বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল
দেশের ক্রিকেটের প্রথম সুপারস্টার, সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল খেলোয়াড়ি জীবনের ‘অম্ল-মধুর’ অধ্যায় পেরিয়ে এবার নতুন ভূমিকায়। আয়ারল্যান্ড সিরিজে বাংলাদেশ দলের নতুন ব্যাটিং কোচ হিসেবে আন্তর্জাতিক কোচিংয়ে অভিষেক হচ্ছে ৪১ বছর বয়সী এই সাবেক ক্রিকেটারের। আন্তর্জাতিক কোচিংয়ে পথচলা শুরুর আগে দেশকাল নিউজের হিমু আক্তারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নানা বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি।
তারকা ক্রিকেটার থেকে কোচ, জাতীয় দলে নতুন ভূমিকায় কতটা রোমাঞ্চিত?
আমি খুব খুশি, আমার পরিবার ও ভক্তরাও খুশি। খেলা ছাড়ার পর কোচিং করাব ঠিক করেছিলাম। আমি আমার ব্যর্থতার কারণ জানি, তাই কোচিংয়ে এসেছি। আমি যেটা পারিনি, ওরা যেন সেটা পারে, সেই চেষ্টা করব। কেন ভালো করিনি, সেই অভিজ্ঞতা ওদের সঙ্গে শেয়ার করব, যাতে ওরা ভুল না করে। দেশের হয়ে কাজ করার এই সুযোগে নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চাই
ব্যাটিং পারফরম্যান্স নাজুক-এই কঠিন সময়ে দায়িত্ব নেওয়া আপনার জন্য কি বড় কোনো চ্যালেঞ্জ মনে হচ্ছে?
না, আমি এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করি না। টেস্ট দলটা যদি দেখেন, খুব চমৎকার অবস্থায় আছে। এই দলের খেলোয়াড়েরা দারুণ, অভিজ্ঞ খেলোয়াড় আছে। তারা যদি তাদের গেমটা গভীরভাবে দেখে তাহলে আমার মনে হয় যে, কঠিন নয়। আমি ভালো সময়েই জয়েন করেছি।
ব্যাটারদের মানসিক শক্তি বাড়াতে আপনার পরিকল্পনা কী?
এই সময়ে এসে টেকনিক্যালি বড় পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। এখন আমার কাজ হলো অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করা। ওদের সঙ্গে মানসিকভাবে মিশে, যতটা সম্ভব ‘ফ্রি’ হয়ে পজিটিভ রাখাটাই আমার বড় দায়িত্ব। ওরা পজিটিভ থাকলে ব্যাটিং করা সহজ হবে। আমি চেষ্টা করব কথা বলে ওদের মানসিকভাবে শক্ত রাখতে। আন্তর্জাতিক সিরিজে যারা মানসিকভাবে শক্ত থাকে এবং ম্যাচ ‘রিড’ করতে পারে, তাদের পক্ষেই ভালো খেলা সম্ভব।
সোশ্যাল মিডিয়া, গ্যাজেট ও ফ্যান প্রেসার-এই যুগের খেলোয়াড়দের জন্য এই চাপ সামলানো কতটা কঠিন?
স্বাভাবিকভাবে এটার প্রভাব তো পড়বেই। সমাজে থাকলে এমন হবেই, কিন্তু আমরা কাজ করব, যাতে এসব নিয়ে চিন্তা না করে ম্যাচে ফোকাস রাখাটাই প্রধান লক্ষ্য হয়। আমি ওদের বলব, এসব এড়িয়ে চলতে। যত বেশি এসব দেখা হবে, ততই প্রভাব পড়বে। ব্যাটারদের বলব, দুনিয়ার সব ভুলে গিয়ে শুধু ওই বলটাতেই ফোকাস রাখতে। তাহলেই সাফল্য আসবে।
একজন কোচের জন্য সমালোচনা বা প্রত্যাশার চাপ সামলানো কতটা কঠিন?
দেখেন, প্রতিটা কাজেই পজিটিভ-নেগেটিভ দুই দিক থাকে। পারফরম্যান্স সম্পর্কিত কাজে চাপ থাকবেই। তবুও আমি এটাকে চাপ মনে করছি না। আমি বিশ্বাস করি, আমার অভিজ্ঞতা ওদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারলে এবং ওরা সেটা কাজে লাগালে অবশ্যই উপকৃত হবে।
দেশের ক্রিকেটে বাংলাদেশি কোচদের প্রমোট করা হচ্ছে-এ বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
বর্তমান বোর্ড বাংলাদেশি কোচদের প্রমোট করছে। সালাউদ্দিন ভাই বা আমি যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাওয়ায় এটি ইতিবাচক দিক। দেশি কোচরা মূল্যায়ন পাচ্ছেন। এখন ক্রিকেটাররা যদি ভালো খেলতে পারে, তাহলে দেশি কোচরা ভবিষ্যতে আরো ভালো জায়গায় সুযোগ পাবেন।
কোচ হিসেবে ছেলেদের মধ্যে প্রথম কোন বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে চান?
আমার প্রথম কাজ করার জায়গা হলো, ওদের মানসিক দিক। আমার চাওয়া, ওরা যেন পরিস্থিতি ও গেমটা নিয়ে চিন্তা করে, তাহলে খেলা সহজ হবে। টেকনিক পরিবর্তনের ঝামেলা এখন নেই। আমি শুধু তাদের মানসিক দিকটায় শক্ত করতে চাই। ওরা যেন উইকেট বুঝতে পারে এবং সে অনুসারে বুঝে-শুনে খেলতে পারে, সেটাই দেখব।
জুলিয়ান উডের টেকনিক্যাল কারণে ব্যাটারদের সমস্যা হয়েছে-আপনি কি এমনটা মনে করেন?
আমি ওই সময়টায় ছিলাম না। তবে জুলিয়ান আসার পর মনে হয়েছে, জাকের আলীসহ আরো কয়েকজন ক্রিকেটার ক্রিকেটীয় শট থেকে বের হয়ে গেছে। ক্রিকেটীয় শট বাদ দিয়ে এসেই ছয় মারার প্রবণতা এবং তাতে আউট হওয়া বেশি দেখা গেছে। তার আসার পর লেগ সাইডে খেলার প্রবণতাও ক্রিকেটারদের মধ্যে বেড়ে গিয়েছিল।
তারকা আশরাফুলের ভক্তরা কি কোচ আশরাফুলকেও একইভাবে গ্রহণ করবেন?
আল্লাহর রহমতে আমি খুব ভাগ্যবান, এখন পর্যন্ত সবার ভালোবাসা পাই। মনে হয়, সব ক্রিকেটারের মধ্যে ভালোবাসা আমিই সবচেয়ে বেশি পেয়েছি। আমার যতটুকু অভিজ্ঞতা আছে, সেটা দিয়ে কোচিংয়েও ভালো কিছু হবে এবং সবাই উপকৃত হবে আশা করি।
