Logo
×

Follow Us

খেলাধুলা

ফুটবলের পালে লাগুক নতুন হাওয়া

Icon

আহসান হাবীব সুমন

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:৩৫

ফুটবলের পালে লাগুক নতুন হাওয়া

বাংলাদেশের ফুটবল হয়ে পড়েছে ঢাকাকেন্দ্রিক। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ নামে ঘরোয়া ফুটবলের সর্বোচ্চ আয়োজনে ১০টি ক্লাবের মধ্যে ৯০ শতাংশ ঢাকার। এ ছাড়া বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ, প্রথম বিভাগ ফুটবল কিংবা অন্যান্য আয়োজনও রাজধানীতে সীমাবদ্ধ। পেশাদার লিগের দলগুলোকে ঢাকার বাইরে ভেন্যু দেওয়া হলেও সাড়া ফেলতে পারছে না স্থানীয় দর্শকের মধ্যে। সব মিলিয়ে ঝিমিয়ে পড়া দেশের ঘরোয়া ফুটবল জেগে ওঠার কোনো লক্ষণ যেন নেই।

একটা সময় পুরো বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের খেলা ছিল ফুটবল। ঢাকার বাইরে নিয়মিত আয়োজিত হয়েছে জেলা লিগ। এ ছাড়া শেরেবাংলা আর সোহরাওয়ার্দী কাপের মতো জাতীয় টুর্নামেন্ট সাড়া ফেলেছিল। জাতীয় টুর্নামেন্টে আলো ছড়িয়ে অসংখ্য ফুটবলার পেয়েছেন তারকাখ্যাতি। ফুটবলার খুঁজতে ঢাকা কিংবা অন্যান্য জেলার বড় ক্লাবের কর্তারা চোখ রাখতেন জাতীয় ফুটবল টুর্নামেন্টের দিকে। পাশাপাশি নামিদামি ফুটবলারদের অংশগ্রহণে জাতীয় ফুটবল প্রতিযোগিতা ছিল ফুটবলমোদিদের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। জাতীয় দলের সাবেক স্ট্রাইকার মাহমুদুল হক লিটন বলেছেন, ‘আশির দশকে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের উন্মাদনা দেখেছি। আমি নিজে খেলেছি কুষ্টিয়া, বাংলাদেশ রেলওয়ে আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দলে আমার সহযোদ্ধা ছিলেন সাইদ হাসান কানন, কায়সার হামিদ, ইমতিয়াজ সুলতান জনি, ওয়াসিম ইকবাল, মামুন বাবুর মতো দেশসেরা ফুটবলার। যেখানে খেলতে গেছি, দর্শকের উপচে পড়া ভিড় দেখেছি। নতুন খেলোয়াড়রা বড় দলে সুযোগ পাওয়ার জন্য তাকিয়ে থাকত জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের দিকে।’  

১৯৭৩ সাল থেকে প্রবর্তিত জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপকে বলা হতো জেলা পর্যায় থেকে ফুটবলার তুলে আনার সূতিকাগার। আশিস ভদ্র, রিজভী করিম রুমি, জাহিদ হাসান এমিলি, বিপ্লব ভট্টাচার্যদের দেশ কাঁপানো ফুটবলার উঠে এসেছেন জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে খেলে। নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের আয়োজন হয়ে পড়ে অনিয়মিত আর দায়সারা গোছের। ফলে জেলা পর্যায় থেকে নতুন ফুটবলার উঠে আসার পথ হয় রুদ্ধ। ২০০৭-১৯ পর্যন্ত জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ ফুটবল মাঠে ছিল না। সর্বশেষ ২০২১-২২ মৌসুমে অনুষ্ঠিত হয় দেশের সর্ববৃহৎ ফুটবল টুর্নামেন্টটি।   

আশার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) যৌথ উদ্যোগে মাঠে গড়িয়েছে জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ-২০২৫। ‘তারুণ্যের 

উৎসব’-এর অংশ হিসেবে আয়োজিত আসরে অংশ নেবে দেশের ৬৪টি জেলা। প্রাথমিক রাউন্ডে ৬৪ জেলা আটটি গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলবে। জুলাই শহীদদের নামানুসারে প্রতিটি গ্রুপের নামকরণ করা হয়েছে। ৩০ আগস্ট মুন্সীগঞ্জের বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের অধীনে হবে তিনটি ফুটবল টুর্নামেন্টÑআন্তজেলা হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ, ছেলেদের অনূর্ধ্ব-১৭ টুর্নামেন্ট ও মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবল প্রতিযোগিতা। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ফুটবলের কোনো খেলোয়াড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবেন না। নতুন প্রতিভা অন্বেষণে থাকছে জাতীয় পর্যায়ের ১০ থেকে ১২ জন কোচের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষজ্ঞ কোচিং প্যানেল। টুর্নামেন্ট তদারকি করবে আটটি বিভাগে বাফুফের নির্বাহী কমিটির চার সদস্যের মনিটরিং সেল। বাফুফের প্রাথমিক লক্ষ্য, অন্তত ৫০ থেকে ১০০ ফুটবলারকে বাছাই করে এলিট একাডেমি বা বয়সভিত্তিক পর্যায় কিংবা জাতীয় দলের ট্রায়ালে ডাকা।   

বাফুফে সভাপতি তাবিত আউয়াল জানান, জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ আর জেলা লিগগুলো শক্তিশালী করা হবে। জাতীয় দলকে শক্তিশালী করার জন্য একটা স্ট্রং পাইপলাইন তৈরি করা মূল লক্ষ্য। এ ছাড়া জাতীয় দলের বাইরে থাকা ফুটবলারদের ক্যারিয়ার নিশ্চিত করতেও সারা দেশে ফুটবল ছড়িয়ে দেওয়া জরুরি। ফুটবলের অবকাঠামো উন্নয়নে জোর দিচ্ছি। ভালো মাঠ তৈরি করা হচ্ছে। ঢাকার বাইরে স্টেডিয়ামগুলোতে ফ্লাডলাইট নেই বললেই চলে। মাঠে দর্শক বাড়াতে ফ্লাডলাইট জরুরি। বাফুফে, মন্ত্রণালয় ও ফিফার সহযোগিতায় সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করছি।  

সন্দেহ নেই, বাংলাদেশের ফুটবলে সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা হলেও সুবাতাস বইছে। হামজা চৌধুরী, শমিত সোমদের কল্যাণে জাতীয় দল নিয়ে সাধারণের আগ্রহ বেড়েছে। নারী ফুটবল দক্ষিণ এশিয়ার গণ্ডি পেরিয়ে পা রেখেছে এশিয়ান পর্যায়ে। তরুণ প্রজন্ম নতুন করে স্বপ্ন দেখছে ফুটবলার হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার। এমতাবস্থায় জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ তরুণদের মেধা বিকাশের কার্যকর মাধ্যম হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারলে দেশের ফুটবলের পালে লাগবে নতুন হাওয়া।


Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫