Logo
×

Follow Us

খেলাধুলা

ফুটবলে মাঠ সমস্যার সমাধান কোথায়

Icon

আহসান হাবীব সুমন

প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২৫, ১৪:২৫

ফুটবলে মাঠ সমস্যার সমাধান কোথায়

মোহামেডান স্পোর্টিং ও বসুন্ধরা কিংসের বল দখলের লড়াই

১৯ সেপ্টেম্বর ‘চ্যালেঞ্জ কাপ’ দিয়ে মাঠে গড়িয়েছে বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলের ২০২৫-২৬ মৌসুম। চ্যালেঞ্জ কাপের শিরোপা লড়াইয়ে মুখোমুখি হয়েছিল গত মৌসুমের পেশাদার লিগ চ্যাম্পিয়ন ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড ও ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস। কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচটিতে বসুন্ধরা কিংস ৪-১ গোলে মোহামেডানকে উড়িয়ে জিতেছে মৌসুমের প্রথম ট্রফি চ্যালেঞ্জ কাপ।  

এক ম্যাচের চ্যালেঞ্জ কাপ শেষ হয়েছে। কিন্তু জন্ম দিয়েছে নানা বিতর্কের। যে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু ‘অনুপযুক্ত মাঠ’। কুমিল্লা স্টেডিয়ামের মাঠ দেখে হতবাক হয়েছে গোটা ফুটবল অঙ্গন। ফুটবলাররা ওয়ার্ম-আপে নেমে পড়ার পর চলেছে মাঠের সীমানা নির্ধারণী মাপজোখ, চুন দিয়ে দাগ টানা এবং গোলপোস্টের জাল লাগানো! দুই দলের ডাগআউটের পাশেই বড় বড় ঘাস। খেলা চলাকালীন মাঠের পাশে ঘাস কাটতে ব্যস্ত দেখা গেছে কাউকে কাউকে। এ ছাড়া মাঠ ছিল এবড়োখেবড়ো। কোথাও পুরো ন্যাড়া। সব মিলিয়ে অপ্রস্তুত মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে চ্যালেঞ্জ কাপের শিরোপা লড়াই।      

২০০৭ সাল থেকে বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে পেশাদার ফুটবলের যুগে। ফিফার বিধিমালা অনুযায়ী প্রবর্তিত হয়েছে ‘হোম ও অ্যাওয়ে’ পদ্ধতি। যদিও বাংলাদেশে একমাত্র বসুন্ধরা কিংসেরই রয়েছে নিজস্ব স্টেডিয়াম। তাই তাদের হোম ভেন্যু নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। বরং ক্লাবটির নিজস্ব স্টেডিয়াম কিংস অ্যারেনা আন্তর্জাতিক ফুটবল ভেন্যু হিসেবেও স্বীকৃত। বাকি দলগুলো বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সহায়তায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে বিভিন্ন জেলা স্টেডিয়াম বরাদ্দ পায় হোম ভেন্যু হিসেবে। সেখানেও রয়েছে সমস্যা। সারা বছর স্টেডিয়ামগুলোতে জেলার নানা খেলাধুলার আয়োজন চলে। ফুটবল মৌসুম চলাকালীন খেলা থামিয়ে স্টেডিয়াম ভাড়া দিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘটনাও ঘটেছে।  

বাংলাদেশের ফুটবলে মাঠ সমস্যা নতুন কিছু নয়। প্রতি মৌসুমে ঘরোয়া ফুটবলের ভেন্যু নিয়ে চলে টানাহেঁচড়া। ২০২৫-২৬ মৌসুমে ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ভেন্যু নির্ধারিত হয়েছে কিংস অ্যারেনা আর কুমিল্লা স্টেডিয়াম। পেশাদার লিগে হোম ভেন্যু হিসেবে কিংস অ্যারেনায় বসুন্ধরা কিংস ও ফর্টিস এফসি, গাজীপুরে বাংলাদেশ পুলিশ ও পিডব্লিউডি, মুন্সীগঞ্জে রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি ও ব্রাদার্স ইউনিয়ন, মানিকগঞ্জে আরামবাগ ও ফকিরেরপুল এবং কুমিল্লায় মোহামেডান ও আবাহনী ক্রীড়া চক্র খেলবে।  

ঢাকার বাইরে প্রতিটি ভেন্যুতেই ফুটবলের পাশাপাশি ক্রিকেটসহ নানা খেলাধুলা চলে। ঘরোয়া মৌসুম শুরুর ঠিক পূর্ব মুহূর্তে স্টেডিয়াম বরাদ্দ দেওয়ায় মাঠ পরিচর্যার পর্যাপ্ত সময় মেলে না। ভেন্যু বুঝে না পাওয়ায় চ্যালেঞ্জ কাপ পেছাতে হয়েছে দুইবার। শেষ পর্যন্ত অনুপযুক্ত মাঠে খেলা আয়োজনের দায় পড়েছে হোম টিম মোহামেডানের ওপর। যদিও মোহামেডানের পক্ষ থেকে সময়মতো মাঠ বুঝে না পাওয়াকে দায়ী করা হয়েছে। মোহামেডানের ম্যানেজার ও সাবেক ফুটবলার ইমতিয়াজ আহমেদ নকীব ক্লাবের দুর্বল অর্থনৈতিক কাঠামোকেও সামনে এনে বলেছেন, ‘বাংলাদেশের বেশির ভাগ ক্লাব দল গড়তেই হিমশিম খেয়ে যায়। তাদের ওপর স্টেডিয়াম পরিচর্যার দায়িত্ব পুরো ছেড়ে দেওয়া বাড়তি বোঝা চাপানোর শামিল। বাফুফের উচিত ভেন্যুর বিষয়ে ক্লাবগুলোকে সর্বোচ্চ সহায়তা করা।’ 

এদিকে বাফুফে আর লিগ কমিটির দায়ও দেখছে কেউ কেউ। বাফুফের গ্রাউন্ডস কমিটি বলতে কিছু নেই। লিগ কমিটিও মাঠ পরিচর্যায় ক্লাবগুলোর অবহেলার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারছে না। সব মিলিয়ে ঘরোয়া ফুটবলে লেজেগোবরে অবস্থা নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাফুফে চেষ্টা করছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছ থেকে দীর্ঘ মেয়াদে ফুটবলের জন্য নিজস্ব স্টেডিয়াম বরাদ্দ পাওয়ার। এ নিয়ে বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল বলেছেন, ‘আমরা ছয়টি স্টেডিয়াম নিয়ে সরকারের সঙ্গে চূড়ান্ত আলোচনায় চলে এসেছি। বাফুফে ছয়টি স্টেডিয়াম বুঝে পেলে পরিপূর্ণ ফিফা সার্টিফায়েড স্টেডিয়ামে রূপান্তরের কাজ বাফুফে করবে। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত হস্তান্তর না পাই ততক্ষণ কিছু বলা যাচ্ছে না। আমাদের লক্ষ্য হলো, বাফুফের অধীনে ফিফা ফরোয়ার্ড প্রোগ্রাম অনুযায়ী স্টেডিয়ামগুলোর উন্নয়ন করা।’ 

ভালো ফুটবলের জন্য সুন্দর মাঠের কোনো বিকল্প নেই। এবড়োখেবড়ো অপ্রস্তুত মাঠে খেলোয়াড়েরা নিজেদের স্বাভাবিক নৈপুণ্য প্রদর্শন করতে পারে না। উপরন্তু রয়েছে ইনজুরিতে পড়ার ঝুঁকি। সব মিলিয়ে ১৮ বছর পেরিয়ে আসা বাংলাদেশের পেশাদার লিগ হয়ে আছে নামসর্বস্ব, যা দেশের অন্যতম জনপ্রিয় খেলাটির জন্য ভীষণ দুর্ভাগ্যের।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫