
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো
মাত্র বছর তিনেক আগেও ‘সর্বকালের সেরা ফুটবলার’ প্রশ্নে লিওনেল মেসি আর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে নিয়ে তর্কটা ছিল জমজমাট। কিন্তু ২০২২ সালে কাতারে ফিফা বিশ্বকাপ জয়ের মাধ্যমে আর্জেন্টাইন ‘জাদুকর’ মেসি নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। রোনালদো চেষ্টা করে যাচ্ছেন চির প্রতিদ্বন্দ্বীকে ছোঁয়ার। কিন্তু ভাগ্যদেবীর কৃপা কিছুতেই পাচ্ছেন না পর্তুগিজ মহানায়ক।
২৩ আগস্ট রোনালদোর ক্লাব আল নাসর সৌদি আরবের ‘সুপার কাপ’ ফাইনালে হেরে গেছে আল আহলি কাছে। টাইব্রেকারে নিষ্পত্তি হওয়া ম্যাচের নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা ২-২ গোলে অমীমাংসিত ছিল। পরে পেনাল্টি শ্যুটআউটে রোনালদোর দল হেরে যায় ৩-৫ গোলের ব্যবধানে। হংকং স্টেডিয়ামে আয়োজিত সৌদি সুপার কাপ ফাইনালে ৪১ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করেছিলেন রোনালদো। লক্ষ্যভেদ করেন টাইব্রেকার শটে।
হংকং স্টেডিয়ামে আল নাসরের জার্সিতে শততম গোলের দেখা পেয়েছেন রোনালদো। বিশ্বের প্রথম ফুটবলার হিসেবে চারটি ভিন্ন দেশের চার ক্লাবের হয়ে গোলের সেঞ্চুরি করলেন সিআর সেভেন। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে আল নাসরে যোগ দেন রোনালদো। ক্লাবটির হয়ে ১১৩ ম্যাচে ১০০ গোলের মাইলফলক ছুঁয়েছেন তিনি। সৌদি প্রো লিগে রোনালদোর গোলের সংখ্যা ৭৪। এ ছাড়া এএফসি ক্লাব আসরে ১৪, আরব কাপে ৬, কিংস কাপ ও সুপার কাপে করেছেন তিনটি করে গোল।
রোনালদো সবচেয়ে বেশি ৪৫০ গোল করেছেন স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে। এ ছাড়া ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে ১৪৫ আর ইতালির জুভেন্তাসে তার গোলের সংখ্যা ১০১। তিনটি ভিন্ন ক্লাবের হয়ে কমপক্ষে ১০০ গোল করেছেন স্পেনের ইসিদ্রো লাঙ্গারা আর দুই ব্রাজিলিয়ান রোমারিও এবং নেইমার জুনিয়র। তবে লাঙ্গারা একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে তিনটি ভিন্ন মহাদেশের ক্লাবে খেলে গোলের সেঞ্চুরি করেছেন। ১৯৩০-৩৬ পর্যন্ত স্প্যানিশ ক্লাব ওভিয়েদো, ১৯৩৯-৪৩ পর্যন্ত আর্জেন্টাইন ক্লাব স্যান লোরেঞ্জো আর ১৯৪৩-৪৬ পর্যন্ত মেক্সিকান ক্লাব এফসি অ্যাস্পানার হয়ে কমপক্ষে ১০০টি করে গোল করেন লাঙ্গারা।
সৌদি আরবে তিনটি মৌসুম কাটাচ্ছেন রোনালদো। তবে ২০২৩ সালে পাওয়া আরব ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপ ছাড়া কোনো শিরোপা নেই দলটির। ২০২৩-২৪ মৌসুমের সৌদি কিংস কাপ ফাইনালে হেরেছেন। টানা দুটি সৌদি সুপার কাপের ফাইনালে দেখলেন হার। গত দুটি মৌসুমে সৌদি প্রো লিগের সেরা গোলদাতা ছিলেন রোনালদো।
২০২৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি জীবনের ৪০তম বসন্ত পেরিয়ে এসেছেন রোনালদো। স্বাভাবিকভাবেই রোনালদোর খেলায় বয়সের ছাপ পড়েছে। এখন আর রোনালদোকে চোখ জুড়ানো ড্রিবলিং করতে দেখা যায় না। মাঠের দুর্ধর্ষ উইঙ্গার রোনালদোকেও খুঁজে পায় না ভক্তরা। বয়সের সঙ্গে নিজেকে বদলে নেওয়া রোনালদো এখন ওত পেতে থাকেন গোলের জন্য। ফুটবল গোলের খেলা। আর চল্লিশ বছর বয়সেও রোনালদো যে সুযোগ পেলে গোল করতে সিদ্ধহস্ত, সেটা প্রমাণও করে চলেছেন। তাই রোনালদোকে পর্তুগাল জাতীয় দলেও উপেক্ষা করা সম্ভব হয় না। আন্তর্জাতিক ফুটবলে বিশ্ব রেকর্ড ১৩৮ গোলের মালিক ২০২৪-২৫ মৌসুমে পর্তুগালের হয়ে জিতেছেন উয়েফা নেশনস লিগ। ২০১৬ সালের ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ আর ২০১৮-১৯ মৌসুমের নেশনস লিগের শিরোপাও আছে রোনালদোর ভান্ডারে। পাঁচটি ব্যালন ডি’অর জয়ী রোনালদো নিঃসন্দেহে ইতিহাসের অন্যতম বিস্ময়।
পেশাদার ক্যারিয়ারে ৯৩৯ গোলের মালিক রোনালদো ইতিহাসের প্রথম ফুটবলার হিসেবে হাজারতম গোলের অপেক্ষায়। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সর্বোচ্চ ১৪০টি গোলের রেকর্ড গড়েছেন। ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে সর্বোচ্চ ১৪টি গোল লেখা আছে রোনালদোর নামের পাশে। এ ছাড়া অগণিত রেকর্ড লুটোপুটি খাচ্ছে রোনালদোর পায়ে। কিন্তু রোনালদো জয় করতে পারেননি ফুটবলারদের পরম আরাধ্য বিশ্বকাপ ট্রফি। তাই সব পেয়েও তার ক্যারিয়ারে বিশাল শূন্যতা থেকেই যাচ্ছে। হয়তো ২০২৬ সালের ফিফা বিশ্বকাপে রোনালদো শেষ চেষ্টা করবেন দেশকে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দে ভাসাতে।
সৌদি আরবেও রোনালদোর ব্যর্থতা আছে। তিনি আল নাসরের হয়ে সৌদি ঘরোয়া কোনো শিরোপা জিততে পারেননি। রোনালদোর ক্যারিয়ারে এটাই প্রথম কোনো ক্লাবের হয়ে ঘরোয়া শিরোপা জিততে না পারার ঘটনা। ইংল্যান্ড, স্পেন আর ইতালিতে সম্ভাব্য সব শিরোপা রোনালদো জিতেছেন। ব্যতিক্রম আল নাসর আর সৌদি আরব। তাই সৌদি ক্লাবে শততম গোলের সঙ্গে নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়া রোনালদোকে আপাতত ‘ব্যর্থ’ বললেও অত্যুক্তি করা হবে না।