক করেন তাসকিন আহমেদ।