জাতীয় নারী ক্রিকেট দল
বাংলাদেশ নারী ক্রিকেটে এক মিশ্র পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে যেমন দীর্ঘদিনের দাবি মেনে ক্রিকেটারদের বেতন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি), অন্যদিকে তেমনই দলের সাবেক অধিনায়ক ও পেসার জাহানারা আলমের যৌন হয়রানির গুরুতর অভিযোগ পুরো ক্রিকেট অঙ্গনে অস্থিরতা তৈরি করেছে।
বিসিবির সর্বশেষ বোর্ড সভায় নারী ক্রিকেটারদের বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। এই সিদ্ধান্তে ‘এ’ ক্যাটাগরির ক্রিকেটারদের মাসিক বেতন এক লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা করা হয়েছে। একইভাবে ‘বি’ ক্যাটাগরির ক্রিকেটারদের বেতন এক লাখ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা। ‘সি’ ক্যাটাগরির বেতন ৭০ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ৯৫ হাজার টাকা এবং ‘ডি’ ক্যাটাগরির বেতন ৬০ হাজার টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৮০ হাজার টাকা।
আর্থিক স্বস্তি এনে দেওয়া এই ঘোষণার পরই নারী ক্রিকেটে যেন অন্ধকার নেমে আসে। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক জাহানারা সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে অভিযোগ করেন, ২০২২ সালের নারী ক্রিকেট বিশ্বকাপ চলাকালে দলের কয়েকজন কর্মকর্তা তাকে ও তার সতীর্থদের যৌন হয়রানি করেছেন।
তার অভিযোগের তীর সরাসরি সে সময় দলের নির্বাচক ও ম্যানেজারের দায়িত্বে থাকা মঞ্জুরুল ইসলামসহ একাধিক কর্মকর্তার দিকে। জাহানারা দাবি করেন, মঞ্জুরুল ইসলাম নাকি উৎসাহ দেওয়ার নামে খেলোয়াড়দের শারীরিকভাবে স্পর্শ করতেন, আলিঙ্গন বা বুকে টেনে ধরতেন, যা বাংলাদেশের ক্রিকেটের অন্যতম ‘জঘন্যতম ঘটনা’ বলে অনেকেই মনে করছেন।
৪৬ বছর বয়সী মঞ্জুরুল বর্তমানে চীনে অবস্থান করছেন এবং বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি এই অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ ‘ভিত্তিহীন’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি যেকোনো তদন্তের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন।
এই সংবেদনশীল অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিসিবি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে। বিসিবির নারী বিভাগের প্রধান আবদুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। পাশাপাশি ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেছেন, জাহানারা আলম আইনি ব্যবস্থা নিলে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সহায়তা করবে, যাতে এ ধরনের কাজ করে কেউ পার পেয়ে না যান।
বেতন বৃদ্ধির সুদিন যখন নারী ক্রিকেটারদের মুখে হাসি ফোটানোর কথা ছিল, ঠিক তখনই সাবেক অধিনায়কের এই সাহসী ও গুরুতর অভিযোগ পুরো নারী ক্রিকেটকে এক গভীর সংকটের মুখে ফেলে দিয়েছে। বোর্ডের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, একদিকে যেমন নারী ক্রিকেটের মানদণ্ড ধরে রাখা, তেমনই অন্যদিকে এই গুরুতর অভিযোগের নিরপেক্ষ ও দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে ক্রিকেটারদের জন্য একটি নিরাপদ ও সম্মানজনক পরিবেশ নিশ্চিত করা।
