Logo
×

Follow Us

খেলাধুলা

অনলাইন দাবা অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ

Icon

মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল

প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২০, ০৯:২৪

অনলাইন দাবা অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ

নিভৃতচারী খেলা হিসেবে পরিচিত দাবা। এ খেলার কোনো মৌসুম নেই। রোদ, ঝড়, বৃষ্টি এই খেলা আয়োজনে কোনো বাধা হতে পারে না। এই নিয়মে বছরের পর বছর ধরে চলে এলেও এবার ঠিকই থামতে হয়েছে। করোনা নামক ভয়াল ভাইরাসের কারণে অন্য ৮-১০টি খেলার মতো ছেদ পড়েছে রাজার খেলা হিসেবে পরিচিত দাবায়।

যেখানে অনেকেরই হতাশার পরিমাণটা বেড়েছে। বিশেষ করে দেশের সর্বকনিষ্ঠ আন্তর্জাতিক মাস্টার মোহাম্মদ ফাহাদ রহমানের কষ্টটা একটু বেশি। দারুণ ছন্দে থাকা এই কিশোর অপেক্ষায় ছিলেন ২০২০ সালে একাধিক গ্র্যান্ডমাস্টার নর্ম অর্জনের। কিন্তু এক করোনা সবকিছু উলট-পালট করে দিল। তবে একেবারে বন্ধ হয়নি দাবা। এশিয়ার বয়সভিত্তিক বেশ কয়েকটি আসর এরই মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশি দাবাড়ুদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু অনলাইন দাবা কি আর মনের খোরাক মেটাতে পারে। পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে একেবারে বন্ধ থাকার চেয়ে কিছু খেলা আয়োজন মন্দের ভালো হিসেবে দেখছেন খেলাটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। 

দেশের ঘরোয়া ক্রীড়াঙ্গন এখনো পুরোপুরিভাবে চালু হয়নি। তবে একটি ইভেন্ট ঠিকই আন্তর্জাতিক আসরে খেলার অপেক্ষায় রয়েছে। ‘দাবা’ এখন বিশ্ব আসরে কোর্টে নামার জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। করোনার কারণে দাবা অলিম্পিয়াডসহ সব ধরনের আন্তর্জাতিক আসর বাতিল হয়ে গেলেও অনলাইনের বৈশ্বিক এই আসরটি আয়োজন করছে ফিদে। চারটি বিভাগে ভাগ হয়ে ১৬৩টি দেশের জাতীয় দল অংশ নিচ্ছে এ আসরে। ৬ সদস্যের বাংলাদেশ দল সরাসরি খেলবে দ্বিতীয় বিভাগে। মোট ৫০টি দলের মধ্যে শীর্ষ ১৫টি দল জায়গা পাবে শীর্ষ বিভাগে।

দুনিয়াজুড়েই এখন ‘ভার্চুয়াল’ যোগাযোগ বেড়েছে অনেকগুণ। দাবায় বিষয়টি সহজ হওয়ার কারণে প্রয়োগও হচ্ছে অনেক বেশি। যার সূত্র ধরে এবার বিশ্ব দাবা অলিম্পিয়াড হতে যাচ্ছে অনলাইনে! একেবারে নতুন এই কনসেপ্টের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পাশাপাশি চ্যালেঞ্জও রয়েছে। 

যেহেতু দাবায় এখন অনেক আধুনিক প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটেছে, সেখানে অনলাইন দাবা নিয়ে এসেছে নতুন মাত্রা। সেখানে আলো ছড়িয়ে নিজেদের প্রমাণে ব্যস্ত রয়েছে খেলোয়াড়রা। এদের মধ্যে অন্যতম ফাহাদ রহমান কয়েক বছর আগে চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক গ্র্যান্ডমাস্টার্স দাবার শিরোপা জিতে চারদিকে হৈ চৈ ফেলে দেন। সর্বকনিষ্ট গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার যে স্বপ্ন সেটি ধীরে ধীরে বাস্তবায়িত হতে থাকলেও, করোনাকাল তার জন্য অভিশাপ হয়ে দেখা দেয়।

আন্তর্জাতিক মাস্টার হওয়ার পরের ধাপটিই যে গ্র্যান্ডমাস্টার। যদিও প্রথমবারের মতো ‘অনলাইন’ আসর আয়োজন কিছুটা হলেও চ্যালেঞ্জে ফেলে দিয়েছে। তবে খুদে থেকে কিশোর হওয়া ফাহাদের কণ্ঠে ভালো করার প্রত্যয় শোনা গেছে। এবারের আসরে গ্র্যান্ডমাস্টার আবদুল্লাহ আল রাকিব খেলছেন না। তবে বরাবরের মতো রয়েছেন জিয়াউর রহমান। অনলাইনে এবারের অলিম্পিয়াড নিয়ে দাবাড়ুদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। এই যেমন উপমহাদেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোরশেদ আসল অলিম্পিয়াডের আমেজটা খুব বেশি মিস করছেন। জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হিসেবে নিয়াজ খেললেও পরিষ্কারভাবে না করে দিয়েছেন রানার্সআপ আব্দুলাহ আল রাকিব।

গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান সেই জায়গাটি দখল করেছেন। জিয়া দলে ছিলেন না কারণ, সর্বশেষ জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে ষষ্ঠ হয়ে হতাশা ছড়িয়েছিলেন। তাতেই অলিম্পিয়াড দলে জায়গা পাওয়াটা পড়ে যায় অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে। এবারের আসরে ১২ জন দাবাড়ু অংশ নেবেন। এই দলে চারজন মহিলা ও চারজন জুনিয়র দাবাড়ু রাখা বাধ্যতামূলক। এর বাইরে ওপেন বিভাগে আরও চারজনের খেলার সুযোগ থাকে।

জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের অবস্থান অনুসারে নিয়াজ মোরশেদ, আবদুল্লাহ আল রাকিব, মোহাম্মদ ফাহাদ রহমান ও রিফাত বিন সাত্তার সুযোগ পান। এর মধ্যে আবার ফাহাদ জুনিয়র কোটায় নিজের নাম রাখলে সুযোগ পান ফিদে মাস্টার তৈয়বুর রহমান। আর রাবিক না খেলায় ষষ্ট হওয়া জিয়ার সামনে অংশগ্রহণের সুযোগ মেলে। করোনার এই সময়টাতে জিয়া ও তার ছেলে তাহসিন তাজওয়ার অনলাইন দাবায় নিজেদের রপ্ত করার কাজটি বেশ ভালোভাবেই করেছেন।

সেই কারণে অলিম্পিয়াডে পাওয়া সুযোগটাকে কাজে লাগাতে চান। অংশগ্রহণকারী মহিলা চার দাবাড়ু হলেন- রানী হামিদ, শারমিন সুলতানা শিরিন, শারমিন সামিহা ও নাজরানা খান ইভা। আর জুনিয়র হিসেবে ছেলেদের মধ্যে ফাহাদ রহমান, তাহসিন তাজওয়ার জিয়া এবং মেয়েদের মধ্যে খেলবেন ওয়ালিজা আহমেদ ও নোশিন আঞ্জুম। অন্যবারের মতো বাংলাদেশ দলটি এবার শক্তিশালী হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। করোনা মহামারির কারণে এবার বিশ্ব দাবার সবচেয়ে বড় আসর অলিম্পিয়াড দাবাড়ুদের ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে। ভিন্ন ফরম্যাটে ২২ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে ভার্চুয়াল বোর্ডে এই আসর। বাংলাদেশি দাবাড়–দের কাছে যা হতে যাচ্ছে সম্পূর্ণ এক নতুন অভিজ্ঞতা।

অনলাইনে ফরম্যাট আমূল বদলে দেওয়া হয়েছে। সাধারণত অলিম্পিয়াডে দেশের শীর্ষ পাঁচ দাবাড়ু অংশ নিয়ে থাকেন ওপেন বিভাগে, মেয়েদের বিভাগেও তাই; কিন্তু অনলাইনে এবার একটি বিভাগ ছয়জনের, সেখানে অনূর্ধ্ব-২০ বছরের দু’জন (ছেলে ও মেয়ে) এবং দু’জন মহিলা দাবাড়ুকে খেলানো বাধ্যতামূলক। সে হিসেবে বাংলাদেশের মাত্র দু’জন গ্র্যান্ডমাস্টার খেলার সুযোগ পাবেন।

২২ জুলাই শুরু হয়ে টুর্নামেন্ট শেষ হবে অবশ্য ৩০ আগস্ট। কয়েকটি ধাপে এগোবে টুর্নামেন্ট। বাংলাদেশের খেলা শুরু হতে পারে তৃতীয় ধাপ থেকে, আর যেটি শুরু হবে ৫-৯ আগস্ট।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫