Logo
×

Follow Us

খেলাধুলা

ফুটবলের রানী মার্তার অনন্য নজির

Icon

আহসান হাবীব সুমন

প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২৫, ১৫:২৩

ফুটবলের রানী মার্তার অনন্য নজির

মার্তা

সর্বকালের সেরা ফুটবলার নিয়ে তর্ক হলে উঠে আসে পেলে, ডিয়াগো ম্যারাডোনা, লিওনেল মেসি আর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর নাম। আর নারী ফুটবলে? মেয়েদের ফুটবলে ‘রানী’র সিংহাসন দখলে এগিয়ে থাকবেন মার্তা। ব্রাজিলিয়ান মার্তাকে ‘ট্র্যাজেডি কুইন’ হিসেবেও আখ্যায়িত করা যায়। নারী ফুটবল ইতিহাসের সেরা হয়েও তিনি জিততে পারেননি ফিফা বিশ্বকাপ কিংবা অলিম্পিক স্বর্ণপদক। তবু ফুটবল বোদ্ধাদের কাছে সর্বকালের সেরা মার্তা।

১৯৮৬ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ব্রাজিলের আলাগাওস রাজ্যে জন্ম নেওয়া মার্তার বয়স ৩৯ পেরিয়েছে। ২০২৪ সালে অলিম্পিক স্বর্ণ জয়ের স্বপ্ন নিয়ে প্যারিসে পা রেখেছিলেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ০-১ গোলে হেরে রৌপ্যপদক নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় মার্তার ব্রাজিলকে। ২০০৪ ও ২০০৮ সালে অলিম্পিক ফুটবল ফাইনালে উঠেও মার্তা নাগাল পাননি সোনার হরিণের। ২০০৭ সালের ফিফা নারী বিশ্বকাপের ফাইনালে ব্রাজিল হেরে যায় জার্মানির কাছে। সেই বিশ্বকাপে ৭ গোল করে ‘গোল্ডেন বুট’ আর অসাধারণ ফুটবল নৈপুণ্যে জয় করেন টুর্নামেন্ট সেরার ‘গোল্ডেন বল’।

২০০০ সালে ভাস্কো ডা গামা ক্লাবের হয়ে পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু করা মার্তা প্যারিস অলিম্পিকের পর ভেঙে পড়েছিলেন। মার্তা সিদ্ধান্ত নিলেন আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে সরে দাঁড়াবেন। তবে ২০২৫ সালের শুরুতেই ‘এনডব্লিউএসএল’-এর  মার্কিন দল অরল্যান্ডো প্রাইডের সঙ্গে আরো দুই বছরের চুক্তি করেন তিনি। ২০১৭ সাল থেকে অরল্যান্ডোর হয়ে খেলছেন মার্তা।

মার্তা আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানালেও ব্রাজিলিয়ান কোচ আর্থার এলিয়াস হাল ছাড়েননি। তিনি চলতি বছরের মে মাসে জাপানের বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচের স্কোয়াডে মার্তাকে রেখে দল ঘোষণা করেন। মার্তাকে রেখেছিলেন ২০২৫ সালের নারী কোপা আমেরিকা টুর্নামেন্টে। চল্লিশ ছুঁই ছুঁই মার্তা কোপা আমেরিকাতেই দেখালেন ‘বুড়ো হাড়ের ভেল্কি’। ফাইনালে কলম্বিয়ার বিপক্ষে জোড়া গোল করলেন। ১২০ মিনিটের রুদ্ধশ্বাস কোপা আমেরিকার ফাইনাল অমীমাংসিত ছিল ৪-৪ গোলে। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকার লড়াইয়ে ৫-৪ গোলে কলম্বিয়াকে হারায় ব্রাজিল। মার্তা অবশ্য পেনাল্টি শ্যুট আউটে গোল করতে পারেননি। তবু ফাইনালের সেরা খেলোয়াড় ছিলেন মার্তা। হয়েছেন টুর্নামেন্ট সেরাও।  

নারীদের কোপা আমেরিকায় ব্রাজিলের একচেটিয়া আধিপত্য অব্যাহত রয়েছে। ১৯৯১ সাল থেকে মাঠে গড়ানো কোপা আমেরিকা ফিমেনিনা নামের টুর্নামেন্টটি ১০ বারের মধ্যে ৯ বার জিতেছে ব্রাজিল। আর মার্তা জিতেছেন চারবার। ক্যারিয়ারের চতুর্থ কোপা আমেরিকা জয়ের পর ব্রাজিলের জীবন্ত কিংবদন্তি ফুটবলার বলেছেন, ‘ফাইনালে দুই গোল করেছি। কিন্তু টাইব্রেকারে গোল করতে পারিনি। আমি খুব ভেঙে পড়েছিলাম। সৃষ্টিকর্তা আমাকে নিরাশ করেননি। তিনি আমাকে আমার ক্যারিয়ারের শেষ কোপা আমেরিকা ট্রফি উপহার দিয়েছেন।’

টানা পাঁচবারসহ মোট ছয়টি ফিফা নারী বেস্ট ফুটবলার অ্যাওয়ার্ড দখলে নিয়েছেন তিনি, যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ। জার্মানির সাবেক গ্রেট ব্রিগিত প্রিঞ্জ তিনটি আর মার্কিন কিংবদন্তি মিয়া হ্যাম দুটি ফিফা বেস্ট অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন। প্রিঞ্জ আর মিয়া হ্যাম দুজনই দুটি করে ফিফা বিশ্বকাপ জিতেছেন। কিন্তু সর্বকালের সেরা নারী ফুটবলার তালিকায় তারা কেউ ছাড়িয়ে যেতে পারেননি মার্তাকে।

ব্রাজিলের হয়ে ২১৩ ম্যাচে ১২২ গোল করেছেন মার্তা। নারীদের আন্তর্জাতিক ফুটবলে সবচেয়ে বেশি ১৯০ গোল করেছেন কানাডার ক্রিস্টিনা সিনক্লেয়ার। আর মার্তা নারী কিংবা পুরুষদের ফিফা বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ১৭ গোলের মালিক। এমনকি নারী-পুরুষ মিলিয়ে তিনিই প্রথম ফুটবলার হিসেবে টানা পাঁচটি বিশ্বকাপে গোল করার নজির গড়েন। টানা পাঁচটি অলিম্পিক আসরে গোল করা একমাত্র ফুটবলারও মার্তা। ২০০৩-০৪ মৌসুমে সুইডেনের উমিয়া আইকে ক্লাবের হয়ে উয়েফা উইমেন্স চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছেন মার্তা। জিতেছেন ব্রাজিলের বিখ্যাত ক্লাব সান্তোসের হয়ে ২০০৯ সালে দক্ষিণ আমেরিকার সেরা কোপা লিবার্তাদোরেস ফিমেনিনা। ক্লাব ক্যারিয়ারে মার্তার শিরোপা সংখ্যা ১৫।

মার্তা বিশ্বকাপ জিততে পারুক আর না পারুক, তিনি নারী ফুটবল দুনিয়ার বিস্ময়। নারী ফুটবলের সত্যিকারের ‘রানী’।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫