Logo
×

Follow Us

খেলাধুলা

আত্মবিশ্বাসী অধিনায়ক আফঈদা

Icon

আহসান হাবীব সুমন

প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২৫, ১৫:৩১

আত্মবিশ্বাসী অধিনায়ক আফঈদা

আফইদা খন্দকার

খুব সাধারণ চেহারার মেয়েটির বয়স ১৮ পেরিয়েছে মাত্র। ছিপছিপে গড়ন, বুদ্ধিদীপ্ত চাহনি আর মিষ্টি হাসির অধিকারী মেয়েটিকে শান্ত স্বভাবের জন্য আলাদা করে চেনার উপায় নেই। তবে ইস্পাত কঠিন মনোবল আর নেতৃত্ব গুণে সেই মেয়েটি হয়ে উঠেছে অসাধারণ। তিনি বাংলাদেশের বয়সভিত্তিক আর জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক আফঈদা খন্দকার। যার নেতৃত্বে বাংলাদেশের মেয়েরা দক্ষিণ এশিয়ার গণ্ডি ছাড়িয়ে এখন এশিয়া মহাদেশের এলিট শ্রেণিভুক্ত। কিন্তু আফঈদা তাতেও তৃপ্ত নন। তিনি বাংলাদেশকে ফিফা নারী বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ মঞ্চে খেলতে দেখার স্বপ্নে বিভোর।  

২০২৫ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশের জাতীয় নারী ফুটবল দল এএফসি এশিয়া কাপের ‘টিকিট’ অর্জনে গড়েছিল নতুন ইতিহাস। একই মাসে বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-২০ নারী দল জিতেছে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। আগস্টে বাংলাদেশ পেল এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ এশিয়া কাপের চূড়ান্তপর্বে খেলার ছাড়পত্র। তিনটি অভাবিত সাফল্যেই বাংলাদেশকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন আফঈদা। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে আফঈদার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যৌথভাবে ভারতের বিপক্ষে জিতেছে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফি। শুধু অধিনায়ক হিসেবে নয়, দলের সাধারণ সদস্য হিসেবে আফঈদার ঝুলিতে আছে ২০২১ সালের সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ এবং ২০২৩ সালের সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপ শিরোপা। ২০২৪ সালের অক্টোবরে নেপালে অনুষ্ঠিত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে টানা দ্বিতীয় শিরোপা জিতে ইতিহাস গড়া বাংলাদেশ দলে আফঈদা ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।    

১০ আগস্ট বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২০ নারী দল পেয়েছে এশিয়া কাপের টিকিট। ‘এইচ’ গ্রুপের বাছাইয়ে বাংলাদেশ আর দক্ষিণ কোরিয়া বড় ব্যবধানে হারায় লাওস আর পূর্ব তিমুরকে। শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ ভিয়েনতিয়েনের নিউ লাওস ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে ১-৬ গোলে হেরে যায় শক্তিশালী দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে। তবে ‘ই’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন চীন ৮-০ গোলে লেবাননকে হারিয়ে দিলে ভাগ্য খুলে যায় পিটার বাটলারের শিষ্যদের।

এশিয়ার ৩৩টি দেশ নিয়ে ৬ আগস্ট মাঠে গড়িয়েছিল এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ বাছাইপর্ব। আট গ্রুপের আট সেরা দলের সঙ্গে সেরা তিন রানার আপ দল পেয়েছে ২০২৬ সালে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় মূল আসরে খেলার টিকিট। বাংলাদেশ সেরা তিন রানার আপে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করেছে। দুর্দান্ত ছন্দে থাকা বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২০ দল এশিয়া কাপের টিকিট পাওয়াটা প্রত্যাশিত ছিল। ২০২৪ সাল থেকে টানা ১২ ম্যাচে হারেনি দলটি। ১৩তম ম্যাচে পরাজয়ের দেখা মিলেছে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে।

আফঈদা মূলত সেন্টার ব্যাক বা স্টপার পজিশনে খেলেন। প্রতিপক্ষের আক্রমণ রুখে দেওয়া মূল কাজ বাংলাদেশের অধিনায়কের। তবে নিজেদের রক্ষণ সামলে প্রতিপক্ষের জালে বল পাঠাতেও বেশ পটু। ২০২২ সালে ভারতের মাটিতে সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ চ্যাম্পিয়নশিপে মাত্র ৪৩ সেকেন্ডে গোল করার রেকর্ড আছে তার। হ্যাটট্রিক করেছিলেন ২০২১ সালে দেশের মাটিতে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষেও টায়ার-১ পর্যায়ে গোল করার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন তিনি। দলের প্রয়োজনে উইং ধরে ছুটে যাওয়া, মধ্যমাঠে অসীম সাহস নিয়ে দাঁড়িয়ে যেতেও পিছপা হন না আফঈদা। এক কথায় আফঈদাকে নারী ফুটবলের ‘সব্যসাচী’ বললেও খুব একটা ভুল হবে না। 

 ২০২৩ সালে হুয়াংজু এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের প্রতিনিধিত্ব করা আফঈদার ফুটবলে হাতেখড়ি বাবা খন্দকার আরিফ হাসান প্রিন্সের কাছে। সাতক্ষীরার এই মেয়ে জেলার বয়সভিত্তিক দলে খেলেছেন। ২০১৬ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় যোগ দেন বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি)। ২০১৯ সালে ভারতে হওয়া সুব্রত মুখার্জি কাপ অনূর্ধ্ব-১৭ আন্তর্জাতিক বালিকা ফুটবল টুর্নামেন্টে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছিলেন বিকেএসপির আফঈদা।

২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে আফঈদার অভিষেক ছিল অপ্রত্যাশিত আর নাটকীয়। জাতীয় দলের নিয়মিত অধিনায়ক সাবিনা খাতুনসহ ১৮ জন ফুটবলার বিদ্রোহ করে বসেছিল কোচ বাটলারের বিপক্ষে। ইংলিশ কোচ বিদ্রোহীদের বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত নবীনদের নিয়ে দল গড়েন। নেতৃত্বের আর্মব্যান্ড তুলে দেন আফঈদার হাতে। যথেষ্ট সংশয় থাকলেও তিনি ‘অধিনায়ক’ হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন শতভাগ। বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতেও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তিনি।

বাংলাদেশ দল নিয়ে আত্মবিশ্বাসী আফঈদার সাহসী উচ্চারণ, ‘এশিয়ান কাপে খেলাই আমাদের শেষ লক্ষ্য নয়। বাংলাদেশকে আমি দেখতে চাই বিশ্বকাপের মঞ্চে।’ 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫