
দমবন্ধ এই সময়ে দারুণ এক উপহার পেয়েছেন সাকিব আল হাসান। ক্রিকেটের বাইবেল খ্যাত উইজডেনের সেরার তালিকায় নাম উঠেছে তার। ক্রিকেট মান্থলির নির্বাচনে ওয়ানডেতে শতাব্দীর দ্বিতীয় সেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। অবশ্য টেস্টে তার নাম রয়েছে ছয় নম্বরে। ক্রিকেট পরিসংখ্যান বিশ্লেষক সংস্থা ক্রিকভিজের সঙ্গে যৌথ গবেষণায় একুশ শতাব্দীর ২০ বছর যেতেই ‘মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার’ বা এমভিপি নির্বাচন করেছে উইজডেন মান্থলি। এতে কোন খেলোয়াড় ম্যাচে কতটা অবদান রেখেছেন, তা মূল্যায়ন করা হয়েছে।
বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হলেও বর্তমানে ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন সাকিব আল হাসান। ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে জুয়াড়িদের কাছ থেকে ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পাওয়ার তথ্য গোপন করার কারণে সব ধরনের ক্রিকেট খেলা থেকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক। এরপর ক্রিকেটের কোনো কার্যক্রমে তাকে দেখা যায়নি। বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘আইসিসি’র অনুমোদন আছে এমন কার্যক্রমেই কেবল অংশ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে তার।
করোনাভাইরাসের কারণে গেল মার্চ থেকে ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বন্ধ রয়েছে। এ সময়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার জন্য হাজির হন ভার্চুয়াল জগতে। আর অসহায় মানুষদের সাহায্যার্থে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে নিজের স্মারক নিলামে তোলেন তিনি, যা ২০ লাখ টাকায় বিক্রি হয়ে যায়। পুরো টাকাটাই ‘সাকিব আল হাসান ফাউন্ডেশন’-এর মাধ্যমে অসহায় ও নিরন্ন মানুষের জন্য ব্যয় করেন।
সেখান থেকে মূলত এই সময়ে ম্যাচে সবচেয়ে বেশি প্রভাব খাটাতে পারা খেলোয়াড়দের তালিকা করতে চেয়েছে উইজডেন ক্রিকেট মান্থলি। উইজডেন ক্রিকেট মান্থলির জুলাই সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে এই এমভিপির সেরাদের তালিকা। ওয়ানডেতে সাকিবের উপরে আছেন ইংল্যান্ডের সাবেক তারকা অলরাউন্ডার অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ। ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি জায়গা পেয়েছেন ছয় নম্বরে। ‘টেস্ট ও টোয়েন্টি-২০’র তালিকায় বর্তমান সেরা ব্যাটসম্যান কোহলির নাম নেই! টেস্টে সবার ওপরে আছেন শ্রীলংকান কিংবদন্তি মুত্তিয়া মুরালিধরন।
তারপর ভারতের রবীন্দ্র জাদেজা, অস্ট্রেলিয়ার স্টিভেন স্মিথ, গ্লেন ম্যাকগ্রা ও দক্ষিণ আফ্রিকার শন পোলক। অন্যদিকে টোয়েন্টি-২০’র তালিকায় সাকিব আল হাসানের নাম নেই, যা কিছুটা হলেও আশ্চর্যের জন্ম দিয়েছে। টোয়েন্টি-২০-এ সবার ওপরে আছেন আফগানিস্তানের রশিদ খান। তারপর ভারতের জাসপ্রিত বুমরাহ ও অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ওয়ার্নার।
মূলত শতাব্দী বলতে ১০০ বছরকে বোঝায়; কিন্তু এখনো একুশ শতাব্দীর মাত্র ২০ বছর কেটেছে। এর মধ্যেই শতাব্দীর সেরা ক্রিকেটার নির্বাচন করে ফেলেছে ক্রিকেটবিষয়ক বিখ্যাত সাময়িকী উইজডেন ক্রিকেট মান্থলি। দলে সাকিবের অবদান দেখে তার এই নির্বাচন অনেকটা প্রত্যাশিত ছিল বলেই মনে করছেন ক্রিকেট সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে অলরাউন্ডারদের মধ্যে অন্যতম সেরা সাকিবই। তাই সাকিবকে ছেড়ে কোনো দল তো হতেই পারে না। যদিও সাকিব এখন ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হয়ে আছেন। চলতি বছরের ২৯ অক্টোবর তার এক বছরের জন্য ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ থাকার শাস্তি শেষ হবে। এরপর ক্রিকেটে ফিরতে পারবেন সাকিব। তবে উইজডেন মান্থলি এই নিষিদ্ধ হওয়া নয়, সাকিবের নৈপুণ্যকেই প্রাধান্য দিয়েছে।
আর তাতে সাকিব ওয়ানডেতে শতাব্দীর সেরা ১০ ক্রিকেটারের মধ্যে দ্বিতীয় হয়েছেন। সাকিব বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা ক্রিকেট খেলোয়াড়, তা নিয়ে কারও মনে কোনো প্রশ্ন নেই; কিন্তু বিশ্ব ইতিহাসে তার অবস্থান কোথায়? সর্বকালের ব্যাপারটা বিচার করবে মহাকাল; কিন্তু তার আগে উইজডেন সাকিবকে এই শতাব্দীতে খুব সম্মানজনক অবস্থানে আবিষ্কার করেছে। ওয়ানডেতে ফ্লিনটফের ঠিক পরের জায়গায় সাকিব। ফ্লিনটফের পয়েন্ট ২১.৩। সাকিবের ২০.৮। সাকিব এখনো খেলায় আছেন বলে ভবিষ্যতে আবার এই তালিকা নতুন করে হলে তার ১ নম্বরে উঠে যাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনাই থাকবে। টেস্টের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়ের তালিকায় সাকিব ৮৪.২ পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে।
২০০৬ সালে ওয়ানডে ক্রিকেট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করেছিলেন মাগুরায় জন্ম নেওয়া এই ক্রিকেটার। একই বছর টোয়েন্টি-২০ এবং ২০০৭ সালে টেস্ট ক্রিকেটেও অভিষেক হয় তার। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরুর পর থেকেই নিজেকে ধীরে ধীরে অন্যদের চেয়ে আলাদা করতে থাকেন। ধারাবাহিক সাফল্যের কারণেই ২০০৯ সালে আইসিসির ওয়ানডে অলরাউন্ডার র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বরে উঠে আসেন।
এরপর বিশ্বের কোনো ক্রিকেটারই তাকে সেখান থেকে দীর্ঘ সময়ের জন্য নামাতে পারেননি। উল্টো কয়েক বছরের মধ্যে ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে তিন ফরমেটে ক্রিকেটেই বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার র্যাঙ্কিংয়ে ওঠেন তিনি। গেল ১৪ বছরে পারফরমেন্সের কারণে কখনো বাদ পড়েননি জাতীয় দল থেকে। ব্যাটিংয়ে ভালো না করতে পারলে, বোলিংয়ে কিছু করেছেন। সে জন্যই একাধারে ওয়ানডে, টেস্ট ও টোয়েন্টি-২০ এই তিন ফরমেটের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই সাকিব এক সময় দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডারের র্যাঙ্কিং ধরে রেখেছিলেন। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে সাকিব আরও দুর্বার হয়ে ফিরবেন বলেই প্রত্যাশা অগণিত ভক্তের।