বাবা হওয়ার পর মনে হয়েছে জীবনটাই বদলে গেছে : শরিফুল

হিমু আক্তার
প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২৫, ১৫:২৪

বাইশ গজে শরিফুল ইসলামকে দেখলে মনে হয়, যেন সবকিছু জিতেই নিতে হবেÑস্পিডে, আগ্রাসনে, উদযাপনে! কিন্তু খেলার বাইরে? সেখানে তিনি ঠিক উল্টো। নরম, হাসি-খুশি, সংসার-পাগল এক মানুষ। যার অবসর কাটে ছেলের পাশে বসে, তামিল সিনেমা দেখে আর স্ত্রী ফারদিন শেখ চাঁদনীর রান্নাঘর থেকে ভেসে আসা হাঁস-ভুনার সুঘ্রাণে মুগ্ধ হয়ে। বাবা হওয়ার পর শরিফুলের জীবন ঠিক কতটা বদলেছে? একান্ত সাক্ষাৎকারে সেই গল্পই বলেছেন বাংলাদেশি তারকা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হিমু আক্তার...
মাঝে কিছুটা সময় চোটের মধ্যে ছিলেন, এখন কতটা ফিট মনে করছেন নিজেকে?
যেকোনো খেলোয়াড় যখন চোট পায় তখন তার খারাপ লাগে। সে ক্ষেত্রে আমারও খারাপ লাগার দিকটা আছে। কিন্তু ইনজুরি আসবেই, তাতে হতাশ হওয়া যাবে না। হতাশ না হয়ে কী করলে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে মাঠে ফেরা যায়, সেদিকে ফোকাস দিই আমি। কামব্যাক করতেই কাজ করি তখন। এ সময় পরিবারও খুব সাপোর্ট দেয়। কপালে হয়তো ছিল না, সেটা বলেই সবাই সাপোর্ট দেয়। এখন আপাতত ভালো অবস্থায় আছি।
সিরিজ চলাকালে চোট পেয়ে ছিটকে গেলে টিভির সামনে বসলে কেমন অনুভব হয়?
টিভির সামনে বসলেও তখন আক্ষেপ করার কিছু নেই আসলে। যেটা কপালেই নেই, সেটা নিয়ে আক্ষেপ করে তো লাভ নেই। দেখা গেছে, আমি সুস্থ থাকলেও একাদশে সুযোগ না-ও পেতে পারতাম। মেনে নিতে হবে। ওই সময় খেলা দেখি। ফাস্ট বোলাররা যখন বোলিংয়ে আসে তখন প্রতিটি বল দেখার চেষ্টা করি।
বর্তমানে টিম ম্যানেজমেন্ট পেসারদের বিশ্রাম দিয়ে দিয়ে খেলাচ্ছে, এটা কতটা ইতিবাচক হিসেবে দেখেন?
অবশ্যই এটি একটি ইতিবাচক দিক। বিশ্রাম দিয়ে খেলালে পেসারদের রিকভারি করা সহজ হয়। কোনো ম্যাচে যদি কোনো পেসার চোট পায় তখন আরেকজন পেসার বিকল্প হিসেবে হাতে থাকে, যিনি আগেই খেলার মধ্যে আছেন ও খেলার জন্য প্রস্তুত-আসলে এ ক্ষেত্রে খেলার জন্য সবাই প্রস্তুত থাকে, নার্ভাসনেসও থাকে না-তাই আমি মনে করি, এটা ভালো দিক। দলের জন্যও ভালো, নির্দিষ্ট ওই বোলারের রিকভারির জন্য ভালো। এ ছাড়া চোটে পড়ার শঙ্কাও কম থাকে।
টিম ম্যানেজমেন্টের হাতে অনেক পেসার। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলাতে পারে। এটা আপনাদের জন্য একটা স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতাও কি না...
অবশ্যই এটা হেলদি ব্যাপার। এটা আমরা খুব উপভোগ করি। এ ক্ষেত্রে সবার মধ্যে ভালো করার তাড়না থাকে। যত ভালো করব আমাদের ডিমান্ডটাও ভালো থাকবে। শুধু জাতীয় দল নয়, যারা বাইরে আছে দলের তারাও কিন্তু যেখানে খেলছে ভালো করছেন, ভালো শেপে আছেন।
তরুণ পেসারদের জন্য পরামর্শ কী?
এখনকার তরুণ পেসাররা খুব ডিসিপ্লিন। এটা তাদের ধরে রাখতে হবে। একজন পেসারের জন্য ডিসিপ্লিন খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদি ক্যারিয়ার লম্বা করতে চান তাহলে অবশ্যই ডিসিপ্লিনড হতে হবে। পেসারদের নানা সময় চোট হানা দেয়। তাই নিজেদের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রত্যেক মানুষকে ডিসিপ্লিন থাকতে হয়। ফাস্ট বোলারদের ক্ষেত্রে এটা বেশি দরকার।
গ্রামের বন্ধুদের কাছে তারকা শরিফুল আসলে কেমন?
গ্রামের বন্ধুদের কাছে আমি কোনো তারকা না। আমি স্রেফ বন্ধু। আগের শরিফুলই আছি। কোনো পরিবর্তন নেই। আগে যেমন ছিলাম তেমনই। মজা করি, আড্ডা দিই। শুধু বাড়তি যোগ হয়েছে ভালো পারফরম্যান্সের আবদার। আমি ভালো পারফরম্যান্স করলে যাতে ওরা বুক ফুলিয়ে বলতে পারে যে, বন্ধু শরিফুল দেশের জন্য ভালো করছে। ঢাকায় খেলা হলে অনেক বন্ধুই খেলা দেখতে যায়। যারা গ্রামে আছে তারাও টিভিতে দেখে।
বাবা হয়েছেন, দায়িত্ব বেড়েছে। খেলার বাইরে বাচ্চার সঙ্গে মুহূর্তটা কেমন কাটে?
এটা আসলে অন্য রকম। দুনিয়ার যত কষ্ট-বেদনা যাই হোক, বাবুকে দেখলেই সব ভুলে যাই। বাবু আল্লাহর দেওয়া সবচেয়ে বড় উপহার। এই অনুভূতি আসলে বলে বোঝানো যাবে না। বাবা হওয়ার পর মনে হয়েছে জীবনটাই বদলে গেছে। এখন ফ্রি হলে বাবুকে নিয়ে ঘোরা, বাবুর সঙ্গে খেলা করা, খুনসুটি করা-এসবেই এখন সময় কাটে।
ক্রিকেটার বাবার ছেলে বড় হয়ে কী হবে?
বড় হয়ে ছেলে নিজে কী হতে চায় সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমি কোনো কিছু বানাতে চাই না। ওর যেটা ভালো লাগবে, সেটাই করবে।
সিনেমা দেখা হয় অবশ্যই? কেমন সিনেমা দেখতে পছন্দ করেন?
হ্যাঁ, সিনেমা দেখা হয় সুযোগ পেলেই। আমি তামিল সিনেমা দেখতে পছন্দ করি। সময় পেলে তামিল সিনেমাই দেখে থাকি।
প্রেমের পর আপনার পরিণয়। বিয়ের পর জীবনে ঠিক কতটা পরিবর্তন এসেছে?
জীবনে তো পরিবর্তন অবশ্যই এসেছে। বিশেষ করে যখন খারাপ সময় যায় তখন সে আমাকে সাপোর্ট করে, বেশি বেশি কথা বলে আমার সঙ্গে, আমাকে রিল্যাক্স রাখার চেষ্টা করে। অনেক সময় ভালো কিছু কথাও অনেক কিছু পাল্টে দেয়। তো সেটা আমার স্ত্রী করে। আর এখন আমার প্রতিটি ভালো-খারাপ মুহূর্তই তাকে নিয়ে।
কী খেতে ভালোবাসেন, কী অপছন্দ করেন? বিশেষ করে স্ত্রীর হাতের প্রিয় রান্না কোনটি?
খাবারে মিষ্টি জাতীয় জিনিস কম খাই। সাধারণ খাবারই আমার ভালো লাগে। বিফ কালো-ভুনা ভালো লাগে। মাছ ভাজি, ডাল-ভাত এসবই পছন্দ। আর ওর সব রান্নাই দারুণ। সে যখন যেটা রান্না করে সেটাই যত্ন নিয়ে করে। তার হাতে স্পেশাল হলো হাঁস ভুনা। তা ছাড়া বিফ কালো-ভুনাও খুব ভালো রান্না করে।
খেলাধুলা শেষে একটা সময় থামবেন, সে সময়ের জীবনকে কীভাবে দেখেন?
খেলাধুলা শেষে কী হবে এটা অনেক দূরের চিন্তা। এটা নিয়ে আমি ভাবি না। এখন আমি খেলব শুধু, খেলা নিয়ে ভাবি। এরপর সময় যেখানে নিয়ে যায়, যাবে। এটা আমি সময়ের হাতেই ছেড়ে দিলাম।