স্বপ্ন দেখছি বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার : জায়ান
আহসান হাবীব সুমন
প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৫:৪৬
৯ ও ১৪ অক্টোবর-এএফসি এশিয়ান কাপ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বে বাংলাদেশের মুখোমুখি হবে হংকং, চীনের বিপক্ষে। হোম অ্যান্ড অ্যাওয়েভিত্তিক লড়াইয়ের প্রথম ম্যাচ ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে। ফিরতি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে হংকংয়ের কাই তাক স্পোর্টস পার্ক স্টেডিয়ামে।
হংকংয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ স্কোয়াডে নতুন মুখ জায়ান আহমেদ। জামাল ভুঁইয়া, তারেক কাজী, সৈয়দ শাহ কাজেম কিরমানি, ফাহমিদুল ইসলাম, শমিত সোম আর হামজা চৌধুরীর মতো জায়ানও প্রবাসী বাংলাদেশি ফুটবলার। এরই মধ্যে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩ দলের জার্সিতে খেলেছেন তিনি। এএফসি বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টের বাছাইপর্বে ভিয়েতনামে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের ফল হিসেবে ডাক পেয়েছেন হাভিয়ের কাবরেরার দলে।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের জাতীয় ফুটবল দলে প্রবাসী খেলোয়াড়দের ‘হাট’ বসেছে। ২০১৪ সালে জামালকে দিয়ে যার শুরু। আর জায়ান সর্বশেষ সংযোজন। যদিও অন্য প্রবাসী ফুটবলারদের তুলনায় জায়ানের জাতীয় দলের পথ পরিক্রমায় ভিন্নতা রয়েছে। জামাল, তারিক কিংবা কাজিমরা বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে নিজেদের প্রমাণ করে সুযোগ পেয়েছেন লাল-সবুজের দলে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা হামজা আর কানাডার সর্বোচ্চ লিগে খেলা শমিত বাংলাদেশ দলে যোগ দিয়েছেন ‘মহাতারকা’ হয়ে। ইতালির তৃতীয় স্তরের লিগে খেলা ফাহামিদুলের সরাসরি অভিষেক হয়েছে জাতীয় দলে। পক্ষান্তরে জায়ান প্রাথমিক ট্রায়াল থেকে অনুশীলন ক্যাম্প হয়ে অনূর্ধ্ব-২৩ দলে পরীক্ষা দিয়ে জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশ স্কোয়াডে।
জায়ান আহমেদের রক্তে রয়েছে ফুটবল। তার বাবা শরীফ আহমেদ ঢাকা প্রথম বিভাগ ফুটবলে খেলেছেন ইস্কাটন সবুজ সংঘের হয়ে। খেলেছেন বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৬ দলে। নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান জায়ানের বাবা। ফুটবল ক্যারিয়ারের ইতি টেনে থিতু হন মার্কিন মুল্লুকে। ২০০৪ সালের ২৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় জন্ম জায়ানের। ভার্জিনিয়াতেই স্কুল পর্যায়ের ফুটবল থেকে তার উত্থান। যুক্তরাষ্ট্রের ‘এনসিএএ’ (ন্যাশনাল কলিজিয়েট অ্যাথলেটিক অ্যাসোসিয়েশন) আয়োজিত টুর্নামেন্টে খেলেছেন ভার্জিনিয়া টেক হকিস আর জর্জ মেশন পাইরেট মেন’স সকার দলের হয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে স্পেন, ডেনমার্কসহ ইউরোপের বেশ কয়েকটি একাডেমিতে অনুশীলন ও টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার।
২১ বছর বয়সী জায়ানের পেশাদার ফুটবলে অভিষেক হয়নি। খেলেননি কোনো স্তরের পেশাদার লিগে। এখানেই জায়ান স্বতন্ত্র। বাংলাদেশেও তিনি এসেছিলেন নিজের উদ্যোগে। চলতি বছরের জুনে ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে ঘটা করে আয়োজন করা হয় প্রবাসী ফুটবলারদের ট্রায়াল। নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে বিশ্বের নানা দেশ থেকে পঞ্চাশাধিক প্রবাসী তিন দিনব্যাপী ট্রায়ালে অংশ নেন। যাদের মধ্যে একজন ছিলেন জায়ান। মূলত বাফুফে আয়োজিত প্রবাসী ফুটবলারদের ট্রায়াল থেকেই তার ফুটবল ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরে যায়। তিনি ডাক পান বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-২৩ দলের অনুশীলন ক্যাম্পে।
অনূর্ধ্ব-২৩ দলের হয়ে বাহরাইন আর ভিয়েতনামে আলো ছড়িয়ে জায়ান রয়েছেন বাংলাদেশের মূল জাতীয় দলে অভিষেকের অপেক্ষায়। হংকংয়ের বিপক্ষে মাঠে নামা হবে কি না সেটা নিশ্চিত না হলেও জায়ানে মুগ্ধ কোচ কাবরেরাসহ ফুটবল সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশের স্প্যানিশ কোচ বলেছেন, ‘জায়ান প্রতিভাবান ফুটবলার। তার স্কিল আর গতি আধুনিক ফুটবলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’
জায়ানকে নিবিড়ভাবে দেখেছেন অনূর্ধ্ব-২৩ দলের ম্যানেজার শাহীন হাসান। তার ভাষ্য, ‘জায়ান ফুটবলকে ভালোবাসে। সে অত্যন্ত সুশৃঙ্খল আর পরিশ্রমী। ফিটনেস আর পারফরম্যান্সের দিকে তার পূর্ণ মনোযোগ। নিজেকে গড়ে তুলতে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে জায়ান।’
জায়ান মূলত লেফট-ব্যাক। দলের প্রয়োজনে ওভারল্যাপ করে গড়ে দিতে পারেন আক্রমণ। আবার নিমিষে নিচে নেমে এসে প্রতিপক্ষের আক্রমণ রুখে দেওয়াতেও পারঙ্গম তিনি। বাহরাইন আর ভিয়েতনামে যুব দলের প্রতিটি ম্যাচে নিজের সামর্থ্যরে জানান দিয়েছেন। চিনিয়েছেন নিজের জাত। নজরকাড়া পারফরম্যান্সের পুরস্কার হিসেবে চলে এসেছেন আন্তর্জাতিক ফুটবলের দোরগোড়ায়।
জায়ানের ক্যারিয়ার মাত্র শুরু। যুব দলের পর বাংলাদেশের জায়ান্ট ক্লাব বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে অনুশীলন করেছেন। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ক্লাবে নাম লেখাননি। জায়ান বলেছেন, ‘এরই মধ্যে আমি বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩ দলে খেলেছি। বসুন্ধরা কিংসে আর্জেন্টিনার কোচের (মারিও গোমেজ) অধীনে অনুশীলন করেছি। এই দেশের মানুষের ফুটবলের প্রতি অসম্ভব ভালোবাসা আমাকে মুগ্ধ করেছে। এখন আমি স্বপ্ন দেখছি, বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার। হামজা চৌধুরীর সঙ্গে খেলতে পারলে গর্ববোধ করব। বাংলাদেশের রক্ষণে বৈচিত্র্য আনা এবং দলকে শক্তিশালী করা আমার লক্ষ্য।’
