কাচ ও বালুর শহরে ক্রিকেটের খোঁজে

হিমু আক্তার, আবুধাবি থেকে
প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭:০৭

এখানে রোদটা চিরকালের, নড়েও না, চড়েও না। আকাশে পাখি নেই, বাতাসে গন্ধ নেই। রোদের রং এখানে বালুর মতো-হালকা সোনালি, একটু ধোঁয়াটে! যেন আকাশটাও ক্লান্ত হয়ে বসে আছে কাচের শহরের কাঁধে। উড়োজাহাজ নামার সময় চোখে পড়ে অসংখ্য উঁচু দালান। কাচের শরীর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মরুর বুকে-অনেকটা ‘অলীক স্বপ্নের’ মতো।
এই অলীক স্বপ্নের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। যেখানে আকাশছোঁয়া দালান, কাচের শরীর নিয়ে গর্বিত প্রাসাদ, চকচকে গাড়ির সারি এবং বিলাসিতার অট্টহাসি। সেই বিলাসিতার শহরে এসেছি ক্রিকেটের খোঁজে। মরুর বুকে চলছে এশিয়া কাপ। কিন্তু এই শহরে সেই উত্তাপের লেশমাত্র নেই। খেলার আমেজ নেই, রাস্তায় বিলবোর্ড নেই কিংবা নেই অংশ নেওয়া দেশের সারি সারি পতাকা। এ যেন এমন এক আয়নামোড়া রাজ্য, যেখানে ক্রিকেট আছে শুধু সূচিপত্রে, হৃদয়ে নয়।
অবশ্য হৃদয়ে থাকার মতো দল হয়ে উঠতে পারেনি আমিরাত। এশিয়া কাপেও যাদের অংশগ্রহণ স্রেফ আয়োজক হিসেবে। নিজ দলের খেলায় জোশ নেই বলেই হয়তো ক্রিকেটেও মন নেই আমিরাতবাসীর। তবু ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের কারণে কিছু মানুষ জানে, এই মরুর বুকেই চলছে এশিয়া কাপ। অবশ্য খোদ আয়োজকরাও টুর্নামেন্টার চেয়ে ওই একটা ম্যাচকেই বিশেষভাবে দেখেন।
এ ছাড়া কর্মব্যস্ত আমিরাতের মানুষের ক্রিকেট নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় কই? বরং ক্রিকেটের চেয়ে তারা ব্যস্ত সদ্য শুরু হওয়া ‘ইন্টারন্যাশনাল রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট শো’ কিংবা আসন্ন ‘ইন্টারন্যাশনাল হান্টিং অ্যান্ড ইকুয়েস্ট্রিয়ান এক্সিবিশন’ নিয়ে। দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ক্রিকেটের লেশমাত্র চিহ্ন না দেখলেও, রিয়েল এস্টেট শোর বিশাল উপস্থাপনা ঠিকই চোখে পড়ে। অবশ্য বিমানবন্দরে পা রেখেই একজন অন্তত ক্রিকেট নিয়ে দু-চারটা কথা বললেন। যদিও তার প্রশ্ন শুনে শুরুতে কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। বিমানবন্দরে থাকা ইমিগ্রেশন অফিসার আমার হাতে থাকা ভিসায় চোখ বুলিয়ে বললেন, ‘ক্রিকেট ম্যাচ?’ উত্তরে বললাম, ‘হ্যাঁ, এশিয়া কাপ কাভারের উদ্দেশ্যে এসেছি!’
বিমানবন্দরের কাজ শেষে যাত্রা করলাম আবুধাবিতে। গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের সব ম্যাচ যে সেখানেই। এ দেশে থাকা প্রবাসী বাঙালিদের কাছে লিটন দাসদের ম্যাচ নিয়ে রয়েছে উত্তেজনা। গ্যালারিতে হাজির হাজার প্রবাসী ভক্তরাও চাইবেন বাংলাদেশকে ফাইনালে দেখতে। লিটনদের লড়াই এই বিলাসিতার শহরের রোদ আর কাচের দেওয়াল ভেঙে দিয়ে কিছুক্ষণের জন্য হলেও ফেরাতে পারবে কি ক্রিকেটের উষ্ণতা!