
আসাদুজ্জামান বাবলু বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে রক্ষণভাগের একজন অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। বর্তমানে ঢাকা আবাহনীর মতো স্বনামধন্য ক্লাবের অধিনায়ক তিনি। প্রতিনিধিত্ব করেছেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩ দলের। তবে কখনো জাতীয় দলে সুযোগ না পাওয়া নিয়ে কিছুটা আক্ষেপ যেন রয়ে গেছে মোহামেডান, শেখ রাসেল ও সাইফ স্পোর্টিংয়ের মতো বড় ক্লাবে খেলা বাবলুর। তার সঙ্গে এবার একান্ত আলাপচারিতায় মাতেন আহসান হাবীব সুমন
ঢাকা আবাহনী ক্রীড়া চক্র লিমিটেডের অধিনায়কত্ব কেমন উপভোগ করছেন?
বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম জনপ্রিয় দল আবাহনী। দেশে-বিদেশে আবাহনীর রয়েছে অভাবনীয় সাফল্য। আবাহনীর মতো দলের অধিনায়ক হতে পারা বিশাল সম্মানের ব্যাপার। আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি।
আবাহনীর অধিনায়ক হওয়ার ঝুঁকিও তো আছে?
ঝুঁকি বলব না। তবে আবাহনীর অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করা নিঃসন্দেহে চ্যালেঞ্জিং। আবাহনী যেকোনো প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামে। সেই লক্ষ্য পূরণে আমাকেই নেতৃত্ব দেওয়ার চ্যালেঞ্জ নিতে হবে।
২০২৫-২৬ মৌসুমে আবাহনীর লক্ষ্য কী?
মৌসুমের প্রথম ট্রফি ‘চ্যালেঞ্জ কাপ’-এর লড়াইয়ে আমরা নেই। তবে আমি পেশাদার লিগ আর সুপার কাপ জিততে চাই। এ ছাড়া ফেডারেশন কাপ জয়ের টার্গেট রয়েছে।
মানে ট্রেবল?
কেন নয় (হেসে)।
আবাহনী দীর্ঘ ৬ মৌসুম লিগ শিরোপা বঞ্চিত। টানা তিন মৌসুম কোনো শিরোপা নেই। বর্তমান স্কোয়াড নিয়ে শিরোপা খরা কাটাতে পারবে আবাহনী?
আবাহনী চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতোই দল গড়েছে। মোহামেডান থেকে আসা সোলেমান দিয়াবাতের সামর্থ্য সবার জানা। শেখ মোরসালিন, আল আমিন আর কাজেম শাহর মতো খেলোয়াড় স্কোয়াডে যোগ দেওয়ায় শক্তি বেড়েছে। স্কোয়াডে মিতুল মারমা আর শহিদুল আলমের মতো গোলরক্ষক রয়েছে। ফাহিম, সবুজ, কামরুল, আলমগীর মোল্লা, ইব্রাহিম, পাপনদের মতো পরীক্ষিত পারফরমাররা রয়ে গেছে দলে। নতুন, পুরোনো আর অভিজ্ঞদের মিলিয়ে আবাহনী নিঃসন্দেহে ব্যালান্সড দল। কোচ মারুফুল হক স্যার আর ম্যানেজার রুপু দাদা আমাদের ডিসিপ্লিনের মধ্যে থেকে সর্বোচ্চ স্বাধীনতা দিয়ে থাকেন। আমি বিশ্বাস করি, ২০২৫-২৬ মৌসুমে আবাহনী দুর্দান্ত কিছু করে দেখাবে।
আপনার ফুটবলার হয়ে ওঠার গল্পটা শুনতে চাই।
আমার জন্ম কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ব্রাহ্মণপাড়ায়। গ্রামে অনুশীলন করার মতো কোনো মাঠ ছিল না। স্টেডিয়াম ছিল প্রায় ২৩ কিলোমিটার দূরে। কুমিল্লা শহরে কিংবা আশপাশের কোনো ভালো মাঠে নিয়মিত অনুশীলন করতে যাওয়া কষ্টসাধ্য ছিল। তবে আমার মধ্যে ফুটবলার হওয়ার একটা তীব্র বাসনা কাজ করত। সপ্তাহে দু-তিন দিন কুমিল্লা চলে আসতাম ফুটবল অনুশীলনের জন্য। গোপালনগর ভিআইপি উচ্চ বিদ্যালয়ের হয়ে স্কুল ফুটবলে খেলেছি। ২০০৯-১০ সালের দিকে কুমিল্লা মোহামেডানে খেলে ঢাকায় ডাক পাই।
ক্যারিয়ারজুড়ে ইনজুরির বড় একটা অধ্যায় রয়েছে। সে সম্পর্কে কিছু বলবেন?
ইনজুরির সঙ্গে সখ্যতা চিরদিনের। যখনই ভালো কোনো সুযোগ পেয়েছি, তখনই ইনজুরি সামনে বাধার দেওয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঢাকায় প্রান্তিক ক্লাবে ইনজুরির জন্য এক ম্যাচের বেশি খেলতে পারিনি। ফকিরেরপুলে এক বছর খেলার পরই ইনজুরিতে ছিটকে যাই। অপারেশন করাতে হয়। ইনজুরি সারিয়ে ২০১৩-১৪ মৌসুমে মাঠে ফিরি। ২০১৪-১৫ মৌসুমে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রে যোগ দিয়ে দুই মাস খেলার পরই পায়ে ফ্র্যাকচার হয়। সেই সময় আমার কোচ ছিলেন মারুফুল স্যার। উনি আমাকে প্রতিনিয়ত সাহস জুগিয়েছেন। নইলে হয়তো হতাশায় খেলাই ছেড়ে দিতাম। যাই হোক, শেখ রাসেল থেকে মোহামেডান আর সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবে এক মৌসুম করে খেলেছি।
আবাহনীতে প্রয়াত মোনেম মুন্না, লিজেন্ড কাজী সালাহউদ্দিন কিংবা শেখ আসলামদের মতো ফুটবলাররা অধিনায়কত্ব করেছেন। আপনার ম্যানেজার স্বয়ং রুপু অধিনায়ক ছিলেন। নিজেকে তাদের কাতারে রাখতে পছন্দ করবেন?
প্রশ্নই আসে না। মুন্না ভাই তো দেশের ইতিহাসের কিং ব্যাক। রুপু দাদা, আসলাম ভাইয়েরা কিংবদন্তি। তাদের সঙ্গে তুলনা করাই তো ধৃষ্টতা। তবে স্বপ্নের তারকাদের মতো আমার বাহুতেও অধিনায়কের ‘আর্মব্যান্ড’ উঠেছে, এটা অবশ্যই ভীষণ ভালো লাগার মতো বিষয়। আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব অধিনায়কের আর্মব্যান্ডের মর্যাদা রক্ষা করতে।
সর্বশেষ মৌসুমে আবাহনীর হয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছেন। কিন্তু জাতীয় দলে নেই, আক্ষেপ হয় না?
আক্ষেপ করে কি হবে! হয়তো বাংলাদেশ দলের কোচ আর ম্যানেজমেন্টের প্ল্যানিং কিংবা ফর্মেশনে আমি নেই। তাই সুযোগ পাই না। তবে চেষ্টা চালিয়ে যাব। দেশের প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্ন পূরণে নিজের সেরাটা নিংড়ে দেব।
দেশে আর দেশের বাইরে প্রিয় খেলোয়াড় এবং দল?
জুয়েল রানা ভাইকে আমার আদর্শ বলতে পারেন। বর্তমান সময়ে শাকিল আহাদ তপু, আমাদের কুমিল্লার সোহেল রানা জুনিয়রের খেলাও ভালো লাগে। বিদেশে আইডল ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। আর পছন্দের দল ব্রাজিল।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ সাম্প্রতিক দেশকালকে।